আপডেট :

        আহত বিড়াল ফেলে দেওয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার

        সৎমায়ের হাতে ২০ বছর বন্দী যুবক!

        পিকো রিভেরায় টর্নেডোর আঘাত, ভেঙে পড়েছে গাছ ও বিদ্যুৎ লাইন

        টাকা পরিশোধ না করলে ন্যাটোর পাশে থাকব না বললেন ট্রাম্প

        এলডিসি থেকে উত্তরণ আগামী বছরই

        ‘লজ্জিত, ক্ষমার অযোগ্য আমরা’

        পরিচয় চুরি ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তি

        শক্তিশালী ঝড়ের আঘাতে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ে তুষারপাত, বৃহস্পতিবারের পূর্বাভাস

        কুয়েতে বন্দি ছয় মার্কিন নাগরিক মুক্ত, যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলেন

        আজ বিকেলে ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব

        দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ‘ব্লাড ওয়ার্ম মুন’ পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দেখার সেরা সময়

        প্রতারণার মাধ্যমে এফইএমএ’র ত্রাণ তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ

        ৭১ বছর বয়সী হাইকার সান গ্যাব্রিয়েল পাহাড়ে নিখোঁজ

        লোমা লিন্ডা হাসপাতালে 'সোয়াটিং কল' এ কর্তৃপক্ষের সায়

        ক্যালিফোর্নিয়ার সৈকতে সি লায়ন হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্তের সন্ধানে পুলিশ

        কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুক্রবার শপথ নিবেন কার্নি

        শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা

        আমি মনে করি, আমার জায়গায় আমি এক নম্বর: বাপ্পারাজ

        মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিশেষ সম্মান জানালো আইসিসি

        যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াও চাপে

অব্যবস্থাপনায় ‘সংকীর্ণ’ হচ্ছে জাফলং

অব্যবস্থাপনায় ‘সংকীর্ণ’ হচ্ছে জাফলং

অরণ্য বেষ্টিত উঁচু টিলা, ঝুলন্ত ডাউকি সেতু, পাহাড়ের সঙ্গে লেগে থাকা বিশাল পাথরখণ্ড আর পাথরের বিছানা দিয়ে গড়িয়ে যাওয়া পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জল। সবমিলিয়ে এক অদ্ভুত মায়াবী রূপ প্রকৃতি কন্যা সিলেটের জাফলং। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জাফলংও সাজে ভিন্ন ভিন্ন রূপে। সেই রূপের মুগ্ধতায় সারা বছরই পর্যটকদের কাছে টানে মায়াবতী জাফলং।

কিন্তু চরম অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, নিরাপত্তাহীনতা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে জাফলংয়ের আসল রূপ দেখতে পারছেন না পর্যটকরা। যত্রতত্র দোকানপাট নির্মাণ, মাত্রাতিরিক্ত কিটক্যাট চেয়ার এবং সারি সারি নৌকার ধকলে ‘সংকীর্ণ’ হয়ে গেছে জাফলং জিরো পয়েন্ট। অনেক সময় ঘিঞ্জি পরিবেশের কারণে পানিতে পা ফেলার সুযোগও পান না পর্যটকরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এমন অব্যবস্থাপনা দেখে হতাশ তারা।
জাফলংয়ের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে একটা নীতিমালা করা হচ্ছে। কয়েক দফা বন্যায় জমে থাকা পাথরের স্তূপ কীভাবে সরানো যায় বা বিকল্প করণীয় নিয়ে ‘স্টাডি’ করা হচ্ছে। শিগগির এর সুন্দর একটা সমাধান আসবে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দফা বন্যায় জাফলং জিরো পয়েন্টে পাথরের স্তূপ জমে আছে। যে কারণে পিয়াইন নদীর গতিপথও অনেকটা বদলে গেছে। চলতি মৌসুমে নদীর পানি কমে যাওয়ায় ভারতের সীমানার কাছাকাছি চলে গেছে পানির অংশ। ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধায় পানিতে নেমে খুব বেশি দূর যেতে পারেন না বাংলাদেশি পর্যটকরা। তার ওপর সারিসারি ইঞ্জিন ও বৈঠাচালিত নৌকা, ছাতা-চেয়ারের কারণে জাফলংয়ের মূল আকর্ষণ ক্যামেরাবন্দি করতে পারেন না পর্যটকরা। এমনকি টায়ারের কারণে পানিতে নেমে সাঁতার কাটতেও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় ভ্রমণপিপাসুদের।

জাফলং জিরো পয়েন্ট ঘাটে দুটি ইঞ্জিন ও দুটি বৈঠাচালিত নৌকা রাখার নির্দেশনা ছিল এবং বাকিগুলো দূরে রাখা হতো। দুজন ব্যক্তি টায়ার নিয়ে অবস্থান করারও নির্দেশনা ছিল। এছাড়া ১০-১২টি ছাতা ও চেয়ার রাখার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পরপরই বদলে গেছে জাফলং জিরো পয়েন্টের চিত্র।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জিরো পয়েন্টে একদম পানির স্তর ঘেঁষে অন্তত দুই শতাধিক ছাতা-চেয়ার বসানো হয়েছে। এছাড়া পানিতে শতাধিক ইঞ্জিন ও দুটি বৈঠাচালিত নৌকা বাধা। রয়েছে অসংখ্য টায়ার। এসব কারণে ঘিঞ্জি অবস্থা দেখা দিয়েছে জিরো পয়েন্টে। যে কারণে সংকীর্ণ হয়ে গেছে পর্যটকদের ঘোরার স্থান।

ঢাকা থেকে জাফলং ঘুরতে আসা কলেজছাত্র হাকিম উজ জামান বলেন, ‘মূল স্পটে পানি কম। বেশি দূর গেলে ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বাধা দেয়। বাংলাদেশ সীমান্তে যেটুকু জায়গা আছে সেখানে চেয়ার, নৌকা ও টায়ারের কারণে পা ফেলার সুযোগ মেলে না। জায়গা কম থাকায় অনেক গাদাগাদি করতে হয়। অনেকে গোসল করতেও পারেন না।’

রাজশাহী থেকে আসা পর্যটক বলেন, ‘জায়গাটা অনেক সুন্দর। কিন্তু সবকিছু রাখা হয়েছে খুব কম জায়গার মধ্যে। যে কারণে কিছুটা ঘিঞ্জি পরিবেশ হয়ে গেছে। চেয়ারগুলো আরেকটু দূরে বসালে এবং সংখ্যা কমালে ভালো হতো।’

জাফলং ট্যুরিস্ট গাইড ও নৌকাচালক সংঘের সভাপতি, ‘নৌকা চালকদের দুটি সংগঠন রয়েছে। দুটি সংগঠনের সব মিলিয়ে দুই শতাধিক নৌকা রয়েছে। এটা সত্য আগে ইঞ্জিনচালিত দুটি ও সাধারণ দুটি নৌকা রাখা হতো। এখন কিছুটা অব্যবস্থাপনার কারণে নৌকা বেশি রাখা হচ্ছে। অনেক সময় আমরা খেয়াল করতে পারি না।’

তিনি বলেন, ‘শুধু নৌকাই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে এমন নয়। আরও বেশ কিছু কারণেও পর্যটকদের সমস্যা হচ্ছে। ছাতা-টায়ার এগুলোও সমস্যা তৈরি করছে। কিন্তু আমরা চাই সুন্দর একটা পরিবেশ থাকুক, পর্যটকরা যাতে স্বস্তিতে ঘুরতে পারে।’

জাফলং পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হুসেইন মিয়া বলেন, ‘আগে চেয়ার কম ছিল। এখন কিছু চেয়ার বাড়ছে। তবে আমরাও চাই চেয়ারগুলো দূরে থাকুক। পর্যটকরা যেন খোলামেলা পরিবেশে ঘুরতে পারে। আমরা চেষ্টা করি সুন্দর রাখার। কিন্তু কিছু বিশৃঙ্খলা রয়েছে।’

বর্তমানে স্পটে দুই শতাধিক চেয়ার বসানো হয়েছে। এগুলোতে বসার জন্য নির্ধারিত কোনো ফি নেই। আলোচনা সাপেক্ষে পর্যটকদের কাছ থেকে ফি নেওয়া হয়।

ট্যুরিজম ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি মোহাম্মদ খতিবুর রহমান বলেন, জাফলংয়ে অনেক বেশি পর্যটক ঘুরতে যান। ধারণ ক্ষমতার বেশি মানুষ যাওয়ায় অনেকে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাঘুরি করতে পারেন না। এটা পর্যটন শিল্পের জন্য ভালো সংকেত নয়।

তিনি বলেন, একজন পর্যটক ঘুরতে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরলে তার প্রভাব পড়বে এই শিল্পের বিকাশে। এজন্য একটি নিয়ম-নীতিমালা দরকার। তাছাড়া পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পর্যটকদেরও একটা ধারণক্ষমতা থাকা দরকার। যাতে পরিবেশেরও ক্ষতি না হয় এবং পর্যটকরাও স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াতে পারেন। আইনে সব আছে। কিন্তু আমাদের প্রয়োগ কম। এজন্য সংশ্লিষ্টদের আরও মনোযোগী হতে হবে।

পর্যটন শিল্পের একজন গবেষক বলেন, জাফলংয়ে পাথর-বালুর স্তরে পিয়াইন নদীর বুক ভরাট হয়ে আছে। এটা নদীর জন্য ক্ষতিকর। আগে নদীকে বাঁচাতে হবে। তাছাড়া জাফলং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা। এই এলাকা ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য। পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্যকে চাপা দেওয়া যাবে না। জাফলং রক্ষায় একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চার দফা বন্যায় গত বছরের তুলনায় আরও বিপুল পরিমাণ পাথরের স্তূপ জমেছে। এতে স্পটটি উঁচু হয়ে যাওয়ায় জায়গাটা সংকীর্ণ হয়ে গেছে। সম্প্রতি বিভাগীয় কমিশনারসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন। জায়গাটা লেভেল করতে হলে প্রচুর পরিমাণে পূর্ত কাজ করতে হবে। সেই কাজ করতে হলে বড় একটি বাজেট প্রয়োজন। আবার এটা সীমান্তের শূন্য লাইনের পাশাপাশি। এখানে ভারী মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। আবার এটা ইসিএ অন্তর্ভুক্ত এলাকা। যে কারণে অনেকটা চ্যালেঞ্জিং কাজ এটা।’

তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের অনেক চাপ আছে। বসার জায়গা, ওয়াশরুম সবকিছু সংকীর্ণ হয়ে গেছে। আমরা কাজ করছি। স্পট থেকে নৌকা কমানোর বিষয়ে ব্যবসায়ীদের বলেছি। কিছু নৌকা কমানো হয়েছে। আরও কমানো দরকার। একইভাবে চেয়ারের বিষয়টিও আমাদের মাথায় রয়েছে।’

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘জাফলংয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে একটা নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। আমি দুবার পরিদর্শন করেছি। কিছু বিষয় আমার চোখেও পড়েছে। কীভাবে সমাধান করা যায় সে আলোকে কাজ চলছে।’

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত