কর্মস্থলে নাই অথচ হাজিরা খাতায় উপস্থিত
অফিস করেন না নিয়মিত। কিন্তু খাতা-কলমে তিনি নিয়মিত। কারণ হাজিরা খাতায় অগ্রিম স্বাক্ষর করে রাখেন তিনি। যদিও কখনো আসেন তাও আবার ক্লাস নেওয়ার জন্য নয়, হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে। এমন অভিযোগ উঠেছে সিলেট নগরীর উপশহর বি ব্লকস্থ সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রভাষক হাকিম মো: মুহিব বুল্যাহ’র বিরুদ্ধে। একই অভিযোগ আর.এম.ও মুহাম্মদ জহিরুল হকের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারি মাসের হাজির খাতার কপি দৈনিক জালালাবাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাসপাতালের ইউনানী মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক হাকিম মো: মুহিব বুল্যাহ মাসের বেশির ভাগই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। তবে হাজিরা খাতায় নিয়মিু স্বাক্ষর রয়েছে তার। সপ্তাহে এক-দুই দিন এসে পুরো সপ্তাহ উপস্থিতির অগ্রিম স্বাক্ষর করেন। এমনও দেখা গেছে একসাথে পুরো মাসের স্বাক্ষর দিতে। মাস শেষে ঠিকই তুলে নেন পুরো মাসের বেুন।
এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। একই অভিযোগ আর.এম.ও মুহাম্মদ জহিরুল হকের বিরুদ্ধে। তিনি অফিসে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। হাজিরা খাতায় অগ্রিম স্বাক্ষর দেওয়ার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় কলেজে গিয়ে ওই প্রভাষককে পাওয়া যায়নি। তার আসনটি খালি পড়ে আছে। হাজিরা খাতায় দেখা যায়, তিনি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উপস্থিতির স্বাক্ষর করে রেখেছেন। এ বিষয়ে সহকর্মী ও অফিস স্টাফদের নিকট জানতে চাইলে তারাও উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজ শাখার এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, মুহিব বুল্যাহ যোগদানের পর থেকে কোনো ধরনের ছুটি নেওয়া ছাড়াই প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকেন। সরকারি বেতন ভাতাসহ সকল সুবিধা ভোগ করলেও ক্লাস করান না তিনি। ইচ্ছেমতো এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান। এতে করে পাঠদান বাধাগ্রস্ত হয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মুঠোফোনে হাকিম মুহিব বুল্যাহ’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের কাজে তিনি ঢাকায় আছেন। ছুটি ছাড়াই কর্মস্থল ত্যাগ এবং হাজিরা খাতায় এক সাথে পুরো মাসের ও অগ্রিম উপস্থিতি স্বাক্ষর বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি প্রথমে এড়িয়ে গেলেও পরে বলেন, ভুলে হয়তো স্বাক্ষর করে ফেলছি। তবে একসাথে পুরো মাসের স্বাক্ষরের ব্যাপারটি অস্বীকার করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাকিম মো: মুহিব বুল্যাহ ২০১২ সালে ৮ জানুয়ারী সিলেট সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে কর্মস্থলে আসছেন না। তবে বেতন ভাতা উত্তোলনের জন্য মাসে কয়েকবার কর্মস্থলে এসে হাজিরা খাতায় বিগত দিনের অনুপস্থিত স্বাক্ষরগুলো করে আবার চলে যান। ডিউটি চলাকালীন নির্ধারিত সময়ে কেউ উপস্থিত না থাকলে তার হাজিরা খাতায় ওই দিনের উপস্থিতির জায়গায় অনুপস্থিত লেখার নিয়ম রয়েছে। তবে অনুপস্থিত না লিখে অজ্ঞাত কারণে হাজিরা খাতার স্বাক্ষরের ঘরটি খালি রেখে দেওয়া হয়। আবার কয়েক দিনের স্বাক্ষর আগেই করে অফিসে অনুপস্থিত থাকেন। এককথায় হাকিম মুহিব বুল্যাহ নিজের ইচ্ছামতো হাসপাতালে এসে আবার স্বাক্ষর করে চলে যান।
এ ব্যাপারে সিলেট সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ডা. আজিজুর রহমান রুমান দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, নিয়মিত কর্মস্থলে না এসে হাজিয়া খাতায় স্বাক্ষর দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাহলে অগ্রিম স্বাক্ষর কিভাবে দিবে। মুহিব বুল্যাহ বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন