আপডেট :

        অবৈধভাবে নিজ দেশে প্রবেশ, সাবেক প্রেসিডেন্টের কারাদণ্ড

        হামলায় ‘বৈষম্যবিরোধী’ ৩ ছাত্র আহত

        দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় খ্যাতি, যৌনতা, অর্থ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্য

        মালিবুতে ৩.৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত

        হঠাৎ ভিসা বাতিল: যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়লেন ভারতীয় শিক্ষার্থী

        সারা বিশ্ব থেকে জন্মদিনের কার্ড পেয়ে খুশি লং বিচের নাথান বোনস্টিল

        দেশে দেশে বৈচিত্র্যময় রোজা পালন

        ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মঙ্গলবার পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করবেন ট্রাম্প

        পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর বহরে হামলা-গোলাবর্ষণ

        ‘ইনশাল্লাহ আমরা উইন খরমু’- ভারত ম্যাচ নিয়ে হামজা

        শেখ মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল

        পুলিশের ১২৭ কর্মকর্তার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

        যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে টর্নেডোর হানায় অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু

        ‘এক্স-ওয়াইফ’ বলবেন না, : সায়রা বানু

        চলছে মৌসুমের প্রথম তাপপ্রবাহ

        ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশ

        আজ কাজে ফিরেছেন মেট্রোরেলের কর্মীরা

        ২ গোল খেয়েও ৪ গোল করে জিতল বার্সেলোনা

        ট্রাম্পের নির্দেশনায় ইয়েমেনে মুহুর্মুহু হামলা চলছে, নিহত ৫৩

        ভেনচুরা কাউন্টিতে গ্যাং-সম্পর্কিত হামলার ঘটনায় ৪ সন্দেহভাজন গ্রেফতার

দেশে দেশে বৈচিত্র্যময় রোজা পালন

দেশে দেশে বৈচিত্র্যময় রোজা পালন

রমজান মাসটি প্রতিটা ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। মূল ধর্মীয় আচার এক হলেও সাংস্কৃতিক ভিন্নতার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রমজান মাস পালনে বৈচিত্র্য দেখা যায়। পবিত্রতার এই মাসটিতে ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে চলার পাশাপাশি পালন করে থাকেন তাদের নিজ নিজ ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি।

সৌদি আরব:

সৌদি আরবে রমজানের সময় বিশেষ ধর্মীয় আবহ বিরাজ করে। এ সময় মসজিদে লাখো মুসল্লির ভিড় থাকে। তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাত আদায় করা হয়। ইফতারে সাধারণত খেজুর, জমজমের পানি, লাবান (দই জাতীয় পানীয়) ও বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার থাকে।

তুরস্ক:

সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে অনন্য তুর্কীরা জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে পবিত্র রমজানের মাসকে বরণ করে নেয়।

রমজানের সময় সেহরির আগে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে মানুষজনকে জাগিয়ে তোলা বাংলাদেশে বেশ পরিচিত। তবে তুরস্কে তুর্কিরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ‘দারুল’ নামের বড় আকারের ঢোল পিটিয়ে সেহরির সময় মানুষজনকে জাগিয়ে তোলে খাওয়ার জন্য। এর বিনিময়ে বকশিশ পায় তারা। তাছাড়া পবিত্র এই মাসে প্রতিদিন তিনবার (সেহরি খাওয়ার সময়, ইফতারের সময় ও সেহরির শেষ সময়) তোপধ্বনি দেয়া হয়। এ সময় মসজিদের মিনারগুলোতে জ্বালানো হয় 'কানদিল' নামের বাতি। আর মসজিদের মিনারে কানদিল বাতিগুলো জ্বলতে থাকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। এই একই চর্চা দেখা যায় আবার আলবেনিয়ার রোমা মুসলিমদের মধ্যে। তারা ভেড়া বা ছাগলের চামড়ায় আবৃত লোদ্রা নামের ঐতিহ্যবাহী ড্রামের সঙ্গে বিশেষ গীতিনাট্য দিয়ে রমজানে দিনের শুরু এবং শেষ করে। ইফতারের সময় আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী খাবার। এর মধ্যে রয়েছে ‘পিদে’ (এক ধরনের রুটি), ‘গোলাপজল’ ও ‘বাকলাভা’ (মিষ্টান্ন)।

মিশর:

রমজান মাসকে ঘিরে মিশরীয়দের রয়েছে জমকালো আয়োজন। এই মাসে তারা তাদের বাড়ি-ঘর, ভবন ও দোকানগুলোর প্রবেশের মুখে রঙিন ফানুস ঝুলিয়ে রাখা হয়। রমজান মাসে চারিদিকে ঝোলানো এই ফানুসগুলোর আলোকসজ্জায় পুরো মিশর আলোকিত হয়, উৎসবের আমেজ বিরাজ করে সারা দেশে। এছাড়াও সেহরির সময় সবাইকে জাগিয়ে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকেন একদল মানুষ যারা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে সবাইকে জাগিয়ে দেন সেহরি খাওয়ার জন্যে। এদেরকে মিশরে ডাকা হয় 'মেসেহারাতি'। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় ইফতার খাবারের মধ্যে রয়েছে ‘কুশারি’ (পাস্তা, চাল ও মসুর ডালের মিশ্রণ) এবং ‘ফাতা’ (মাংস, ভাত ও রুটি দিয়ে তৈরি খাবার)

আরব আমিরাত:

এক ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্য দিয়ে আরব আমিরাতে রমজানকে বরণ করে নেওয়া হয়। রমজানের আগমন উপলক্ষে আরব আমিরাতে ‘হক আল লায়লা’ নামে শিশুদের নিয়ে একটি বিশেষ আয়োজন করা হয় যেখানে রমজানের আগের মাস শাবানের ১৫ তারিখে শিশুরা উজ্জ্বল কাপড় পরে, ঝোলা কাধে দলবেঁধে প্রতিবেশীদের বাড়িতে যায়, কড়া নাড়ে আর সুর করে বলে, ‘তোমরা আমাদের দাও, আল্লাহ তোমাদের দেবেন, মক্কায় আল্লাহ তার ঘর পরিদর্শন করাবেন।’ সেখানে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন মিষ্টি, বাদাম ও অন্যান্য খাবার সংগ্রহ করে যা 'খারিতা' নামে পরিচিত।

দুবাই:

দুবাইয়ের মুসলিমরা ইফতারে 'হারিরা' নামক ভেড়ার মাংস ও মসুর ডাল দিয়ে বিশেষ ধরনের স্যুপ তৈরি করে। যেটি খাওয়া হয় রোজা ভাঙার পর।
এছাড়াও তাদের খাদ্য তালিকার মধ্যে রয়েছে ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি ‘ওউজি’, আছে মাছ দিয়ে তৈরি আইটেম কউশা মাহসি। খাওয়া শেষে মিষ্টান্ন হিসেবে চিজ দিয়ে তৈরি পেস্ট্রি খাওয়া হয় যার নাম ‘কুনাফেহ’। তবে ইফতারের ক্ষেত্রে খেজুর ও দুধ এই দুটি আইটেম দুবাইয়ের রোজাদারদের পাতে থাকবেই থাকবে।


মরক্কো:

মরক্কোতে রমজানকে বরণ করার প্রস্তুতি শুরু হয় প্রায় ২-৩ সপ্তাহ আগে থেকে। তুরস্কের মতো মরক্কোতেও ‘নাফর’ নামে একদল মানুষ সেহরিতে মানুষদের জাগিয়ে তোলার পবিত্র দায়িত্ব পালন করে। তবে এ ক্ষেত্রে তাদেরকে শহরের মানুষ কর্তৃক নির্বাচিত হতে হয় এবং রমজানের শেষে নাফরদের পুরস্কৃত করা হয় এই দায়িত্ব পালনের জন্য। মাথায় টুপি, পায়ে জুতা আর মরক্কোর ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হয়ে, সুরেলা গলায় প্রার্থনা সংগীত গেয়ে শহরের অলিগলিতে তারা হেঁটে মানুষদের জাগিয়ে তোলেন স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের পথে আরও একধাপ এগিয়ে থাকতে। মরক্কোয় ইফতারকে বলা হয় ‘এফতোর’। এ সময় তাদের রাস্তাগুলো পরিণত হয় বাংলাদেশের মতো খাবারের বাজারে। মরক্কোর ‘এফতোর’-এ থাকে নানান ঐতিহ্যবাহী খাবার। যেমন- রিজ্জা, ক্রাচেল, মিস্সামেন, হারিরা, ব্রিওয়াত, স্টিল্লা, হারশা, স্যাল্লো, রিজ্জা ইত্যাদি।

লেবানন:

লেবাননে ইফতারের সময় ঘোষণা করা হয় অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে। কামান চালিয়ে তীব্র আওয়াজের মাধ্যমে রোজাদারদের ইফতারের সময় জানিয়ে দেওয়া হয়। এই রীতির জন্ম প্রাচীন মিশরে এবং ইসলামিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে এই রীতি প্রচলিত ছিল এবং বিভিন্ন দেশে এখনো এই রীতি চলমান।

যদিও প্রতিটি দেশে রমজান পালনের ধরণ আলাদা, তবু ইসলামের মূল শিক্ষাগুলো একই থাকে—সংযম, ইবাদত, এবং মানবিকতা। বৈচিত্র্যের মধ্যেও রমজানের ঐক্য বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এক অভিন্ন বন্ধনে পরিণত হয়।

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত