লস এঞ্জেলেস কাউন্টির বাসিন্দাদের জন্য কর ফাইলিংয়ের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় আইসিই’র অভিযান চলমান, প্রতিবাদ অব্যাহত
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের দুই সপ্তাহ পার হতে না হতেই যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বেড়েছে অবৈধ অভিবাসন দমন অভিযান। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়াসহ বিভিন্ন শহরে অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা ব্যাপকভাবে অভিযান পরিচালনা করছে।
ট্রাম্প সোমবার পুনরায় দায়িত্ব নেওয়ার পরই আইস কর্মকর্তারা লস এঞ্জেলেস, শিকাগো এবং আটলান্টার মতো বড় বড় স্যাংচুয়ারি শহরগুলোতে অভিযান শুরু করে। এছাড়া আইসিই কর্মকর্তাদের স্কুল, চার্চ এবং হাসপাতালের মতো ‘সংবেদনশীল স্থানগুলোতে’ অভিযান চালাতে বাধা দেওয়ার আইনই প্রত্যাহার করেন ট্রাম্প।
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অব্যাহত
এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। লস এঞ্জেলেসের ডাউনটাউন, রিভারসাইড, সান্তা আনা, সান দিয়েগোসহ বিভিন্ন শহরে অভিবাসীদের নিরাপত্তার দাবিতে লোকজন সমবেত হয়েছে।
ডাউনটাউন লস এঞ্জেলেসে টানা চারদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে, যেখানে বিক্ষোভকারীরা ব্যস্ত ফ্রিওয়ে ও প্রধান প্রধান সড়ক অবরোধ করেছে। এছাড়াও, শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার ক্লাস বর্জন করে অভিবাসী অধিকারের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে।
আইসিই’র সাম্প্রতিক অভিযান ও গ্রেপ্তার
লস এঞ্জেলেস কাউন্টি: মঙ্গলবার আইসিই’র এনফোর্সমেন্ট অ্যান্ড রিমুভাল অপারেশন্স (ইআরও) লস এঞ্জেলেস বিভাগ জানায় যে তারা ৪৭ বছর বয়সী এক অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি এর আগে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
সোমবার কর্মকর্তারা ‘ভেনেজুয়েলান ট্রেন ডি আরাগুয়া’ নামে পরিচিত একটি গ্যাংয়ের এক সদস্যকে আটক করেন। তিনি বর্তমানে ‘নির্বাসনের অপেক্ষায়’ আছেন।
সেই একই দিনে, ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিইএ) একজন তাইওয়ানিজ নাগরিককে গ্রেপ্তার করে, যাকে তাইওয়ান ন্যাশনাল পুলিশ "শিশু নিপীড়ক" এবং "মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে দুইজনকে হত্যার" অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
লাস ভেগাস/রেনো: এই সপ্তাহের শুরুতে, আইস এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে যাকে আগেও তিনবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তিনি গুরুতর অপরাধ, মারধর এবং পারিবারিক সহিংসতার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তিনি মেক্সিকোতে ফেরত পাঠানোর অপেক্ষায় আছেন।
এছাড়াও, রেনোতে ডিইএ একজন সুরেনো গ্যাং সদস্যকে আটক করে, যার বিরুদ্ধে একাধিকবার মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তাকেও মেক্সিকোতে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি
২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাপকভাবে অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বড় শহরগুলোতে আইসের অভিযান বাড়ানো হয়েছে। তার নির্বাচনী প্রচারণায় অভিবাসন একটি প্রধান ইস্যু ছিল, যেখানে তিনি অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপকহারে বিতাড়নের ঘোষণা দেন, বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তিনি এই লক্ষ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথাও বলেছেন।
গত মাসে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসনকে ‘আমাদের দেশের ওপর আক্রমণ’ বলে আখ্যায়িত করেন এবং জানান যে, ব্যয় যাই হোক না কেন, তিনি তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন।
‘এটি ব্যয়ের প্রশ্ন নয়’ ট্রাম্প বলেন। ‘যখন কেউ হত্যা করেছে, মাদক ব্যবসায়ীরা পুরো দেশ ধ্বংস করেছে, তখন তারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যাবে। এখানে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এর জন্য কোনো মূল্য গণনা করা হবে না’।
তিনি আরও দাবি করেন যে, ভোটাররা - এমনকি লাতিনো জনগণও - তার কঠোর অভিবাসন নীতিকে সমর্থন করে।
‘তারা সীমান্ত চায়’ তিনি বলেন। ‘তারা চায় মানুষ আসুক, কিন্তু সেই মানুষদের দেশপ্রেম থাকতে হবে এবং অবশ্যই আইন মেনে আসতে হবে’।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির পরেও তার প্রথম মেয়াদে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ের চেয়ে কম সংখ্যক অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সময় ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের যেকোনো বছরের তুলনায় বেশি সংখ্যক অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন