আপডেট :

        গাজীপুরে বেক্সিমকোর কারখানা বন্ধ ঘোষণা

        নির্বাচনের ছাড়া এই মুহূর্তে বিএনপির কোনো রাজনীতি নেই

        হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় আজ

        আসছে নতুন দল: উপদেষ্টা নাহিদ

        ঢাকায় এসে নিখোঁজ হওয়া সুবাকে দেখা গেল ক্যামেরায়

        ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ

        ইমিগ্রেন্ট ছাড়া একদিন: লস এঞ্জেলেসের প্রতিবাদ রাতেও অব্যাহত

        ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ

        মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে শুল্ক আরোপ স্থগিত, চীনের সঙ্গেও আলোচনা হবে

        যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে পাল্টা শুল্ক চীনের

        নিউইয়র্কে বাড়ির সামনে বাংলাদেশিকে গুলি

        হাসিনা-রেহানাদের ৪ বাগানবাড়ি, আছে ডুপ্লেক্স ভবনও

        বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তার লকার ফ্রিজ করার নির্দেশ

        এবার ইউরোপে শুল্ক আরোপের হুমকি

        মৌলভীবাজারে যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন আটক

        দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় আঘাত হানবে দুইটি ঝড়

        লস এঞ্জেলেসে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ, ১০১ ফ্রিওয়েতে তীব্র যানজট

        প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে গ্র্যামিতে কান্ট্রি অ্যালবামের পুরস্কার

        অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণ

        এলিমিনিটরে লড়াইয়ের আগে দলের শক্তিও বাড়ায় রংপুর

বাংলাদেশের জাতিয় বাজেট ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী

বাংলাদেশের জাতিয় বাজেট ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী

'অশোধনীয় আশাবাদী' বাজেট, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ

নিজের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নের দিগন্তও প্রসারিত করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চার অর্থবছর ধরে ৭ শতাংশ, কখনো কখনো তারও বেশি মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তা অর্জন করতে না পারলেও হাল ছাড়েননি তিনি। এবার তাঁর পণ- ৬ শতাংশের বৃত্ত ভেঙে জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধির সোপানে আরোহণ। তবে বরাবরের মতো এবারও তিনি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন; বলেছেন, বৃত্ত ভাঙার স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। দূর আকাশে কালো মেঘও দেখছেন তিনি। তা হলো ইউরোপে ধীরগতির প্রবৃদ্ধি। দেশে-বিদেশে সব লক্ষণ অনুকূলে থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে কেবল মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া নয়, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে শামিল হওয়াও সম্ভব বলে তাঁর বিশ্বাস।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য উপস্থাপিত দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার বাজেটকে তিনি নিজেই 'অশোধনীয় আশাবাদী' (Incorrigible Optimistic) বাজেট আখ্যা দিয়েছেন।
চলতি অর্থবছরের বাজেটেও ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা ছিল। কিন্তু ধরা দিয়েছে মাত্র ৬.৫১ শতাংশ। এভাবে গত পাঁচ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.২ শতাংশ হারে। ৬ শতাংশের এই পাথুরে বৃত্ত ভেঙে আগামী অর্থবছরে ৭ শতাংশ অর্জনের স্বপ্নকে বাস্তবে তালুবন্দি করতে চান ৮৩ বছর বয়সী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর ২০২১ সাল থেকে তিন বছরের পথ এগিয়ে এসে ২০১৮ সালের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশ গড়তে চান বাংলাদেশকে।
এই আশাবাদ পূরণ করতে অর্থমন্ত্রী চোখ রেখেছেন ইউরোপের ধনী ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা থেকে বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁয়ের আমজনতার ওপর। সরকারের উপযুক্ত অর্থনৈতিক নীতি-কৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার মতোই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে আমজনতার আগ্রহ, উৎসাহ ও কর্মোদ্যম আর হাত গুটিয়ে বসে থাকা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের পথে থাকা কণ্টকগুলো সরিয়ে দেওয়া। মনেপ্রাণে চেয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে থাকা 'নির্বোধ দেশশত্রুতার' বদলে শুভবুদ্ধির উন্মেষ। তবে সমৃদ্ধ দেশের কাতারে শামিল হওয়ার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আমজনতাকে শর্তমুক্তভাবে আশ্বস্ত করতে পারেননি। অর্থনীতির চেয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই এ ক্ষেত্রে অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে সামনে চলে এসেছে। তাঁর ভাষায়, 'আমরাও জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই, সবার সহযোগিতা পেলে বিশেষ করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে এ মেয়াদেও আমরা অনেক দূর এগোতে পারব।' তাঁর আশাবাদ পূরণের পথে সহায়ক শক্তি হয়ে সামনে এসেছে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতন, কৃষক ও শ্রমিকদের নিরন্তর পরিশ্রম ও উৎপাদন। তবে 'কালো মেঘ' রূপে এখনো চোখ রাঙাচ্ছে ইউরোপের অস্থিরতা, ইউরোপের দেশগুলোর মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া। কারণ বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ অন্য সব রপ্তানি পণ্যের বড় ক্রেতার হাতে পয়সা না থাকলে তা ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সরকারের ব্যয় মেটানোর পর সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় সেবা সরবরাহের জন্য যে আরো অর্থের দরকার ছিল, তা স্পষ্ট করে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রায় ১৬ কোটি মানুষের দেশে লাখ তিনেক কোটি টাকার বাজেট মোটেই পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা জোগাড় করতেও অর্থমন্ত্রীকে অনেক বেশি উচ্চাভিলাষী হতে হয়েছে, যা অতীত অর্জনের রেকর্ডগুলো থেকেও অনেক দূরের পথ। স্থবির বিনিয়োগের অর্থনীতি থেকে এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে দেওয়ার এক কঠিন লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর), যাকে অর্থমন্ত্রী নিজেও শুধু উচ্চাভিলাষী বলেই থামতে পারছেন না। তাঁর ভাষায়, 'এবারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আরো উচ্চাভিলাষী। বর্তমান বছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এই আদায়ের হার হবে ৩০ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি, সত্যিই উচ্চাভিলাষী।' পরক্ষণেই একটু ঢেঁকুর তুলে বুকে সাহস সঞ্চয় করে অর্থমন্ত্রী এই উচ্চালিভাষী লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে বলেছেন, 'রাজস্ব আদায়ের এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক থাকলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। উচ্চাভিলাষী এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ভরসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আয়কর বিভাগ এবার ৮৫টি উপজেলায় করদাতাদের খুঁজে বের করতে পারবে। একই সঙ্গে তিনি বৈদেশিক সহায়তা ব্যবহারের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপর নির্ভরতা কমানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
ইউরোপ-আমেরিকায় যা-ই ঘটুক আর না ঘটুক, ব্যক্তি খাতকে জমানো টাকা-পয়সা নিয়ে বিনিয়োগের মাঠে টেনে আনতে পারলে উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পাথুরে বৃত্ত যে ঠুনকো হয়ে যাবে, তা বুঝতে মোটেই বাকি নেই দেশ-বিদেশে দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা করা আবুল মাল আবদুল মুহিতের। তাই সংসদে দাঁড়িয়ে তাঁর ১২৮ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতা পড়তে যতটা গলদঘর্ম হয়েছেন, তার চেয়েও বেশি ছটফট করেছেন বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে আনতে। না হলে ৬ শতাংশের পুরনো বৃত্তেই যে ঘুরপাক খাবে দেশের মানুষের ভাগ্য, তা স্পষ্ট দেখতে পেয়েছেন তিনি। এ জন্যই বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ নিয়ে তাঁর চিন্তার শেষ নেই। তাই বাজেট বক্তৃতায় বারবার ঘুরেফিরে এসেছে বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে টানার কথা। তাই অর্থায়নের টানাটানির মধ্যেও অর্থমন্ত্রী দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই কমিয়েছেন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কর হার।
এ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, 'অনুকূল সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বর্ধিত বেসরকারি বিনিয়োগ সত্ত্বেও মূলত বেসরকারি বিনিয়োগের ধীরগতি উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে বাধা হিসেবে কাজ করছে। এ বাধা দূর করতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগ অবকাঠামো, বন্দর উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের কাজ সচল রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে থাকা বাধাগুলো দূর করে বিনিয়োগ বাড়ানো ও বিনিয়োগের উৎকর্ষ বাড়ানোর মতো প্রবৃদ্ধি সঞ্চারী উপাদান মেশানোর ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন। গত ১০ বছরে সরকারের বিনিয়োগ বাড়লেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটেনি। এই সময়ে সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু এই ১০ বছরে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২১ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশের বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এই বাস্তবতায় সরকারের লক্ষ্য হলো ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের স্থবিরতা দূর করে মধ্য মেয়াদে ২০১৮ সালের মধ্যে তা জিডিপির ২৪ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। আর ওই সময়ের মধ্যে সরকারের বিনিয়োগ বেড়ে হবে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। সরকারের বিনিয়োগ হবে মূলত বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন, যোগাযোগ, বন্দর উন্নয়ন খাতে, যা বেসরকারি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করবে। নতুন শিল্প-কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ প্রাপ্তিতে বিলম্ব, বিনিয়োগ প্রক্রিয়াকরণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ঋণের উচ্চ সুদ হার ও নিষ্কণ্টক জমির অভাব দূর করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে একীভূত করে বিনিয়োগকারীদের জন্য 'ওয়ান স্টপ' সেবা দেওয়া হবে। ভূমি ব্যবস্থাপনা, রেকর্ড ও রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি আধুনিকায়নের কার্যক্রম দ্রুততর করা হবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা আছে। কর অবকাশ দেওয়া হবে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, টায়ার উৎপাদকসহ কয়েকটি শিল্প খাতে।
বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি আরো নানা উপায়ে রাজস্ব আয় বাড়ানোর উপায় বের করেছেন অর্থমন্ত্রী। ১ জুলাই থেকে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করার পুনঃঅঙ্গীকার করেছেন তিনি। সঙ্গে সরকারি চাকরিজীবীদের মূল বেতনের পাশাপাশি সব ধরনের ভাতাও দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো করের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন। এই প্রথম বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের করের আওতায় আনা হচ্ছে। আর যেসব বিদেশি অবৈধভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত থাকবে, ওই প্রতিষ্ঠানকে তাঁর দেওয়া আয়করের ৫০ শতাংশ বা পাঁচ লাখ (যেটা বেশি হয়) অতিরিক্ত কর হিসেবে আরোপ করা হবে। স্থানীয় সরকারের রাজস্ব আয় ভাগাভাগি করে নেওয়ার একটি কৌশলপত্র প্রণয়নের কথাও বলেছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।
১৬ কোটি মানুষের চাহিদা মেটানোর মতো পর্যাপ্ত অঙ্কের বাজেট নিয়ে না আসতে পারলেও আশার বাণী শুনিয়ে বাজেট বক্তৃতা শেষ করেছেন অর্থমন্ত্রী। 'আমার বিশ্বাস (সরকারের) চলতি মেয়াদ শেষেই বাংলাদেশের কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের ব্যাপক হারে প্রসার ঘটবে, যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলো যানজটমুক্ত হবে, কোটি কোটি তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হবে এবং তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে। আমরা জানি যে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ছাড়া কোথাও কর্মচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় না। তাই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো আমাদের লক্ষ্য। শিক্ষায় দক্ষতা ও স্বাস্থ্যসেবা সবাইকে পৌঁছে না দিলে জাতি এগোতে পারে না। সুতরাং এ ক্ষেত্রেও আমাদের অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করতে হবে। দারিদ্র্য উচ্ছেদ ছাড়া মানুষের বিকাশ হয় না; এবং একই সঙ্গে বঞ্চিত এবং দুর্দশাগ্রস্ত জনগণকে সামাজিক সুরক্ষা না দিলে সর্বজনীন উন্নয়ন সম্ভব হয় না। তাই এদিকেও আমাদের এগোতে হবে। ২০২১-এ আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উদ্যাপনের প্রাক্কালে এসব অর্জন হবে অপার আনন্দ ও গর্বের বিষয়'- বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এক নজরে বাজেট : নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ২,৯৫,১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২,০৮,৪৪৩ কোটি টাকা। এই রাজস্ব আয়ের মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ১,৮৬,৩৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া এনবিআরবহির্ভূত কর ব্যবস্থা থেকে ৫,৮৭৪ কোটি এবং কর বাদে রাজস্ব আয় ২৬,১৯৯ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক অনুদান আশা করা হয়েছে ৫,৮০০ কোটি টাকা। ফলে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০,৮৫৭ কোটি টাকা। এই ঘাটতি জিডিপির ৪.৭ শতাংশ। তবে বৈদেশিক অনুদান পাওয়া না গেলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৬,৬৫৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। ঘাটতি অর্থায়ন মেটাতে দেশের বিভিন্ন উৎস থেকে ৫৬,৫২৩ কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ৩৮,৫২৩ কোটি, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫,০০০ কোটি এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৩,০০০ কোটি টাকা নেওয়া হবে। আর বিদেশি উৎস থেকে ৩২,২৩৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় করা হবে ৭,৯০৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৪,৩৩৪ কোটি টাকা।
২,৯৫,১০০ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে উন্নয়ন কাজে ব্যয় হবে ১,০২,৫৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৯৭,০০০ কোটি টাকা এবং এডিপিবহির্ভূত খাতে বাকি অর্থ ব্যয় হবে। আর অনুন্নয়ন কাজে ব্যয় হবে ১,৮৪,৫৫৯ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দের তালিকায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ খাত ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
৮৩-তেও নবীন অর্থমন্ত্রী : এর আগে গতকাল বিকেলে সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন। তার আগে সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বিশেষ সভায় বাজেট অনুমোদন দেন মন্ত্রীরা। সংসদ সদস্যদের আলোচনা ও সর্বস্তরের মানুষের মতামত পর্যালোচনা শেষে ৩০ জুন বাজেট পাস করে ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
'সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথ রচনা' শিরোনামে ১২৮ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতার একাংশ কখনো দাঁড়িয়ে আবার কখনো বসে পড়ে শোনান অর্থমন্ত্রী। বক্তৃতার বাকি অংশ পঠিত বলে গণ্য করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ৮৩ বছরের অর্থমন্ত্রীকে দীর্ঘসময় বাজেট বক্তৃতাকালেও উৎফুল্ল ও হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেছে; কখনো কখনো হাস্যরসের মাধ্যমে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন। সংসদ সদস্যরাও বারবার টেবিল চাপড়ে তাঁকে উৎসাহ দেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেল সাড়ে ৩টায় অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। বাজেট উত্থাপন শেষে অর্থ বিল-২০১৫ সংসদে উত্থাপন করা হয়।
নির্ধারিত সময়ের আগেই সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কালো ব্রিফকেস নিয়ে সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন অর্থমন্ত্রী। একই সময় অধিবেশন কক্ষে আসেন স্পিকার। অধিবেশনের শুরুতে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্পিকার বলেন, আপনি বাজেট উত্থাপনের অনুমতি চাইতে পারেন। পরে অর্থমন্ত্রী অনুমতি প্রার্থনা করেন। পরে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন অর্থমন্ত্রী।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত