লস এঞ্জেলেসে ট্রান্সজেন্ডার নারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় LAPD-এর বিরুদ্ধে পরিবারের মামলা
নজিরবিহীন সঙ্কটে মধ্যপ্রাচ্য
কাতারের সঙ্গে উপসাগরীয় ছয়টি রাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে নজিরবিহীন সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে সোমবার কাতারের সঙ্গে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, বাহরাইন, লিবিয়া ও ইয়েমেন সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয়।
সৌদি আরব, আরব আমিরাত ইতোমধ্যে কাতারের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। দেশটির সঙ্গে স্থল ও আকাশ পথসহ সব ধরনের যোগাযোগ স্থগিত করেছে।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের এ টানাপড়েনের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দুষছে সৌদি আরবের চির-প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক রিয়াদ সফরের সময়েই মধ্যপ্রাচ্যে সঙ্কট তৈরির এ ঘটনার পরিকল্পনা সাজানো হয় বলে অভিযোগ করেছে তেহরান।
ট্রাম্পের সাম্প্রতিক রিয়াদ সফরের বরাত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে দেয়া এক টুইটে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হামিদ আবু তালেবি বলেছেন, ‘তরবারি নৃত্যের প্রাথমিক ফল হিসেবে এসব ঘটছে।’
মিশরসহ উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো ইতোমধ্যে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থনের অভিযোগ এনেছে কাতারের বিরুদ্ধে। বিপজ্জনক রাজনৈতিক শত্রু মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন করে মধ্যপ্রাচ্যে কাতারের অস্থিতিশীলতা তৈরির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
আরব বিশ্বের চার শক্তিশালী রাষ্ট্রের ওই পদক্ষেপে পরে যোগ দিয়েছে ইয়েমেন ও লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলভিত্তিক দেশটির সরকার। এর ফলে আরব দেশগুলোর মধ্যে নাটকীয় ফাঁটল তৈরি হয়েছে। সম্পর্ক ছিন্নকারী অধিকাংশ রাষ্ট্রই বিশ্বের বিশ্বের তেল রফতানীকারক শীর্ষ সংগঠন ওপেকের সদস্য।
কাতারের সঙ্গে পরিবহন সম্পর্ক বন্ধের ঘোষণাসহ আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্তত তিন দেশ কাতারের পর্যটক ও বাসিন্দাদেরকে দেশ ত্যাগে দুই সপ্তাহের সময় বেঁধে দিয়েছে। ইয়েমেনে সৌদি-নেতৃত্বাধীন জোটের লড়াই থেকে এর আগেই কাতারকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
তেল জায়ান্ট সৌদি আরব অভিযোগ করে বলছে, আঞ্চলিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে কাতার। এই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটিকে সৌদির আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সমর্থন ও তাদের মতাদর্শ প্রচারে কাতারের সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে রিয়াদের।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা এসপিএ বলছে, এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরির লক্ষ্যে মুসলিম ব্রাদারহুডসহ জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল-কায়েদা ও বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে সমর্থন করছে কাতার। এছাড়া তাদের গণমাধ্যমে এই গোষ্ঠীগুলোর বার্তা ও পরিকল্পনা ধারাবাহিকভাবে প্রচার করছে।
তবে কাতার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, কাতারকে দুর্বল করতেই সাজানো পরিকল্পনার মুখোমুখি হয়েছে তারা। একই সঙ্গে অন্য দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে নাক গলানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে দেশটি।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে উত্তেজনা ছড়ানোর এই প্রচার চালানো হচ্ছে। যা মিথ্যার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।
এদিকে, কাতারের কূটনৈতিক সংকটে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশগুলোকে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। সোমবার অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রেক্স টিলারসন বলেন, আমরা অবশ্যই সবগুলো পক্ষকে আলোচনায় বসে বিরোধ মীমাংসা করতে উৎসাহিত করব। যদি আমাদের কোনো সহযোগিতা লাগে তা করব। তবে আমরা মনে করি উপসাগরীয় দেশগুলোর ঐক্য বজায় রাখা উচিত।
কাতারের কূটনৈতিক সংকট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক লড়াইয়ের অগ্রগতিতে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, যেসব দেশগুলোর কথা বলা হচ্ছে সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করছে এবং আইএসের বিরুদ্ধে লড়ছে। সর্বশেষ রিয়াদ সম্মেলনেও সবাই লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/আই/এলআরটি
শেয়ার করুন