লস এঞ্জেলেসে ট্রান্সজেন্ডার নারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় LAPD-এর বিরুদ্ধে পরিবারের মামলা
২ লাখ ভোট বেশি পেয়েও হারলেন হিলারি
বিশ্বের বৃহৎ পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় রীতিমতো অবাক করেছে গোটা বিশ্বকে। নির্বাচনের আগের দিনও জনপ্রিয়তার মানদণ্ডে এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি ও পরারাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। কিন্তু বুধবার (৯ নভেম্বর) প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। হিলারি হেরে গেছেন, অপ্রত্যাশিত জয় পেয়েছেন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। কীভাবে এটা সম্ভব হলো, রাতারাতি কি জনপ্রিয়তা হারালেন হিলারি, কোন জাদুর ছোঁয়ায় সব হিসাব পাল্টে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প-দিনভর এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেরিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মী ও বিশ্লেষকরা। একেকজন একেকভাবে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাঁড় করাতে চেয়েছেন। তবে প্রকৃত উত্তর পাওয়া গেল বুধবার রাতে। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়ার বলি হয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। নির্বাচনে তিনি ট্রাম্পের চেয়ে পপুলার ভোট (ভোটরদের প্রদানকৃত ভোট) বেশিই পেয়েছেন, কিন্তু ইলেক্টোরাল ভোটের বদৌলতে কম ভোট পেয়েও জিতে গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টার পর থেকে। সারাদিনই একের পর এক রাজ্যে থেকে ফল প্রকাশিত হয়েছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নাগাদ যে ফল প্রকাশিত হয় তাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় সুনিশ্চিত হয় যায়, স্পষ্ট হয়ে যায় হিলারি ক্লিনটনের পরাজয়। কারণ, পপুলার ভোটের সংখ্যা যাই হোক না কেন, ইলেক্টোরাল ভোটে ২৭০-এর বেড়া ডিঙিয়ে ফেলেছেন ট্রাম্প। হিলারি যেখানে ২১৮টি ভোট পেয়েছেন, সেখানে ট্রাম্প পেয়েছেন ২৮৯টি ভোট। আর পপুলার ভোটকে গৌণ করে এই ইলেক্টোরাল ভোটই মূলত ঠিক করে দেয় কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস ও অন্যান্য মার্কিন এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোর দেওয়া তথ্যানুসারে, হিলারি মোট পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৪ লাখ ৬০ হাজার ৩৬ ভোট। মোট ভোটের অনুপাতে যা ৪৭.৭ শতাংশ। অন্যদিকে, বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ কোটি ৯২ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৫ ভোট। মোটের ভোটের অনুপাতে ৪৭.৫ শতাংশ। অর্থ্যাৎ পপুলার ভোটে ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি ১ লাখ ৯০ হাজার ৬৩১ ভোট বেশি পেয়েছেন। শতকরা হিসাবে তিনি ট্রাম্পের চেয়ে দশমিক ২ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছেন। প্রেসিডেন্সিয়াল শাসনব্যবস্থার দেশগুলোতে ভোটারদের সরাসরি ভোটেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সেই হিসেবে হিলারি ও ট্রাম্পের ভোটযুদ্ধ ওই দেশগুলোতে হলে নিশ্চিতভাবেই বিজয়ী হিসাবে হিলারি নাম ঘোষিত হতো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ভোটারদের সরাসরি ভোটে নয়, ইলেক্টোরাল কলেজের প্রাপ্ত ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়। তাই পপুলার ভোট বেশি পেলেওইলেক্টোরাল ভোটে পিছিয়ে পড়ায় হিলারিকে মেনে নিতে হয়েছে পরাজয়, জয় পেয়েছেন ট্রাম্প, সঙ্গে আরো একবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইলেক্টোরাল ভোট’ পদ্ধতি। সেখানকার বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ব্যক্তি এই পদ্ধতির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, করেছে সমালোচনা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ।
যেন ২০০০ সালের নির্বাচনের প্রতিচ্ছবি
হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নির্বাচনী লড়াইয়ে যা ঘটেছে তা যেন ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলকেই মনে করিয়ে দেয়। ওই বছর প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ডেমোক্রেট প্রার্থী আল গোর। ভোটারদের সরাসরি ভোটে (পপুলার ভোটে) বুশের চেয়ে ৫ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন আল গোর। এরপরও ইলেক্টোরাল ভোট বেশি পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন জর্জ ডব্লিউ বুশই।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন ঘটনা আরও তিনবার ঘটেছে।
১৮২৪ সালে ভোটারদের সরাসরি ভোট বেশি পেয়েও ইলেক্টোরাল ভোটের কারণে জন কুইন্সি অ্যাডামসের কাছে হেরে গিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন।
১৮৭৬ সালে একই কারণে রাদারফোর্ড বি হেয়সের কাছে হেরেছিলেন স্যামুয়েল টিলডেন।
১৮৮৮ সালে বেঞ্জামিন হ্যারিসনের কাছে হেরে গিয়েছিলেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পদ্ধতি তথা ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট নিয়ে অসন্তোষ, সমালোচনা ও বিতর্ক বহু যুগের। এমনকি স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্পই ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর ইলেক্টোরাল কলেজকে ‘গণতন্ত্রের জন্য দুর্যোগ’ অভিহিত করে টুইট করেছিলেন!
ইলেক্টোরাল কলেজ, মার্কিনিদের মনোভাব এবং বিতর্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির ভোট দুই শতক ধরে বিদ্যমান। নিয়ামানুয়ায়ী, নির্বাচনী দিনে দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় ভোটরার ভোট প্রদান করেন। সেদিন তারা পছন্দের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর নামে ভোট প্রদান করলেও মূলত তারা ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের নির্বাচিত করেন। ব্যালেট পেপারে এই সদস্যদের নাম থাকতেও পারে, আবার নাও পারে। এরা মনোনীত একজন প্রার্থীকে সমর্থনের অঙ্গীকার করেন। ইলেক্টোরাল কলেজের ৫৩৮ সদস্য রয়েছে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে কোন রাজ্য থেকে কতজন সদস্য হবেন তা নির্ধারিত হয়। নিয়মানুযায়ী, একজন প্রার্থী কোনো রাজ্যে বেশি ভোট পেলে তিনি ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেক্টোরাল ভোটই পেয়ে যান। ফলে পুরো দেশে মিলিতভাবে একজন প্রার্থী বেশি ভোট পেলেও অঙ্গরাজ্যের ভিত্তিতে তিনি যদি ইলেক্টোরাল ভোট কম পান তাহলে নির্বাচনে তাকে পরাজিত বলেই ধরে নেওয়া হবে।
এই পদ্ধতি দুই শতক ধরে বিদ্যমান থাকলেও এ নিয়ে বিভিন্ন সময় চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, এতে করে জনগণের সত্যিকারের মতামতের প্রকাশ ঘটে না বলে অভিযোগ সমালোচকদের। ১৯৬০ সালের শেষ দিকে ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছিল। কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ আর্কাইভ থেকে জানা যায়, ওই সময় এই আইন সংশোধন বা বাতিলের জোর চেষ্টাও করা হয়েছিল। তবে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে পাস হলেও সিনেট তা পাস করেনি।
এলএবাংলাটাইমস/আই/এলআরটি
শেয়ার করুন