ভিক্টরভিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু, সন্দেহভাজন এখনও অধরা
ক্রিমিয়া ইস্যুতে ইউক্রেনের অবস্থানের সমালোচনায় ট্রাম্প, চুক্তি অনিশ্চিত
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে শান্তি আলোচনায় বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগ এনেছেন। জেলেনস্কি সম্প্রতি বলেন, ইউক্রেন কখনও রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রিমিয়াকে স্বীকৃতি দেবে না।
ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেন, যুদ্ধ শেষ করার একটি চুক্তি "খুব কাছাকাছি" ছিল, তবে জেলেনস্কির এই অস্বীকৃতি যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করবে।
এর আগে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এক চুক্তির প্রস্তাব দেন, যাতে বর্তমান যুদ্ধের সীমান্তরেখা “যেখানে আছে সেখানেই” স্থির করে ফেলার ইঙ্গিত ছিল।
তবে ইউক্রেন শুরু থেকেই বলে আসছে, ২০১৪ সালে রাশিয়ার অবৈধভাবে দখল করা দক্ষিণের উপদ্বীপ ক্রিমিয়া তারা কোনোভাবেই ছাড় দেবে না।
ভ্যান্স বলেন, "চুক্তির মানে হবে ইউক্রেন এবং রাশিয়া—দুই পক্ষই কিছুটা ভূখণ্ড ত্যাগ করবে।"
তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসন চুক্তির প্রকৃত সীমারেখা প্রকাশ করেনি।
হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “আমি কোনো পক্ষ নিচ্ছি না। আমি শুধু চাই যুদ্ধ শেষ হোক। আমি চুক্তি চাই।”
ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া জেলেনস্কির জন্য শুধু রাজনৈতিকভাবে অসম্ভবই নয়, এটি যুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক আইনের নীতির বিরোধী—যেখানে জোর করে সীমান্ত পরিবর্তনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না।
জেলেনস্কি বলেন, “এ নিয়ে কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। এটি আমাদের সংবিধানের পরিপন্থী।”
এদিকে, ইউক্রেন জানিয়েছে, বুধবার রাতে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে।
রাজধানী কিয়েভে, মেয়র ভিটালি ক্লিচকো জানান, হামলায় দু’জন নিহত ও ৫৪ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশুরা ও একজন গর্ভবতী নারীও রয়েছেন। ড্রোনের ধ্বংসাবশেষে অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয় এবং একটি আবাসিক ভবনে ধসে পড়ায় অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েন।
খারকিভে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
পূর্ব ইউক্রেনের মারহানেটসে, একটি বাসে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ৯ জন নিহত ও অনেকে আহত হন।
ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে সম্পর্ক আগেও বেশ উত্তপ্ত ছিল। ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে তাঁদের এক বৈঠকে তুমুল বাদানুবাদ হয়।
বুধবার ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা সহজ মনে হলেও ইউক্রেনের সঙ্গে তা কঠিন হয়েছে। “আমি ভেবেছিলাম জেলেনস্কির সঙ্গে চুক্তি সহজ হবে। এখন পর্যন্ত কঠিনই মনে হচ্ছে।”
তিনি শনিবার পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার সময় জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।
নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি একদিনেই যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১০০ দিনের কাছাকাছি এসে এই প্রতিশ্রুতি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, “প্রেসিডেন্ট হতাশ। তাঁর ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে।”
ভ্যান্স হুঁশিয়ারি দেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া যদি সমঝোতায় না পৌঁছায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় মধ্যস্থতা করা থেকে সরে আসবে—যা গত সপ্তাহে ট্রাম্প ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও-র বক্তব্যের প্রতিধ্বনি।
এদিকে, লন্ডনে ইউকে, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্যে এক আলোচনার আয়োজন হলেও মার্কো রুবিও ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শেষ মুহূর্তে সেই বৈঠক থেকে সরে আসেন, যার ফলে বৈঠকের গুরুত্ব অনেকটাই কমে যায়।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা মস্কোর সঙ্গে আলোচনাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য উইটকফ এবার চতুর্থবারের মতো রাশিয়া যাচ্ছেন।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি সংসদে জানান, পুতিন ঘোষণা দিলেও ইস্টার উপলক্ষে কোনো প্রকৃত যুদ্ধবিরতি পালন করেননি। “তিনি যুদ্ধ থামানোর কথা বলছেন, অথচ বাস্তবে সময় ক্ষেপণ করছেন।”
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে এবং প্রায় ৭০ লাখ ইউক্রেনীয় বর্তমানে শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন।
এই সংঘাতের শুরু ২০১৪ সালে, যখন ইউক্রেনের প্রো-রাশিয়ান প্রেসিডেন্টকে অপসারণ করা হয় এবং এরপর রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয় ও পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দেয়।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন