মৌলভীবাজারের জুড়ীতে ভাতিজার দা য়ের আ ঘা তে চাচা গুরুতর আ হ ত
মুম্বাই হামলার আসামি তাহাওউর রানা আমেরিকা থেকে প্রত্যার্পণের পর ভারতে পৌঁছেছেন
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
২০০৮ সালের মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত পাকিস্তান-জন্ম নেওয়া ও মার্কিন নাগরিক তাহাওউর রানা বৃহস্পতিবার আমেরিকা থেকে প্রত্যার্পণের পর ভারতে এসে পৌঁছেছেন। ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) তাঁর প্রত্যার্পণ নিশ্চিত করেছে।
কানাডার নাগরিক রানা যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে বসবাস করতেন এবং সেখানে একটি ইমিগ্রেশন ও ট্রাভেল এজেন্সি চালাতেন। ২০১১ সালে এক মার্কিন আদালত তাঁকে সরাসরি মুম্বাই হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে মুক্তি দিলেও, পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়্যবাকে (LeT) সহযোগিতা করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে। এ ঘটনায় ২০১৩ সালে তাঁকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যগত কারণে ২০২০ সালে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হলেও, ভারতের প্রত্যার্পণ চাওয়ার পর ওই বছরেই আবারও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২৩ সালে এক মার্কিন আদালত তাঁর প্রত্যার্পণের অনুমতি দিলেও এটি কার্যকর হতে সময় লাগে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পর এই প্রত্যার্পণ অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে রানা তাঁর আপিল যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে হারান।
এই প্রত্যার্পণ ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত ভারত-যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় হয়েছে।
রানা পাকিস্তানে বড় হয়েছেন এবং সেখানকার সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে কাজ করতেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী, দুজনেই চিকিৎসক, ২০০১ সালে কানাডার নাগরিকত্ব লাভ করেন। এরপর তাঁরা শিকাগোতে চলে যান এবং সেখানে একাধিক ব্যবসা পরিচালনা করেন।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অভিযোগ, রানা তাঁর শৈশববন্ধু ডেভিড হেডলিকে সহায়তা করেছিলেন মুম্বাই হামলায়। হেডলি তাঁর প্রতিষ্ঠানের একটি অফিস ২০০৬ সালে মুম্বাইতে খুলেছিলেন, যা ব্যবহার করে হামলার জায়গাগুলো পরিদর্শন করেছিলেন। এছাড়াও হেডলি রানার কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব দেখিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্র অফিসে ঢুকে বিজ্ঞাপন নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে ভেতরের তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন।
হেডলি এই হামলার মূল গোয়েন্দা হিসেবে দোষ স্বীকার করেছেন এবং তিনি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ISI ও লস্কর-ই-তৈয়্যবার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন। যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
২০১১ সালে শিকাগোর একটি ফেডারেল আদালতে রানাকে LeT-কে সহায়তা এবং ডেনমার্কের একটি পত্রিকা অফিসে হামলার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে মুম্বাই হামলার মূল ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।
হেডলি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল কারাগারে ৩৫ বছরের সাজা ভোগ করছেন।
ভারতে রানা ও হেডলির বিরুদ্ধে অনুপস্থিতিতে মুম্বাইয়ের একটি আদালতে বিচার হয়েছিল। হেডলি পরবর্তীতে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হয়ে যান।
ভারতের এনআইএ রানার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে তার মধ্যে রয়েছে – অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ।
রানা যুক্তরাষ্ট্রে দাবি করেছিলেন, ভারতে তাঁকে একই অপরাধে বিচার করা হবে যার জন্য তিনি আগে খালাস পেয়েছেন। তবে আদালত জানায়, ভারতের অভিযোগগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মামলার চেয়ে আলাদা এবং তাই তাঁর প্রত্যার্পণ আইনসঙ্গত।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে বলেন, তাঁকে ভারতে পাঠানো হলে তাঁর ওপর নির্যাতনের আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে তিনি পাকিস্তানি মুসলিম হওয়ায়। এছাড়াও তাঁর শারীরিক অসুস্থতা ও ভারতের কারাগারে চিকিৎসার অবস্থা নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে আদালত তাঁর আপিল খারিজ করে।
মুম্বাই হামলা মামলার সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর উজ্জ্বল নিকম ANI-কে বলেন, “তাহাওউর রানার প্রত্যার্পণ পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততা প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন