আপডেট :

        ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকিতে কাঁপছে ভারত

        আধ্যাত্মিক নেতা আগা খানের মৃত্যু

        গাজার দখল নিতে চান ট্রাম্প

        যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের জবাব দিতে চীনের ৫ পদক্ষেপ

        ‘সিরিয়াস গার্লফ্রেন্ড’ পলাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত বিল গেটস

        বাংলায় রায় হাইকোর্ট এর

        গাজীপুরে বেক্সিমকোর কারখানা বন্ধ ঘোষণা

        নির্বাচনের ছাড়া এই মুহূর্তে বিএনপির কোনো রাজনীতি নেই

        হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় আজ

        আসছে নতুন দল: উপদেষ্টা নাহিদ

        ঢাকায় এসে নিখোঁজ হওয়া সুবাকে দেখা গেল ক্যামেরায়

        ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ

        ইমিগ্রেন্ট ছাড়া একদিন: লস এঞ্জেলেসের প্রতিবাদ রাতেও অব্যাহত

        ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ

        মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে শুল্ক আরোপ স্থগিত, চীনের সঙ্গেও আলোচনা হবে

        যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে পাল্টা শুল্ক চীনের

        নিউইয়র্কে বাড়ির সামনে বাংলাদেশিকে গুলি

        হাসিনা-রেহানাদের ৪ বাগানবাড়ি, আছে ডুপ্লেক্স ভবনও

        বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তার লকার ফ্রিজ করার নির্দেশ

        এবার ইউরোপে শুল্ক আরোপের হুমকি

কোথাও কিশোরের মৃত্যু, কোথাও শিশুরা গুলিবিদ্ধ

কোথাও কিশোরের মৃত্যু, কোথাও শিশুরা গুলিবিদ্ধ

কোথাও কিশোরের মৃত্যু, কোথাও শিশুরা গুলিবিদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের মৌসমে ফের আক্রান্ত নাবালকেরা। অন্যান্য সময়েও তারা সহিংসতার শিকার হয়। পশ্চিমবঙ্গে সাত দফার লোকসভা নির্বাচনে তিন দফা হয়ে গিয়েছে। তৃতীয় দফার নির্বাচনের আগে রাজ্যের দুই জেলায় মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এতে একজন নাবালকের মৃত্যু হয়েছে। আহত কয়েকজন।


হুগলি জেলার পাণ্ডুয়ায় এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে দেশি বোমা বিস্ফোরণে। পুকুরের ধারে একটি বালতিতে মজুত করা ছিল বোমা। সেটাকে বল ভেবে ধরতে গিয়ে বিস্ফোরণে সঙ্গে সঙ্গে মারা যায় ১১ বছরের রাজ বিশ্বাস। গত সোমবারের এই ঘটনায় আহত হয় তার সঙ্গী রূপম বল্লভ ও সৌরভ চৌধুরী।


গত মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদে তৃতীয় দফার ভোটমোটের ওপর নির্বিঘ্নে মিটেছিল। কিন্তু পরের দিন বিভিন্ন জায়গায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই জেলার ভগবানগোলায় গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। এতে চার শিশু আহত হয়। এদের বয়স ছয় থেকে আট বছরের মধ্যে।

বছরের বিভিন্ন সময় বিস্ফোরণে শিশু-কিশোরদের আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে আসে। নির্বাচন এলে এই ধরনের ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে তীব্র রেষারেষি চলে, তার জেরে সহিংসতার বলি হয় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা।

জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন গত মার্চে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে এই বিষয়ে স্মারকলিপি জমা দেয়। তারা দাবি করে, ৪০ জন শিশু ও কিশোর পশ্চিমবঙ্গে বোমা বিস্ফোরণের ফলে হতাহত হয়েছে।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যে বহু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল। কমিশনের দাবি, ভোট পরবর্তী অশান্তিতে ২৩ জন শিশু-কিশোর আক্রান্ত হয়। রাষ্ট্রপতির কাছে তথ্য পেশ করে কমিশনের চেয়ারপারসন প্রিয়ঙ্ক কানুনগো অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার শিশুদের স্বার্থ দেখছে না।

গত ডিসেম্বরে জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন সংসদে একটি রিপোর্ট পেশ করে। সেখানে তারা দাবি করেছে, বোমা বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইছে না।

কমিশনের দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই প্রশাসন বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চায়। শিশু-কিশোররা আক্রান্ত হয়েছে এমন অন্তত ১৪টি ঘটনাকে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন বোমা বিস্ফোরণ বলে স্বীকার করতে চায়নি। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে দাবি করেছে।

জাতীয় কমিশন তাদের রিপোর্টে অনেকগুলি ঘটনার কথা দিন-তারিখ সহ উল্লেখ করেছে। উত্তর ২৪ পরগনার কাঁকিনাড়া রেল স্টেশনের কাছে বোমা বিস্ফোরণে এক শিশুর মৃত্যু হয়। ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবরের ঘটনা।

২০২৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বীরভূম মল্লারপুরে বিস্ফোরণের মৃত্যু হয় সাত বছরের শিশুর। মে মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনা মহেশতলায় বিস্ফোরণ প্রাণ ছিনিয়ে নেয় ১০ বছরের নাবালকের।

২০২২ সালের নভেম্বরে উত্তর ২৪ পরগনার গ্রামে বিস্ফোরণে শিশু মৃত্যু হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে, ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর। বিস্ফোরণে পাঁচ শিশুর প্রাণ যায়।

বীরভূম জেলায় ১১ বছর বয়সের এক কিশোর মারা যায়। ২০২১ সালের মে মাসে। ছয় বছরের শিশুর বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় এই জেলার রামপুরহাটে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি।

পূর্ব বর্ধমানের রসিকপুরে ২০২১ সালের মার্চে বিস্ফোরণের মৃত্যু হয় ১৭ বছরের কিশোর ও ছয় বছরের শিশুর। ২০২২ সালের মার্চে মালদহের কালিয়াচকে একটি শিশু বিস্ফোরণে মারা যায়।

রিপোর্টে আরও কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে জাতীয় কমিশন, যেখানে বিস্ফোরণে শিশুরা আহত হয়েছে।

বিস্ফোরণের শিশু মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি কম হয় না। তৃণমূল ও বিজেপি এ নিয়ে একে অপরকে নিশানা করে। রাজ্য ও জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন কার্যত দুই শিবিরের পক্ষ নিয়েই যেন তরজা চালাতে থাকে।

জাতীয় কমিশনের রিপোর্টকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে খারিজ করে দিয়েছে রাজ্য কমিশন। উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী বলেছেন, ‘বিজেপি শাসিত রাজ্যে শিশুদের জাত, ধর্মের জন্য নিগ্রহের মারাত্মক ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ব্যবস্থা নেয় না। তখন জাতীয় কমিশন চোখ বুজে থাকে।’

বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজ্যের শাসক দলের যোগাযোগের কথাও সামনে এসেছে। বাড়িতে মজুত বোমা ফেটে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁয়। তৃণমূল নেতার বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ঝুমা খাতুন মারা যায়। ঝুমার মামা স্থানীয় তৃণমূল কর্মী আবুল হোসেন গায়েনকে গ্রেপ্তার করে।

যদিও জাতীয় কমিশনের দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেয় না। জাতীয় কমিশনের চেয়ারপারসন প্রিয়ঙ্ক কানুনগো বলেন, ‘খেলতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মারা যাচ্ছে। রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে উদাসীন। তারা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয় না। গত কয়েক বছর ধরে রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে শিশু অধিকারকে লংঘন করছে।’

রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের নতুন চেয়ারপারসন তুলিকা দাস বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের শিশু সুরক্ষা কমিশন সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘন্টা তৎপরতার সঙ্গে কাজ করে। এটা জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের জানার কথা। কেন তারা রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে এসব দাবি করেছেন, সেটা তারাই বলতে পারবে।’

তুলিকার বক্তব্য, ‘এমনি সময় কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা পুলিশের কাছে দ্রুত রিপোর্ট চাই। রিপোর্ট পেলে সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করি। ভোটের সময় ঘটনা ঘটলে নির্বাচন কমিশনকে আমরা আমাদের বক্তব্য জানাই।’

জাতীয় বা রাজ্য স্তরের বিভিন্ন কমিশন স্বশাসিত সংস্থা। এরা সরকারকে সুপারিশ করতে পারে। সরকার তা মানতে বাধ্য নয়। তবু অভিযোগ উঠছে, শাসক দলের স্বার্থ রক্ষা করে চলছে এসব কমিশন।

এর ফলে চাপানউতর চলতে থাকে। একইসঙ্গে বোমা বিস্ফোরণ হয় মাঝেমধ্যে। শিল্পী কবীর সুমনের ভাষায় ‘বোমাতন্ত্র’ কায়েম থাকে। তার জেরে অনেক মায়ের কোল খালি হয়। জাতীয় ও রাজ্য স্তরের দুটি সংস্থা থাকা সত্ত্বেও কেন এই পরিস্থিতি?

মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূর বলেন, ‘কেন্দ্র ও রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনগুলো তাদের লক্ষ্য থেকে সরে এসেছে। এগুলো এখন সরকারের উপাঙ্গ হিসেবে কাজ করে। রাজ্য কমিশনের সদস্যরা একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে যেতে যতটা উৎসাহী, শিশু সুরক্ষার ব্যাপারে ততটা নয়। তাদের লক্ষ্য শাসক দলের হয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা। কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। তাই তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়ে সুরাহা হয়নি।

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত