গণতান্ত্রিক বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব হুমকিতে
যুক্তরাষ্ট্রে গত ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে এখনো উত্কণ্ঠা, অনিশ্চয়তার অবসান হয়নি। কয়েক দফা ভোট গণনা, আদালতে একের পর এক মামলায় হারের পরও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জয় মানতে রাজি নন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বরং কীভাবে বাইডেনের জয়কে আটকে দেওয়া যায় সেই চেষ্টা করছেন তিনি। আগামী ৬ জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেস ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনা করে বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জয়ী ঘোষণা করবে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, কংগ্রেসে কিংবা বাইরে এ ধরনের বিশৃঙ্খলায় বাইডেনের জয় ঘোষণা কিছুটা বিলম্বিত হবে, ফলে কোনো পরিবর্তন হবে না। এই ষড়যন্ত্র ২০ জানুয়ারি বাইডেনের শপথ আটকাতে পারবে না। তবে এটি মার্কিন গণতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে গণতান্ত্রিক বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের গর্ব করার মতো যে ঐতিহ্য ছিল তা হুমকিতে পড়েছে। একই সঙ্গে ঝুঁকিতে পড়েছে গণতান্ত্রিক বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বও।
সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন কংগ্রেসের ১৪০ জনের বেশি রিপালিকান আইনপ্রণেতা কংগ্রেসে বাইডেনের জয় আটকাতে চেষ্টা চালাবেন। তারা ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনার বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। একই সঙ্গে কংগ্রেসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারেন তারা। ঐদিন বাইডেনের জয় বাতিলের দাবিতে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সমর্থকরা বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। সেখানে ট্রাম্প নিজেও উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রতিনিধি পরিষদের দুই সদস্যের বরাত দিয়ে সিএনএন বলেছে, ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে ইলেকটোরাল ভোট গণনার বিরুদ্ধে প্রতিনিধি পরিষদের কমপক্ষে ১৪০ জন রিপাবলিকান সদস্য ভোট দেবেন। এই পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে ছুটি সংক্ষেপ করে ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটন ফিরেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি নিয়মিত রিপাবলিকান আইন প্রণেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
খবরে বলা হয়েছে, ভোট জালিয়াতির কোনো বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ এখন পর্যন্ত রিপাবলিকান পার্টি ও ট্রাম্প টিম উত্থাপন করতে পারেনি। কোনো আইনি সাফল্যও তারা পায়নি। ট্রাম্প মনে করছেন, বাইডেনের জয় আটকানোর জন্য কংগ্রেসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই হতে পারে তার শেষ সুযোগ। এক্ষেত্রে প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেটের সদস্যদের লিখিত আপিত্ত দিতে হবে। এই আপত্তির পর কংগ্রেসের দুই কক্ষে বিতর্ক হবে। ইলেকটোরাল কলেজ ভোট গণনা করা হবে কি না তা নিয়ে দুই কক্ষে ভোটাভুটি হবে।
মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সেখানে ইলেকটোরাল ভোট গণনার বিপক্ষে রায় আসবে না। তাই কংগ্রেসে বাইডেনের আনুষ্ঠানিক জয় আটকানো যাবে না। শুধু কিছু সময়ের অপচয় হবে।
ইতিমধ্যে কয়েকটি ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে সিনেটে রিপাবলিকান দলের নেতা মিচ ম্যাককোনেলের। তিনি ব্যক্তিগতভাবে আইনপ্রণেতাদের এ ধরনের উদ্যোগ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক কনফারেন্স কলে তিনি মিসৌরির রিপাবলিকান সিনেটরের কাছে জানতে চান কেন তিনি কংগ্রেসে আপত্তি দিতে চেয়েছেন। তবে এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি সিনেটর জোশ হাউলে। পরে ম্যাককোনেল রিপাবলিকান সিনেটরদের বলেন, তারা বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখে যেন আপত্তি জানাতে যান।
নেব্রাস্কার রিপাবলিকান সিনেটর বেন সাসে বুধবার এক ফেসবুক পোস্টে বাইডেনের জয় আটকানোর এই অপকৌশলের সমালোচনা করেছেন। তিনি এই প্রচেষ্টা পরিহারের জন্য দলীয় সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ও তার মিত্ররা আগুন নিয়ে খেলা করছে। নির্বাচনের ফল বাতিলে তারা প্রথমে আদালত, পরে রাজ্য আইনসভা এবং এখন কংগ্রেসকে ব্যবহারের চেষ্টা করছে।
রিপাবলিকান দলের সাবেক সিনেটর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইলিয়াম কোহেন ট্রাম্পের সঙ্গে সুর মেলানো কংগ্রেসম্যানদের সমালোচনা করে বলেছেন, তারা ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণে থাকা সার্কাসের প্রাণীর মতো আচরণ করছে। আমার মনে হয়, নতুন দলের উত্থানের সময় এসেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে, রিপাবলিকানরা গণতন্ত্রের জন্য লড়ছেন নাকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য লড়ছেন।
বিশ্লেষক বলছেন, ২০০ বছরের বেশি সময়ের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের সংকটে খুব কমই পড়েছে। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক বিশ্বে গর্ব করে। এজন্য মার্কিন গণতন্ত্র অন্য দেশের কাছে ঈর্ষণীয়। কিন্তু সেই গর্বের জায়গা আজ হুমকিতে। এছাড়া সারা বিশ্বে গণতন্ত্র প্রসারের অন্যতম প্রবক্তা যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান সংকটের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির বাস্তবায়নও ঝুঁকিতে পড়েছে।
শেয়ার করুন