কৃত্রিম দ্বীপ নিয়ে মার্কিন আপত্তি নাকচ চীনের
সামরিক উপস্থিতি বাড়াবে আমেরিকা
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে অচলাবস্থা নিরসনের লক্ষণ যখন একেবারেই চোখে পড়ছে না, সে অবস্থায় শনিবার এক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা শীর্ষ বৈঠকে মার্কিন নেতাদের অব্যাহত সমালোচনার মুখে চীন দক্ষিণ চীন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ বা ভূমি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের পক্ষে দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছে।মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশ কার্টার ও অন্যান্য কর্মকর্তারা চীনের কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের তীব্র সমালোচনা করেন। তবে কূটনৈতিক আলোচনায় বসতে চীনকে বাধ্য করতে যুক্তরাষ্ট্র কি পদক্ষেপ নিতে পারে সে বিষয়ে তারা কিছু বলেননি। কার্টার বলেন, চীনের ভূমি পুনরুদ্ধার আন্তর্জাতিক আইন বহির্ভূত পদক্ষেপ। সাগর গর্ভস্থ ভূমিকে বিমান ক্ষেত্রে পরিণত করা তার সার্বভৌমত্ব সম্প্রসারিত করবে না। তিনি ও অন্যরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিতর্কিত এলাকার অধিকতর কোনো সামরিকীকরণের বিরোধিতা করে। তারা যে প্রসঙ্গে এ কথা বলেন তাহলো চীন কৃত্রিম দ্বীপগুলোর একটিতে দু’টি বিরাট মোটরচালিত সামরিক যান মোতায়েন করেছে।চীনা কর্মকর্তারা প্রকাশ্য বক্তব্যে ও বেসরকারি বৈঠকে এ দ্বীপ নির্মাণে সমর্থন এবং মার্কিন হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের দীর্ঘ প্রতিষ্ঠিত সার্বভৌমত্ব ও অধিকার সম্পর্কে অযৌক্তিক মন্তব্য করছে, গোলমাল সৃষ্টি করছে এবং দ্বীপগুলোতে চীনের যথাযথ ও যুক্তিসঙ্গত নির্মাণ কর্মকা- বিষয়ে অভিযোগ তুলছে। চীন দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করে। এশিয়া-বিষয়ক মার্কিন সহকারী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডেভিড শিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পররাষ্ট্র-বিষয়ক প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল গুয়ান ইয়োফেইর সাথে বেসরকারি বৈঠক ছিল প্রাণবন্ত ও অকপট।শিয়ার বলেন, এ সব সমাধানের জন্য কোনো রূপার বুলেট নেই। এ জন্য সময় লাগবে এবং এ জন্য আমাদের ও আমাদের অংশীদারদের কিছুটা কূটনৈতিক দৃঢ়তার প্রয়োজন হবে। সম্মেলনে মার্কিন সিনেটর ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলীয় অন্যান্য দেশের কর্মকর্তারা জানতে চান যে, যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না। কার্টার ও সদ্য দায়িত্ব গ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত অঞ্চলীয় কমান্ডার অ্যাডমিরাল হ্যারি হ্যারিস এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ নেবে কিনা সে বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকার করেন। সিনেট আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন বলেন, ২০১৬ সালে প্রশান্ত মহাসাগরে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক মহড়ায় চীনকে আমন্ত্রণ জানানো যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে না। কিন্তু হ্যারিস বলেন, চীনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়ে গেছে। দু’দেশ যদি ভালো সম্পর্ক গড়তে চায এবং ভুল বোঝাবুঝি হ্রাস করতে চায় তাহলে তাদের মধ্যে অবশ্যই আলোচনা হতে হবে। তবে তিনি বলেন, যে কোনো সময় আমরা আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারি। তিনি বলেন, আমরা আর্টিলারি অস্ত্র মোতায়েনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন যার কথা কয়েক সপ্তাহ আগে জানা গেছে। এ দু’টি যান সংক্রান্ত মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য সম্পর্কে অবহিত দু’জন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। পেন্টাগন ঐ দ্বীপে সামরিক যান দু’টি থাকার সমর্থনে কোনো ছবি প্রকাশ করেনি। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের শক্তিপ্রকাশ মূলক আচরণ ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার সম্পর্ক তিক্ত করে তুলছে যদিও প্রেসিডেন্ট ওবামা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’দেশের সহযোগিতা গভীরতর করার চেষ্টা করছেন।
( সাগরে চীনের কৃত্তিম দ্বীপ)
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ-এর শীর্ষ বৈঠকে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কার্টার বলেন, একটি বিমান ক্ষেত্রে একটি শিলা স্থাপন করার মধ্যদিয়ে সার্বভৌমত্বের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় না বা আন্তর্জাতিক আকাশ ও সাগরবিষয়ক বিধি-নিষেধ লঙ্ঘনের অনুমোদন পাওয়া যায় না। পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সামরিক বিজ্ঞান একাডেমিতে চীন-মার্কিন প্রতিরক্ষা সম্পর্ক কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সিনিয়র কর্নেল ঝাও জিয়াওঝু বলেন, চীনের পদক্ষেপ যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সম্মত। তিনি কার্টারকে চ্যালেঞ্জ করে প্রশ্ন করেন, আমেরিকার চীনের সমালোচনা ও দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন সামরিক গোয়েন্দা কার্যক্রম বিরোধ নিরসন এবং এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতাবস্থা রক্ষায় সহায়ক কিনা।কার্টার জবাবে বলেন, চীনের সম্প্রসারণ ও ভূমি পুনরুদ্ধার প্রকল্প নজিরবিহীন ঘটনা। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে বহু দশক ধরে বিমান উড্ডয়ন ও জাহাজ পরিচালনা করছে এবং তা বন্ধ করার কোনো ইচ্ছা নেই। কার্টারের সমালোচনার প্রধান লক্ষ্য চীন হলেও তিনি বলেন, অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র পর্যায়ে ভূমি পুনরুদ্ধার কাজে লিপ্ত অন্য দেশগুলোকেও তা বন্ধ করতে হবে। এ রকম দেশগুলো হলো- ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও তাইওয়ান। কার্টার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে বিমান উড্ডয়ন, জাহাজ পরিচালনা ও কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পেন্টাগন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার শ্রেষ্ঠ সরঞ্জাম ও লোকদের প্রেরণ করবে যার মধ্যে থাকবে নয়া উচ্চ প্রযুক্তির সাবমেরিন, নজরদারি বিমান, স্টিলথ ডেস্ট্রয়ার ও বিমানবাহী জাহাজভিত্তিক নয়া পূর্ব-সতর্কীকরণ বিমান। একজন সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, পুনরুদ্ধারকৃত ভূখ- যে চীনের আঞ্চলিক সমুদ্র সীমায় নয় তার উপর গুরুত্ব দিতে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রকল্পগুলোর আরো কাছাকাছি আরো সামরিক ফ্লাইট ও বিমান টহলের কথা বিবেচনা করছে। কর্মকর্তারা বস্তুত এ অঞ্চলে মার্কিন উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে সামরিক মহড়া বাড়ানোর পথ খুঁজছেন। কৃত্রিম দ্বীপগুলো যে সার্বভৌম চীনা ভূখ- নয় তা বোঝাতে সেগুলোর ১২ মাইলের মধ্যে মার্কিন জাহাজগুলোর চলাচলের একটি সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র এপি
শেয়ার করুন