আর্কাডিয়ায় বাড়িতে অনুপ্রবেশকারীর গুলিতে ৬১ বছর বয়সী পিতার মৃত্যু; সন্দেহভাজন পলাতক
নারী দেহরক্ষীসহ ৪০ জনের নিরাপত্তা বলয়
জিজ্ঞাসাবাদের সময় ছিলো বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায়। এর দু’ঘণ্টা আগেই সকাল নয়টায় বিশাল গাড়ির বহর আর সুসজ্জিত ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাঙ্গনে আসেন আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। কালো রংয়ের ব্লেজারের সঙ্গে তার পরনে ছিল সবুজ শার্ট, লাল রংয়ের টাই এবং সোনালী রংয়ের হাতঘড়ি। তার একজন সহকারী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তার হাতের ঘড়ির ডায়াল এবং ব্রেসলেট হচ্ছে হীরক খচিত। কেবল তার জন্যে প্রস্তুতকৃত এ মূল্যবান ঘড়িটি তৈরি করা হয়েছিল ২৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে। বিশ্ববিখ্যাত রোলেক্স কোম্পানি এ ঘড়িটির প্রস্তুতকারক।এমন সুসজ্জিতভাবেই সাদা রঙের মার্সিডিঞ্জ বেঞ্জে (ঢাকা মেট্রো-গ ৩৫০০৮১) চড়ে রাজকীয় কায়দায় দুদকে প্রবেশ করেন মুসা বিন শমসের।
দুদকে প্রবেশ করার আগে তার সামনে ও পেছনে একডজন গাড়ি ছিলো। চারজন নারী দেহরক্ষীসহ প্রায় ৪০ জনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মকর্তা নিয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হন তিনি। তার দেহরক্ষীরা জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালে দুদকের প্রধান প্রাঙ্গনের বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করছিলেন।সকাল ৯টায় দুদকে এলেও মুসা বিন শমসেরের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয় সকাল পৌনে দশটায়, চলে দুপুর ১টা পর্য্যন্ত। দুদকের উপ-পরিচালক মীর মো: জয়নুল আবেদীন শিবলী তাকে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন।একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সাময়িকী ‘বিজনেস এশিয়া’র সূত্র ধরে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, সুইস ব্যাংকে জব্দকৃত সাত বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫১ হাজার কোটি টাকা) এবং অর্থপাচার সম্পর্কে। উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, দেশ থেকে তার দেওয়া ছাড়া এখন আর নেওয়ার কিছু নেই। সুইস ব্যাংকে তার যে টাকা রয়েছে তা বাংলাদেশের কোনো অর্থ নয়। দেশের বিন্দু পরিমাণ কোনো অর্থও বিদেশে পাচার করেননি বলে দুদককে সোজা-সাপটা জানিয়ে দেন তিনি।সুইস ব্যাংকে যে টাকা রয়েছে তা তার বিদেশি উপার্জিত টাকা বলেও জানান মুসা বিন শমসের।
জিজ্ঞাসাবাদে দুদক তার কাছে জানতে চায় এতো অর্থের উৎস সম্পর্কে। দুদকের জবাবে তিনি বলেছেন, চার দশকের বেশি সময় ধরে তিনি জনসম্পদ রফতানির কাজে জড়িত। তার আজকের অবস্থান বৈধভাবে ব্যবসা করে হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।জিজ্ঞাসাবাদের সময় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কিছু অতিরঞ্জিত খবর বেরিয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সাময়িকী ‘বিজনেস এশিয়া’ মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে চলতি বছরে সংবাদ প্রকাশ করে বলে, সুইস ব্যাংকে তার ৭ বিলিয়ন ডলার জব্দ রয়েছে।জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি পানি পান করতে চাইলে দুদক থেকে মাম ব্র্যান্ডের মিনারেল ওয়াটার দেওয়া হয়। এ সময় তিনি এ পানি পান না করে তার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর কাছে তার জন্য থাকা ফ্রান্সের Evian ব্র্যান্ডের পানি পান করেন।তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি দুপুর একটায় দুদক থেকে বের হন। এ সময় কালো চশমায় স্যুট ব্লেজার পরিহিত একডজন নিরাপত্তাকর্মী দরজার দুই পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রধান ফটকের সামনে তখন শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী অপেক্ষায়।বের হয়ে পাঁচ মিনিট সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মুসা বিন শমসের।মুসার জন্ম ১৯৫০ সালের ১৫ অক্টোবর ফরিদপুরে। তিনি ড্যাটকো গ্রুপের চেয়ারম্যান। ড্যাটকোর মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠানটি জনশক্তি রফতানি করে। তবে তার পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো অস্ত্র ব্যবসার কথাই আগে এনেছে।
১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী টনি ব্লেয়ারের নির্বাচনী প্রচারের জন্য ৫০ লাখ পাউন্ড অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনায় আসেন এ ব্যবসায়ী।বাংলা উইকিপিডিয়ায় মুসা বিন শমসেরকে ‘বিজনেস মোগল’ এবং ‘প্রিন্স মুসা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ড্যাটকো গ্রুপের চেয়ারম্যান। আর্মস ডিলার হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক পরিচিত বলেও উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে।তার ওপর দুদকের কাছে থাকা তথ্যে দেখা গেছে, রূপকথার মতোই ‘প্রিন্স মুসা’র বর্ণিল জীবন ও বিস্ময়কর সব কর্মধারা। এ উপমহাদেশে তিনি শীর্ষস্থানীয় বর্ণাঢ্য ব্যক্তি, যিনি এক বিলিয়ন পাউন্ড উপার্জন করেছেন বেশিরভাগ ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র বেচা-কেনার ব্যবসা করে।ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, মুসা বিন শমসেরই বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তার মূল সম্পত্তি প্রায় ১২ বিলিয়ন ইউএস ডলারের ওপরে। তিনি অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক পরিচিত।মুসা বিন শমসের আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই।মুসার বড় ছেলে ববি হাজ্জাজ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন।
শেয়ার করুন