ভিক্টরভিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু, সন্দেহভাজন এখনও অধরা
রাঙ্গামাটির কাট্টলী বিলে মিলছে না বড় মাছ
‘কাট্টলী বিল’ রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই হ্রদের সর্ববৃহৎ বিল। বর্ষাকালে এই বিলের চারদিক কানায় কানায় পানিতে ভরপুর থাকে। বর্ষার মৌসুমে এ বিলটির অপরূপ সৌন্দর্য নৌকা যোগে ঘুরে ঘুরে অবলোকন করা যায়।
১৯৬৮ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের কারণে রাঙ্গামাটি জেলার অন্যান্য এলাকার মতোই লংগদু উপজেলার কয়েক হাজার একর জমি হ্রদের পানিতে তলিয়ে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ‘কাট্টলী বিল’। এই বিলটি লংগদু উপজেলাধীন ভাসান্যাদম, বগাচতর ও লংগদু ইউনিয়নে বৃহৎ অংশ নিয়ে গঠিত। অর্থাৎ উপজেলার কাপ্তাই হ্রদের মধ্যবর্তী উত্তর-দক্ষিণ দশ কিলোমিটার এবং পূর্ব-পশ্চিম দশ কিলোমিটার এলাকাকে কাট্টলী বিলের অংশ ধরা হয়। এ বিলের সৌন্দর্যের কারণে পর্যটন সম্ভাবনাও প্রচুর।
কাপ্তাই হ্রদে যা মাছ উৎপাদন হয় তার অর্ধেক মাছের জোগান আসে এই ‘কাট্টলী বিল’ থেকে। তাই এই স্থানকে কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য ভাণ্ডার বলা হয়। কয়েক হাজার মৎস্যজীবী, মৎস্য ব্যবসায়ী এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজনদের জীবন জীবিকার মূল বিচরণ ক্ষেত্র এই ‘কাট্টলী বিল’। শুধু শুষ্ক মৌসুমে তিন মাস ব্যাতিত সারা বছরই মৎস্য শিকারীদের পদচারণায় মুখর থাকে ‘কাট্টলী বিল’।
কাট্টলী বিলে বিগত দিনগুলোতে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া গেলেও দিন দিন কাট্টলী বিলে মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আগের মতো বড় জাতের মাছ যেমন-রুই, কাতল, বোয়াল, চিতল মাছগুলো আর পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ বেশ কয়েক দশক আগেও এই বিল মৎস্যজীবি, ব্যবসায়ীদের প্রাণকেন্দ্র ছিল।
মৎস্য গবেষকদের মতে, হ্রদের নব্য হ্রাস, অবাধে জেলেদের কাচকি জাল, টুইট্টা জালের অপব্যবহারের কারণে পোনা মাছ নিধন হওয়ায় বড় মাছের প্রজাতি দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। জৌলুস হারাচ্ছে ‘কাট্টলী বিল’।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিডিট, নদী উপকেন্দ্র রাঙ্গামাটির জেলার কেন্দ্র প্রধান উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক হায়দার বলেন, কাচকি জাল দিয়ে কাচকি মাছ ধরার কথা থাকলেও এ কাচকি জাল টানার সময় হ্রদ থেকে ৩২-৩৫ প্রজাতির পোনা মাছ ধরা পড়ছে। কাচকি জালের যে সাইজ, সেই সাইজ দিয়ে কোনো মাছ বের হতে পারে না। এছাড়াও হ্রদে মৎস্য ধরা যখন বন্ধ থাকে সে সময়ে অসাধু জেলেরা হ্রদের গুইট্টাগুলো তুলে ফেলে। যে কারণে বোয়াল, চিতল, রুই জাতীয় মাছগুলো ডিম ছাড়তে পারে না। ফলে কাচকি জাতের মাছ বেড়ে যাচ্ছে। এইজন্য হ্রদের তলদেশের গুইটগুলো যাতে জেলেরা তুলতে না পারে সেই ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, এক সময় কাপ্তাই হ্রদে পঁচাত্তর প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও বর্তমানে বাণিজ্যিক ভাবে ৩০-৩৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক মাছ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদে মাছের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন রাঙ্গামাটি জেলার ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেন, ‘রাঙ্গামাটির মধ্যে লংগদুর কাট্টলী বিল হচ্ছে মাছ উৎপাদনের বড় একটি ক্ষেত্র। মাছ ধরার মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে প্রচুর মাছ আহরণ হয়। কাট্টলী বিলে সারা বছরই পানি থাকে। আমরা সেখানে একটি মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছি। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে একটি কৃত্রিম অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে সেখানে মাছগুলো লুকিয়ে থাকতে পারে, আশ্রয় নিতে পারে।’
তিনি বলেন, কাট্টলী বিল এলাকায় মাছ শুকানোর জন্য একটি নির্ধারিত স্থান তৈরি করতে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন