চট্টগ্রাম চুক্তি পরিবীক্ষণ কমিটি পুনর্গঠন করা ছাড়া আট মাসে এ চুক্তি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি অন্তর্বর্তী সরকার
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরিবীক্ষণ কমিটি পুনর্গঠন করা ছাড়া আট মাসে এ চুক্তি বাস্তবায়নে তেমন কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের পথসভায় এ কথা বলেছেন বক্তারা।
আজ শনিবার রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্কে এ সভা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অগ্রাধিকার তালিকায় রাখাসহ সাত দফা দাবিতে আজ দিনব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাস্তবায়ন আন্দোলন নামের সংগঠনটি। এর মধ্যে আছে ছয়টি পথসভা, প্রচারপত্র বিলি ও গণসংযোগ। এর অংশ হিসেবে সকালে বাহাদুর শাহ পার্কের সভাটি হয়।
আজকের সভায় বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন বন্দোবস্তের আওয়াজ তুলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন বন্দোবস্তের বাস্তব রূপ দিতে হবে। আর এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে সরকারের কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তা নেই।
সমাবেশে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ২৭ বছরে এই চুক্তির কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি, কোনো ধরনের মৌলিক বিষয় বাস্তবায়িত হয়নি। যারা চুক্তি করেছিল, তারাও করেনি। এখন যারা ক্ষমতায় বসেছে, তারাও করছে না।
রুহিন হোসেন বলেন, আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে পাহাড়ের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। পাহাড়িদের অধিকার রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশ শেষে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। এ সময় তাঁরা বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে বের হয়ে লক্ষ্মীবাজার, শাঁখারীবাজার মহানগর দায়রা জজ আদালত, রায়সাহেব বাজার, তাঁতীবাজার এলাকায় সাত দফা কর্মসূচির প্রচারপত্র বিতরণ করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের পক্ষে আজ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পথসভা ও প্রচারপত্র বিলির কর্মসূচি নেওয়া হয়
সমাবেশে মানবাধিকারকর্মী দীপায়ন খীসা সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবির মধ্যে আছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচিভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন; আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে ক্ষমতা দান। এ ছাড়া পাহাড়ের ভূমি সমস্যা সমাধানে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকর করা, অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের পুনর্বাসন ও তাঁদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা, পাহাড়ে স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন, স্থানীয় সরকারে সমতলের আদিবাসীদের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনেরও দাবি জানান তাঁরা।
চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের প্রতিনিধিরা রাজধানী ঢাকার দিনব্যাপী পথসভায় ছয়টি রুট নির্ধারণ করেন। প্রথম পথসভা পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে হয়। এরপর প্রেসক্লাব, শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর-১০ ও উত্তরার রাজলক্ষ্মীতে করবেন তাঁরা।
পথসভাগুলোতে বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুল রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফন্ট, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট লীগের নেতারা বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশিষ্ট নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মীরা এতে সংহতি জানান।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন