আপডেট :

        ৪৩ দেশের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা

        পোশাক রপ্তানিতে অপ্রচলিত বাজারের অংশ কমছে

        ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ হঠাৎ বাড়ছে

        তারাও কি ধর্ষক নয়ঃ স্বাগতা

        ট্রাম্প বললেন ‘মজা করছিলাম’

        দ. আফ্রিকার দূতকে যুক্তরাষ্ট্রের বহিষ্কার

        মে মাসে দেশে তিনটি ক্রিকেট সিরিজ

        করিডোর দিতে জাতিসংঘের আহ্বান

        শিবির নেতা দল থেকে বহিষ্কার

        নৌ-পুলিশ ফাঁড়িতে প্রতিনিয়ত আইসি পরিবর্তনের ফলে পদ্মার জাজিরা অঞ্চলটি হয়ে উঠেছে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে

        দেখা যায়নি লাকীকে, বামপন্থিদের গণমিছিল স্থগিত

        রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে

        ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ভোট নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে

        ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলো

        পর্যটকদের সতর্ক করল রাশিয়ার দূতাবাস

        শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়নি

        অসামাজিক কাজের অভিযোগে গ্রেপ্তার শিবির নেতা

        কবে হতে পারে ঈদুল ফিতর, জানালো আবহাওয়া দপ্তর

        চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, রক্তাক্ত যাত্রী

        শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন

নৌ-পুলিশ ফাঁড়িতে প্রতিনিয়ত আইসি পরিবর্তনের ফলে পদ্মার জাজিরা অঞ্চলটি হয়ে উঠেছে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে

নৌ-পুলিশ ফাঁড়িতে প্রতিনিয়ত আইসি পরিবর্তনের ফলে পদ্মার জাজিরা অঞ্চলটি হয়ে উঠেছে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে

পদ্মাসেতু হয়ে দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার প্রায় ৭ টি ইউনিয়ন প্রমত্তা পদ্মার সাথে থাকায় পদ্মাসেতুর নিরাপত্তার পাশাপাশি এই এলাকাটির অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য নৌ-পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের অধীনে জাজিরার মাঝিরঘাট এলাকায় একটি নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি দেয়া হয়েছে। নাড়িয়ার সুরেশ্বর ও জাজিরার মাঝিরঘাট ফাঁড়ির মধ্যবর্তী বিশাল এলাকার নিরাপত্তায় আরও এক বা একাধিক ফাঁড়ির আলোচনা ও প্রস্তাবনা থাকলেও অদ্যাবধি তা বাস্তবায়ন হয়নি।

তার উপর মাঝিরঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়িতে প্রতিনিয়ত আইসি পরিবর্তনের ফলে পদ্মার জাজিরা অঞ্চলটি হয়ে উঠেছে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে। অনভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন অভিযোগসহ নানা কারণে গত এক বছরে অন্তত ৬-৭ জন আইসি পরিবর্তন হয়েছে এই ফাঁড়িতে। তাছাড়া এখানকার অধিকাংশ বর্তমান পুলিশ সদস্য নৌ-পুলিশে কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় ফাঁড়িটির কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটার চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে দিনদিন। এক কথায় বিগত প্রায় এক যুগের মধ্যে বিভিন্ন অবৈধ সিন্ডিকেটের জন্য এর থেকে ভালো সুযোগ আর কখনও আসেনি।

সর্বশেষ ইন্সপেক্টর সাইফুল নামে দায়িত্ব পালন করা আইসি অল্পদিনে আইসি পরিবর্তনের এই বছরটিতে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া অবৈধ ড্রেজিং থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি বা ডাকাতির মতো নিয়মিত অপরাধমূলক কার্যক্রম স্থানীয়দের সহযোগিতা ও মাইকিংয়ের পাশাপাশি কঠোরভাবে আইন প্রয়োগসহ বিভিন্ন কৌশলে মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও জাতীয় পট-পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট এই বদলী-মৌসুমে হঠাৎ করেই তাকে চলে যেতে হয়, যার ফলে আবার সৃষ্টি হয় আইসি সংকট। এরপর খুব দ্রুতই পদ্মানদীর জাজিরা এরিয়ার পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে অপরাধীর স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়ে যায়।

ইন্সপেক্টর সাইফুল এর পরে খালি হয়ে যাওয়া আইসির দায়িত্ব আসে মাঝিরঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) হাশেম এর উপর। তবে, সম্প্রতি মাঝিরঘাট ও কুন্ডেরচরসহ একাধিক জায়গায় ছোট আকারে অবৈধ ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া একাধিক বড় সিন্ডিকেট নিয়মিত আয়োজন করে অবৈধ ড্রেজিংয়ের পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। পদ্মার বিভিন্ন চর কেন্দ্রিক নিয়মিত মাদকের বড় চালান আসা-যাওয়া করারও খবর পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া বাল্কহেডের ধাক্কায় নিহত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে কিছুদিন পূর্বে, যা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাও করা হয়েছে নৌ-পুলিশের সহযোগিতায়।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পরে একইসাথে জাজিরার কুন্ডেরচর, বিলাসপুর, বড়কান্দি, পালেরচর ও পূর্ব নাওডোবার বেশ কয়েকটি জায়গায় বেশ কয়েকটি চাঁদাবাজ চক্র সক্রিয় হয়ে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে চলেছে।

তাছাড়া প্রতিবছরের নিয়মিত জাটকা ইলিশ অভিযান চলমান থাকলেও প্রত্যেকটি এরিয়ায় চিহ্নিত আলাদা - আলাদা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কন্টাক্ট করে পাল্লা দিয়ে চলছে জাটকা ইলিশ নিধন। যেখানে উপজেলা মৎস্য অফিসের থেকেও অনেক বেশি পরিমাণে মাঝিরঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও গত সপ্তাহে পদ্মার এই এলাকাটিতে ডাকাতদের মহড়া দেয়ার খবরও পাওয়া গিয়েছে। মোটকথা, অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে পদ্মা নদীর এই এলাকাটি।

বিষয়টি নিয়ে ১০-১২ টি সিন্ডিকেটের মধ্যে অন্যতম সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী শফিক কাজীর মোড় এলাকার তেল ব্যবসায়ী রফিক খার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার নিজস্ব কয়েকটি নৌকায় জাটকা নিধনের কথা শিকার করলেও কন্টাক্টে আনা অন্যান্য নৌকা পাঠিয়ে দেয়ার দাবি করে বিশাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। 

তবে স্থানীয় একাধিক জেলেদের সূত্রে জানা যায়, রফিক খার মাধ্যমেই আশেপাশের ৩ টি নৌ-ফাঁড়ির পাশাপাশি অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কন্টাক্ট করে জাল ফেলেন তারা।

এছাড়া চাঁদাবাজ চক্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সদস্যদের সাথে কথা বললে তারা বিষয়টি অস্বীকার করে অন্যদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। তবে, সংগৃহীত প্রমাণ অনুযায়ী বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় নতুন-পুরাতন বিভিন্ন চক্রের পাশাপাশি নড়িয়ায় অবস্থানরত হিজড়া জনগোষ্ঠীর একটি চক্রও নিয়মিত চাঁদাবাজি করছে নড়িয়া জাজিরার মাঝামাঝি এলাকায়। এই সিন্ডিকেটের সাথে নৌ-পুলিশের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা এমনকি শরীয়তপুর, জাজিরা ও নড়িয়ার একাধিক সাংবাদিকের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছে বিভিন্ন চক্র।

নড়িয়া উপজেলা হিজরাদের সর্দার হৃদয় ও সোনিয়া বলেন, আমরা সব জায়গা থেকেই মানুষ কাছ থেকে চেয়ে নেই। এটা সবাই যেমন এলাকার রাজনৈতিক নেতা থেকে পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকরা জানে।

অবৈধ ড্রেজিং সিন্ডিকেটের মাঝিরঘাট এলাকার মহসিন মাদবর ও তাজেল মাদবরসহ একাধিক ব্যক্তি তাদের ড্রেজিংয়ের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানালেও একাধিকবার সীমিত আকারে অবৈধভাবে ড্রেজিং করার বিষয়টি অস্বীকার করে শুধুমাত্র একবার কয়েকদিন ড্রেজিং করার কথা স্বীকার করেন। অন্যদিকে, জেলেদের বক্তব্য অনুযায়ী পদ্মার বিলাসপুর-কুন্ডেরচর এলাকায় তাদের দিকে গুলি ছুঁড়ে ডাকাত দলের মহড়া দেয়ার রাতেই শরীয়তপুরের আলোচিত ৪ ডাকাত হত্যার ঘটনাটি ঘটে।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, নিয়মের তোয়াক্কা না করে অবৈধ ড্রেজিংকে বৈধতা দিতে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছে অবৈধ ড্রেজিং সিন্ডিকেটের একটি অংশ। যেখানে নেয়া হচ্ছে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক উপর মহলের নাম- তদবিরের সাহায্য। 

জাটকা ইলিশ নিধন সম্পর্কে জাজিরা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল শরীফ জানান, জেলে বা কোন সিন্ডিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে উল্টো অবৈধ জেলেদের নিয়ন্ত্রণ অভিযানে মাঝিরঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ব্যাপক অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন তিনি।

এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে মাঝিরঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) হাশেম বলেন, বর্তমানে ঈদকে সামনে রেখে আমরা নদীতে তৎপরতা বৃদ্ধি করেছি। গত ১ সপ্তাহে আমরা অনেকগুলো সফল অভিযান পরিচালনা করে ১০-১২জন চাঁদাবাজ ধরে কোর্টে প্রেরণ করি।

নৌ-পুলিশ এর জায়গায় তাদের তেমন একটা কাজ নেই দাবি করে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল আকন্দ  বলেন, এটা নৌপুলিশ দেখে, নদীর যেকোন ঘটনার দায়দায়িত্ব তাদের।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরি রায় জানান, আমরা সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি দপ্তরকে নিয়মিত নির্দেশনা দিয়ে সমস্যাগুলো সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে নৌপুলিশ যদি নিয়মিত তৎপর থাকে তাহলে পদ্মানদী অবৈধ ড্রেজিং ও চাঁদাবাজি কমে আসবে বলি আমি বিশ্বাস করি।

নৌ-পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, নৌপুলিশ তৎপর থাকায় পদ্মা নদীতে অপরাধ প্রবণতা অনেক কমে গেছে। মাঝিরঘাট নৌ ফাঁড়ির আই সি সংকটের বিষয়ে আমি ডিআইজি অফিসে জানিয়েছি যাতে সেখানে নিয়মিত আইসি দেওয়ার ব্যবস্থা করে। আর হিজরাদের চাঁদাবাজির সাথে যদি কোন পুলিশ জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবো।

নিয়মিত টহলের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখার দাবি করলেও ঘন-ঘন আইসি পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সার্বিক অস্থিতিশীলতা ও সর্বশেষ অল্পদিনেই এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা আইসি ইন্সপেক্টর সাইফুলকে পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, মাঝিরঘাট নৌ ফাঁড়িতে নিয়মিত আইসি না থাকার একটা সুবিধা অপরাধীচক্র নেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু মাঝিরঘাট নৌ ফাঁড়িতে যেই দায়িত্বে থাকে তারা সবাই নদীতে অপরাধ কমিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে।

এলএবাংলাটাইমস/ওএম

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত