আপডেট :

        আহত বিড়াল ফেলে দেওয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার

        সৎমায়ের হাতে ২০ বছর বন্দী যুবক!

        পিকো রিভেরায় টর্নেডোর আঘাত, ভেঙে পড়েছে গাছ ও বিদ্যুৎ লাইন

        টাকা পরিশোধ না করলে ন্যাটোর পাশে থাকব না বললেন ট্রাম্প

        এলডিসি থেকে উত্তরণ আগামী বছরই

        ‘লজ্জিত, ক্ষমার অযোগ্য আমরা’

        পরিচয় চুরি ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তি

        শক্তিশালী ঝড়ের আঘাতে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ে তুষারপাত, বৃহস্পতিবারের পূর্বাভাস

        কুয়েতে বন্দি ছয় মার্কিন নাগরিক মুক্ত, যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলেন

        আজ বিকেলে ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব

        দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ‘ব্লাড ওয়ার্ম মুন’ পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দেখার সেরা সময়

        প্রতারণার মাধ্যমে এফইএমএ’র ত্রাণ তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ

        ৭১ বছর বয়সী হাইকার সান গ্যাব্রিয়েল পাহাড়ে নিখোঁজ

        লোমা লিন্ডা হাসপাতালে 'সোয়াটিং কল' এ কর্তৃপক্ষের সায়

        ক্যালিফোর্নিয়ার সৈকতে সি লায়ন হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্তের সন্ধানে পুলিশ

        কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুক্রবার শপথ নিবেন কার্নি

        শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা

        আমি মনে করি, আমার জায়গায় আমি এক নম্বর: বাপ্পারাজ

        মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিশেষ সম্মান জানালো আইসিসি

        যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াও চাপে

বেকারত্ব দূরীকরন না করলে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ অসম্ভব

বেকারত্ব দূরীকরন না করলে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ অসম্ভব

পূর্বে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গুরুজনদের মুখে প্রায়ই একটি কথা শুনা যাইত। 'লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়ায় চড়ে সে'। অর্থাৎ, যেই ব্যক্তি ভালোভাবে পড়াশুনা করিবে, সেই ব্যক্তি একসময় ভালো চাকুরিবাকরি করিবে, অধিক টাকা আয় করিবে। অভিভাবকদের মুখেও ছিল একই কথা। সেই স্বপ্ন লইয়া অনেকেই বিদ্যালয় ও কলেজের গণ্ডি পার করিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। ইহার পর দিনরাত্রি পরিশ্রম করিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হইতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে; কিন্তু ইহার পরই তাহাদের স্বপ্ন ধাক্কা খায় কঠিন এক বাস্তবতায়। মাসের পর মাস, এমনকি বৎসরের পর বৎসর চাকুরির জন্য চেষ্টা করিয়াও তাহাদের অনেকে সফলতার মুখ দেখিতে পারে না। হতাশ হইয়া কেহ কেহ ভাবিতে শুরু করে, 'তাহাদের পিতা-মাতা কিংবা গুরুজনরা কি তাহা হইলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়াছিলেন?' ইহা বর্তমানে বাংলাদেশের লক্ষাধিক উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীর জীবনের এক বাস্তব চিত্র।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বেকারত্বের হার গত এক দশকে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। মোট বেকারের অধিকাংশই আবার উচ্চশিক্ষিত। ২০১০ সালে যেইখানে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাশ করা বেকারের হার ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০২৩ সালে আসিয়া তাহা বাড়িয়া দাঁড়াইয়াছে ৩১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এই ভয়াবহ চিত্র কেবল সংখ্যার হিসাবে সীমাবদ্ধ নহে, ইহা সমাজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্যের জন্যও বড় হুমকি হইয়া দাঁড়াইয়াছে। চাকুরি না পাইয়া অসংখ্য যুবক হতাশ হইয়া মাদক গ্রহণের পাশাপাশি নানা অপকর্মে জড়াইয়া পড়িতেছে।

টাকার অভাবে তাহাদের কেহ কেহ ছিনতাই-চাঁদাবাজি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চশিক্ষিত বেকারত্বের পিছনে মূলত তিনটি প্রধান কারণ রহিয়াছে। প্রথমত, শিক্ষা ও চাকুরির বাজারের মধ্যে বিশাল ব্যবধান। বর্তমান সময়ের চাকুরির বাজারে যেই দক্ষতা ও জ্ঞান প্রয়োজন, তাহা দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে নাই। ফলে শিক্ষার্থীরা যখন চাকুরির বাজারে প্রবেশ করে, তখন তাহারা প্রাসঙ্গিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাবে চাকুরির প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।

দ্বিতীয়ত, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার অভাব। উন্নত বিশ্বে যেইখানে শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল অংশ (প্রায় ৭০ শতাংশ) কারিগরি শিক্ষায় যুক্ত, সেইখানে বাংলাদেশে এই হার ৯ শতাংশেরও কম। ফলে দেশের চাকুরির বাজারে দক্ষ কর্মীর সংকট সৃষ্টি হয়, অথচ ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা দিনদিন বাড়িয়া চলিতেছে। তৃতীয়ত, শিক্ষার মান ও মানসম্মত কর্মসংস্থানের অভাব। বর্তমানে দেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার মান লইয়া প্রশ্ন রহিয়াছে। ইহা ছাড়াও নতুন চাকুরির সুযোগও যথেষ্ট হারে তৈরি হইতেছে না। যেই হারে প্রতি বৎসর উচ্চশিক্ষিত তরুণ কর্মবাজারে যুক্ত হইতেছেন, সেই তুলনায় চাকুরির সংখ্যা খুবই সীমিত। ফলে শিক্ষিত তরুণরা যোগ্যতার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ চাকুরি পাইতেছেন না এবং দীর্ঘদিন বেকার থাকিয়া হতাশায় ভুগিতেছেন।

এটাই সত্য যে, বেকারত্ব সমস্যার সমাধান একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে বেকারত্বের হার কমানো ও নূতন করিয়া উচ্চশিক্ষিত বেকারত্ব রোধে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ইহার জন্য প্রথম কাজ হইবে, শিক্ষা ও চাকুরির বাজারের মধ্যে সমন্বয় আনয়ন। পাঠ্যক্রমকে যুগোপযোগী করিতে হইবে এবং চাকুরির বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নূতন নূতন বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াইতে হইবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উচিত ইন্ডাস্ট্রির সহিত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করা, যাহাতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করিতে পারে।

তার পাশাপাশি স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা দরকার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বৎসরের অনার্স কোর্স তিন বৎসরে নামাইয়া আনিয়া চতুর্থ বৎসরে ডিপ্লোমা ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ ইতিমধ্যে লওয়া হইয়াছে। ইহা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করিতে পারিলে বেকারত্বের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

বর্তমান বাস্তবতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিতেছে যে, শুধু ডিগ্রি অর্জন করিলেই ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয় না। বেকারত্বের সংকট কাটাইয়া তরুণদের ভবিষ্যৎ সুন্দর করিবার জন্য আমাদের কারিগরি শিক্ষার প্রসার, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ও কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করিতে হইবে। উচ্চশিক্ষিত বেকারদের সমস্যার সমাধান ছাড়া নূতন বাংলাদেশ কীভাবে নির্মিত হইবে?


এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত