আপডেট :

        আহত বিড়াল ফেলে দেওয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার

        সৎমায়ের হাতে ২০ বছর বন্দী যুবক!

        পিকো রিভেরায় টর্নেডোর আঘাত, ভেঙে পড়েছে গাছ ও বিদ্যুৎ লাইন

        টাকা পরিশোধ না করলে ন্যাটোর পাশে থাকব না বললেন ট্রাম্প

        এলডিসি থেকে উত্তরণ আগামী বছরই

        ‘লজ্জিত, ক্ষমার অযোগ্য আমরা’

        পরিচয় চুরি ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তি

        শক্তিশালী ঝড়ের আঘাতে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ে তুষারপাত, বৃহস্পতিবারের পূর্বাভাস

        কুয়েতে বন্দি ছয় মার্কিন নাগরিক মুক্ত, যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলেন

        আজ বিকেলে ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব

        দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ‘ব্লাড ওয়ার্ম মুন’ পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দেখার সেরা সময়

        প্রতারণার মাধ্যমে এফইএমএ’র ত্রাণ তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ

        ৭১ বছর বয়সী হাইকার সান গ্যাব্রিয়েল পাহাড়ে নিখোঁজ

        লোমা লিন্ডা হাসপাতালে 'সোয়াটিং কল' এ কর্তৃপক্ষের সায়

        ক্যালিফোর্নিয়ার সৈকতে সি লায়ন হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্তের সন্ধানে পুলিশ

        কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুক্রবার শপথ নিবেন কার্নি

        শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা

        আমি মনে করি, আমার জায়গায় আমি এক নম্বর: বাপ্পারাজ

        মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিশেষ সম্মান জানালো আইসিসি

        যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াও চাপে

স্থবির হয়ে পড়তে শুরু করেছে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম

স্থবির হয়ে পড়তে শুরু করেছে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রম

সামলে উঠতে পারছেন না সিলেটের প্রশাসন। চাপ নিতেও পারছেন না শীর্ষে বসা কর্মকর্তারাও। অস্থির সময়ে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে অস্থিরতা। এই অবস্থার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতাও। যদিও প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেটি মানতে নারাজ।

গতবছরের ৫ই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সিলেটের প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল করা হয়। এই রদবদলের আওতায় জেলা প্রশাসন সহ সব ক্ষেত্রেই নতুন কর্মকর্তারা পদে আসীন হয়েছেন। কবে তাদের মেয়াদও ছয় মাস হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশাসনে এখনো পুরোপুরি গতি ফিরে আসেনি।

প্রশাসন পুরোপুরি সক্রিয় না হওয়ার কারণে সিলেটের অনেক ক্ষতিই হয়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাটে। অভ্যুত্থানের পর থেকে বিশেষ করে তিনটি পাথর কোয়ারি থেকে হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়ে গেছে। এখনো সেই লুটপাটের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না সিলেটের প্রশাসন। নতুন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহমুদ মুরাদ প্রায় পাঁচ মাস ধরে সিলেটে রয়েছেন। এক্ষেত্রে তার কর্যকর ভূমিকাও পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ৫ই আগস্টের পর বালু ও পাথর লুটপাটের ক্ষতি নির্ণয় করতে আগের জেলা প্রশাসকের তরফ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ২০ থেকে ২৫ দিনে জাফলং, ভোলাগঞ্জ ও বিছনাকান্দি কোয়ারি থেকে দেড়শ’ কোটি টাকার পাথর লুটপাট হয়েছে।

ছয় মাসের লুটপাটে ক্ষয়ক্ষতি দাঁড়াবে হাজার কোটি টাকা। পাথর ও বালু লুটপাটে সীমান্তবর্তী এলাকার কোয়ারিগুলোর মানচিত্রই বদলে যাচ্ছে। ঢাকা-সিলেট ৬ লেন মহাসড়কের কাজের বিলম্বের ক্ষেত্রে সবসময়ই ভূমি অধিগ্রহণের দেরির কথা বলে আসছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। এখনো তারা সিলেট থেকে শেরপুর অংশের সব ভূমি বুঝে পাননি। আগের সরকারের মন্ত্রী, এমপিরা কাজ বিলম্ব হওয়ার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করেছিলেন। বর্তমানেও চলছে একই পরিস্থিতি। এখনো নানা জটিলতায় অধিগ্রহণ করা সব ভূমি প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। আগের যে ধীরগতি ছিল তার চেয়ে এখন আরও গতি কমেছে বলে জানিয়েছেন অধিগ্রহণ করা ভূমির মালিকরা। দিনের পর দিন প্রশাসনে ঘুরলেও ভূমি অধিগ্রহণের কাজে গতি আসছে না। গতিহীনতার কারণে এখনো জেলা প্রশাসন থেকে নতুন কারাগার ও মেরিন একাডেমির ভূমির মালিকরা টাকা পাচ্ছেন না।

সিলেটের জেলা প্রশাসনের সেবাভোগী অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জানা গেছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রশাসনে ফাইল নড়ে না। এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ফাইল যেতে ১০-১২ দিনও সময় লেগে যায়। এরপর নির্দেশ আসে নতুন করে ‘রিভাইস’ করে দেয়ার জন্য। এটি এখন সিলেট জেলা প্রশাসনের নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনের গতিহীনতার বিষয় নিয়ে কথা বলেন। উনারা জানান, অভ্যুত্থানের পর প্রশাসনের নাগরিক সুবিধা অনেক কমে গেছে। এ কারণে সেবাভোগী মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। এর মধ্যে অন্যতম একটি ডিজিটাল সেন্টার। এই সেন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই চিত্র ফুটে ওঠে। সহযোগিতা না করে নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে মানুষজনকে।

মঙ্গলবার সেবা নিতে আসা লোকজন জানায়, ডিজিটালে সেবা দ্রুত পাওয়ার কথা। কিন্তু ম্যানুয়ালের চেয়ে আরও বেশি গতিহীন ডিজিটাল সেবা। কর্মকর্তা, কর্মচারীরা জানান, বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সঙ্গে টিমওয়ার্ক গড়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক সুবর্ণা সরকার। নতুন জেলা প্রশাসক সিলেটে আসার আগে তিনি ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

সিলেটে চাকরির ক্ষেত্রে পুরাতন হওয়ায় জেলা প্রশাসক তার পরামর্শের ওপর বেশি নির্ভরশীল। অনেক পরামর্শই জেলা প্রশাসক এককভাবে নিতে পারেন না। প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বদলি করা হয়েছিল। অদৃশ্য কারণে তাদের অনেকেই আবার আগের স্থানে ফিরে এসেছেন। এছাড়া উপজেলায় ছয় মাস বদলির মেয়াদ পূর্ণ হয়নি এরকম অনেককেই ফের বদলি করা হয়েছে। এ নিয়ে অসন্তোষও বিরাজ করছে ভেতরে।

স্থানীয় সরকার বিভাগে নাগরিক সেবার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- জন্ম মৃত্যু ও ওয়ারিশান সনদ প্রদান করা। সেটি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাদের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু দিনের পর দিন কেটে গেলেও ওই দপ্তর থেকে আসে না জন্ম-মৃত্যুর সনদ। নানা কারণে সেগুলো আটকে রাখা হয়।

ডিসি সম্মেলনে ঢাকায় থাকায় কথা হয় সিলেট জেলা প্রশাসকের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সুর্বণা সরকারের সঙ্গে। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, বালু পাথর লুট বন্ধ করতে প্রতিদিনই অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান, মামলা ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের কোনো গাফিলতি নেই।

এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। তবে সিংহভাগ কাজই শেষ করা হয়েছে। বাকিটুকুও খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

প্রশাসনের ভেতরে কাজের এই গতিহীনতার জন্য আস্থাহীনতাকে দায়ী করে সিলেটে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অভ্যুত্থানের পর প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখনো আস্থাহীনতায় রয়েছেন। তারা নার্ভাস। তাদের মধ্যেও যে ভয় কাজ করছে সেটি কাটাতে হবে। এজন্য সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কাজ করতে হবে।

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিক বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট ইইউ শহীদুল ইসলাম শাহীনের মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বালু পাথর লুট বন্ধ সহ সবক্ষেত্রে প্রশাসনকে গতি ফেরাতে কাজ করতে হবে। এজন্য স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বদলি ও পদায়ন করলে আস্থার জায়গা ফিরে আসবে বলে মনে করেন তিনি।


এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

 

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত