লস এঞ্জেলেস কাউন্টির বাসিন্দাদের জন্য কর ফাইলিংয়ের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে
তরমুজের বাম্পার ফলন জৈন্তাপুরে
শীতের মাঝামাঝি সময় থেকে জৈন্তাপুরের বিভিন্ন হাওড় ও পাহাড়ি নদীর তীরবর্তী এলাকায় চাষ হওয়া তরমুজ বাজারজাতের পাশাপাশি ট্রাকযোগে যাচ্ছে ঢাকা সহ সারাদেশে। সরজমিনে গিয়ে দেখা মিলে জৈন্তাপুর উপজেলার সারী নদীর তীরবর্তী সিলেট তামাবিল মহাসড়কে সারিঘাট দক্ষিণ বাজার এলাকায় রাস্তার দুই পাশে বিশাল তরমুজের পশরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যাবসায়ীরা।
কোন কোন সময় পিকনিক আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীদের গাড়ী থামিয়ে তরমুজ কিনছে। আবার কোন কোন সময় বিশাল ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান নিয়ে ব্যাপারীরা এসে লোড করে নিয়ে যাচ্ছেন তরমুজ ঢাকা,কুমিল্লা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলার পাইকারী বাজারে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। এ বছরের পুরো উপজেলায় তরমুজ উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছিলো ৩ হাজার ৭ শত ৭০ মেট্রিকটন। যা ইতিমধ্যে অর্জিত হওয়ার পথে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আরো জানানো হয়, পুরো উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৬৫০ জন কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন। তার মধ্য ১১০ জন কৃষককে দেয়া হয়েছে প্রদর্শনী। পাশাপাশি প্রদর্শনী প্রাপ্ত কৃষকের মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে বীজ,সার ও বালাইনাশক।
তবে সবচেয়ে আশার কথা হলো, তিন চার বছর পূর্বে জৈন্তাপুর উপজেলায় বছরের পর বছর অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকা বিন্নাউরা জমিগুলো তরমুর চাষ করে ব্যপক সফলতা এসেছিলো। সে সময় উপজেলার ২০ হেক্টর অনাবাদি বিন্নাউরা জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়। চলতি মৌসুমে আরো ৫ হেক্টর অতিরিক্ত অনাবাদি বিন্নাউরা জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আরো জানানো হয়, চলতি মৌসুমে পুরো উপজেলায় বাংলালিংক, আনারকলি ও গ্লোরী জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী চাষ হয় নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নে। এ মৌসুমে নিজপাট ইউনিয়নে ৪০ হেক্টর ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নে ৫৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য ইউনিয়নের মধ্য চারিকাঠায় ১৫ হেক্টর, দরবস্ত ইউনিয়নে ১৫ হেক্টর, ফতেহপুর ইউনিয়নে ৩ হেক্টর ও চিকনাগোল ইউনিয়নে ২ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করা হয়।
২ নং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সালমান আহমেদ জানান, চলতি মৌসুমে তিনি চাতলারপাড় এলাকায় অগ্রহায়ণ মাসে ১২ বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেন। এতে তার মোট উৎপাদন খরছ ২ লক্ষ টাকার মত। মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ে তরমুজ তিনি বিক্রি শুরু করেন। এখন পর্যন্ত ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার তরমুজ তিনি বিক্রি করেছেন। মৌসুমের শেষে আরো ৪ লক্ষ টাকার ফসল বিক্রির আশা করেন তিনি। তবে লাভের পাশাপাশি কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন তিনি। সেটা হলো এই অঞ্চল পানি সেচের জন্য জ্বালানি খরচে কিছু বাড়তি টাকা ব্যায় হয়। তাছাড়া নদী ভাঙন কবলিত এলাকা হওয়ায় তরমুজ পরিবহনে অনেক সমস্যা পোহাতে হয়।তিনি আরো বলেন গত তিন মাসে দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে তার মাঠে পাঁচজন কৃষক কাজ করে থাকেন। তাদের দৈনিক মজুরী ৭০০ টাকা।
একই ইউনিয়নে ৮ নং ওয়ার্ড ভিত্রিখেল এলাকার কৃষক নুর উদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তাকে তরমুজের উপর প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। তিনি এ বছর সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে তরমুজের আবাদ করেন। এতে তার ব্যায় ১ লক্ষ ৪ হাজার টাকার মত। এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার তরমুজ। মৌসুমের শেষে আরো দুই লক্ষ টাকার তরমুজ তিনি বিক্রির আশাবাদী। সেই সাথে ভিত্রিখেল এলাকায় তরমুজ চাষে কিছু সমস্যার কথা তিনি তুলো ধরেন। সেটা হলো সেচ ব্যবস্হা। চলতি মৌসুমে সেচের সুবিধা না থাকার কারণে ভার দিয়ে বহন করে পানি এনে তরমুজ গাছে দিতে হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন ১৫০ ফুট হেঁটে ভার বহন করে পানি আনতে হয় কৃষকদের। তাদের দাবী অত্র এলাকার সরকারি খরছে একটি ডিপটিউবয়েল স্থাপন করা অথবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ভর্তুকি দিয়ে একটি সেচপাম্প সরবরাহের আহবান জানান তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জৈন্তাপুর থেকে ক্লাইমেট এগ্রিকালচার এন্ড ওয়াটার ম্যনেজম্যান্ট প্রকল্প'র বাস্তবায়নে কৃষি ও কৃষক পর্যায়ে ভর্তুকি দিয়ে বীজ,সার ও বালাইনাশক সরবরাহ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান সহ ফসলের মাঠ তদরকিতে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত ফসলের মাঠ পরিদর্শন করে থাকেন।
দীর্ঘদিন যাবৎ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অনাবাদি বিন্নাউরা ২৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করে সফলতা অর্জিত হয়েছে। ভবিষ্যতে উপজেলার অনাবাদি বিন্নাউরা জমিগুলোকে চাষাবাদের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন