আপডেট :

        ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকিতে কাঁপছে ভারত

        আধ্যাত্মিক নেতা আগা খানের মৃত্যু

        গাজার দখল নিতে চান ট্রাম্প

        যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের জবাব দিতে চীনের ৫ পদক্ষেপ

        ‘সিরিয়াস গার্লফ্রেন্ড’ পলাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত বিল গেটস

        বাংলায় রায় হাইকোর্ট এর

        গাজীপুরে বেক্সিমকোর কারখানা বন্ধ ঘোষণা

        নির্বাচনের ছাড়া এই মুহূর্তে বিএনপির কোনো রাজনীতি নেই

        হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় আজ

        আসছে নতুন দল: উপদেষ্টা নাহিদ

        ঢাকায় এসে নিখোঁজ হওয়া সুবাকে দেখা গেল ক্যামেরায়

        ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ

        ইমিগ্রেন্ট ছাড়া একদিন: লস এঞ্জেলেসের প্রতিবাদ রাতেও অব্যাহত

        ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ

        মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যে শুল্ক আরোপ স্থগিত, চীনের সঙ্গেও আলোচনা হবে

        যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে পাল্টা শুল্ক চীনের

        নিউইয়র্কে বাড়ির সামনে বাংলাদেশিকে গুলি

        হাসিনা-রেহানাদের ৪ বাগানবাড়ি, আছে ডুপ্লেক্স ভবনও

        বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তার লকার ফ্রিজ করার নির্দেশ

        এবার ইউরোপে শুল্ক আরোপের হুমকি

তেভাগা কৃষকের আন্দোলন

তেভাগা কৃষকের আন্দোলন

প্রাচীনকাল থেকেই উপমহাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের সমৃদ্ধির পেছনে কৃষকদের অবদান থাকলেও তাদের সমৃদ্ধি কখনোই হয়নি। উল্টো যুগ যুগ ধরে সবচেয়ে বেশি নিপীড়ন ও শোষণের শিকার হয়েছেন। বছরের পর বছর এভাবে মাত্রাতিরিক্ত শোষণ-নিপীড়নে এক সময় শোষিত বর্গাচাষিরা আন্দোলনের ডাক দেন। ভূমিহীন কৃষকদের দাবি ছিল, উৎপাদিত ফসলের তিন ভাগের এক ভাগ পাবেন জমির মালিক আর দুই ভাগ পাবেন কৃষক। তিন ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ তেভাগা থেকেই এই আন্দোলনের নাম হয় তেভাগা আন্দোলন। মূলত সেটি ছিল শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার বিপ্লব।

বঙ্গদেশে এক সময় সব ভূমির মালিক ছিলেন কৃষকরাই। বিভিন্ন রাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা জমিদারদের কেবল তাঁরা রাজস্ব দিতেন। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস প্রথমবারের মতো পাঁচশালা এবং দুই বছর মেয়াদি ভূমি ইজারা পদ্ধতি চালু করেন। এর হাত ধরে ১৭৯৩ সালে প্রবর্তিত হয় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা। তাতে জমির মালিকানা চলে যায় জমিদার বা ভূস্বামীর হাতে। কৃষক হন ভূমিহীন। তাঁরা জমি বর্গা চাষ করে জীবনযাপন করতেন। কিন্তু অন্যের জমি চাষ করে কৃষক বা বর্গাচাষিরা উৎপন্ন ফসলের মাত্র অর্ধেক বা আরও অনেক কম পেতেন। অথচ ফসল ফলানোর জন্য বীজ থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের আর্থিক ও শারীরিক শ্রম দিতে হতো কৃষকদের।

এর মধ্যে ১৯৩৬ সালে সোচ্চার কৃষকদের নিয়ে গঠিত হয় 'নিখিল ভারত কৃষক সভা'। তাদের নীতি ছিল, 'লাঙল যার জমি তার'। বাংলার ভূমি ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্দেশ্যে ১৯৪০ সালে ফজলুল হকের মন্ত্রিসভার প্রস্তাব করে 'ফ্লাউড কমিশন'। জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ, কৃষকদের জমির মালিকানা দেওয়া এবং বর্গচাষের ক্ষেত্রে উৎপাদিত ফসলের তিন ভাগের দু'ভাগ মালিকানা চাষিদের দিতে সুপারিশ করে সেই কমিশন। ১৯৪৬ সালে বাংলার প্রাদেশিক কৃষক সভা ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সূচনা হয় তাদের ন্যায্য হিসাব বুঝে নেওয়ার তেভাগা আন্দোলন। পরে সেটি পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গে এমন প্রভাব বিস্তার করেছিল, কৃষকরা সেসব অঞ্চলকে তেভাগা এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেন। স্থানীয়ভাবে এলাকার শাসনের জন্য গঠন করা হয়েছিল তেভাগা কমিটি।

দিনাজপুর জেলার তৎকালীন ঠাকুরগাঁও মহকুমা ছিল তেভাগা আন্দোলনের মূল সূতিকাগার। দীর্ঘ ৪৬ বছরের দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এড়িয়ে এ আন্দোলনে হিন্দু-মুসলমান সমানভাবে অংশ নেয়। নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল তেভাগার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন হাজী মুহম্মদ দানেশ, ইলা মিত্র, অজিত বোস, বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায়, কাঁসারি হালদার, সুশীল সেন, নূর জালাল, গণেশ দাস, কৃষ্ণবিনোদ রায়, ভূপাল পাণ্ডা, রূপনারায়ণ রায়, ড. গণেন্দ্রনাথ সরকার, কালী সরকার, শিবরাম মাঝি প্রমুখ।

আন্দোলনের প্রথমদিকে অবশ্য জমিদার শ্রেণি পুলিশ, লাঠিয়াল বাহিনী, মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে দমনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু তাদের হার মানতে হয় নিপীড়িত মানুষের ন্যায্য দাবির কাছে। আন্দোলনের চাপে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১৯৪৭ সালে ২২ জানুয়ারি সরকার বিধানসভায় 'বঙ্গীয় বর্গাদার সাময়িক নিয়ন্ত্রণ বিল'-১৯৪৭ উত্থাপন করে। জমির মালিকরা তেভাগা আন্দোলনের কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে নেন এবং তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করেন। বর্গাচাষিকে স্বেচ্ছায় তেভাগা দেয় এবং খাজনার নামে বলপূর্বক অর্থ আদায় বন্ধ বা সীমিত করা হয়। ১৯৫০ সালের 'জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০' বিলের মধ্য দিয়ে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ঘটে। বিনয় চৌধুরীর নেতৃত্বে ২.৪ মিলিয়ন উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীন ও দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

 এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত