আপডেট :

        আহত বিড়াল ফেলে দেওয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার

        সৎমায়ের হাতে ২০ বছর বন্দী যুবক!

        পিকো রিভেরায় টর্নেডোর আঘাত, ভেঙে পড়েছে গাছ ও বিদ্যুৎ লাইন

        টাকা পরিশোধ না করলে ন্যাটোর পাশে থাকব না বললেন ট্রাম্প

        এলডিসি থেকে উত্তরণ আগামী বছরই

        ‘লজ্জিত, ক্ষমার অযোগ্য আমরা’

        পরিচয় চুরি ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তি

        শক্তিশালী ঝড়ের আঘাতে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ে তুষারপাত, বৃহস্পতিবারের পূর্বাভাস

        কুয়েতে বন্দি ছয় মার্কিন নাগরিক মুক্ত, যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলেন

        আজ বিকেলে ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব

        দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ‘ব্লাড ওয়ার্ম মুন’ পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দেখার সেরা সময়

        প্রতারণার মাধ্যমে এফইএমএ’র ত্রাণ তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ

        ৭১ বছর বয়সী হাইকার সান গ্যাব্রিয়েল পাহাড়ে নিখোঁজ

        লোমা লিন্ডা হাসপাতালে 'সোয়াটিং কল' এ কর্তৃপক্ষের সায়

        ক্যালিফোর্নিয়ার সৈকতে সি লায়ন হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্তের সন্ধানে পুলিশ

        কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুক্রবার শপথ নিবেন কার্নি

        শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা

        আমি মনে করি, আমার জায়গায় আমি এক নম্বর: বাপ্পারাজ

        মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিশেষ সম্মান জানালো আইসিসি

        যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াও চাপে

বাড়ির আঙ্গিনায় অন্যরকম জাদুঘর

বাড়ির আঙ্গিনায় অন্যরকম জাদুঘর

একদিকের দেয়ালে টাঙানো শতবর্ষী পুরানো পত্রিকা। পাশেই বিখ্যাত লেখক ও কবিদের বই, পুরোনো ম্যাগাজিন, ছবিসহ জীবনী। সঙ্গে আছে দুর্লভ সব চিঠিপত্র।


এটি সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের মনোমুগ্ধকর সংগ্রহশালার চিত্র নয়। পুরোপুরি ব্যক্তিগত অর্থায়নে এই জাদুঘরটি গড়ে তুলেছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার স্কুলশিক্ষক  তৌহিদ-উল ইসলাম । নামকরণের পর থেকে 'বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘর' নামেই এটি পরিচিতি পেয়েছে। জাদুঘরের পাঁচটি গ্যালারিতে রয়েছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের দুই থেকে আড়াই শতাধিক বিখ্যাত কবি ও লেখকের তথ্য সম্বলিত ছবি। বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘর ছাড়াও এই স্কুলশিক্ষক নিজের জমিতে গড়ে তুলেছেন সৈয়দ শামসুল হক কালচারাল ক্লাব ও গীতিকার তৌহিদ-উল ইসলাম পাঠাগার।

নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় প্রায় ১০ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তোলা  জাদুঘরটিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে মোহাম্মদ আকরাম খাঁ সম্পাদিত ১৯৩৬ সালের মাসিক 'মোহাম্মদী' পত্রিকা, কালীশ মুখোপাধ্যায়ের ১৯৪৫ সালের 'রূপ-মঞ্চ' এবং শ্রী দিলীপ সেন গুপ্ত সম্পাদিত ১৯৫৫ সালের 'সচিত্র ভারতী' পত্রিকা, ১৯৬০ সালের মার্চ সংখ্যা মাসিক 'মৃদঙ্গ' ক্ষিতীশ সরকার সম্পাদিত ১৯৬১ সালের 'জলসা' পত্রিকা, আবু জাফর সম্পাদিত ১৯৬৩ সালের 'সন্দেশ' এবং গাজী শাহাবুদ্দিন আহমদ সম্পাদিত ১৯৬৮ সালের 'সচিত্র সন্ধানী'। এমনকি ১৯৭০ সালের কবীর চৌধুরী সম্পাদিত বাংলা একাডেমি পত্রিকা সংরক্ষণ করা হয়েছে এ জাদুঘরে।
 

জাদুঘরে গেলে দেখা মিলবে সুবলচন্দ্র মিত্র সম্পাদিত ১০০ বছরের পুরনো 'সরল বাঙ্গালা অভিধান'। এ ছাড়াও আছে প্রায় একশ বছর আগে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি বই। এখানে রয়েছে ১৫০ বছর আগে বঙ্কিম চন্দ্র সম্পাদিত পত্রিকা 'বঙ্গদর্শন' ১১০ বছর আগের প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত 'সবুজপত্র' কিংবা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সাপ্তাহিক 'হক-কথা'। দেশের প্রাচীনতম দৈনিক পত্রিকার পাশাপাশি বিভিন্ন অভিধান এবং প্রাচীনতম বই পুস্তকও সংরক্ষিত আছে বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘরে।

জানা গেছে, তৌহিদ-উল ইসলাম  লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি গীতিকার হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে তার। নিয়মিত লিখেন ভাওয়াইয়া ও আধুনিক গান। বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির তালিকাভুক্ত গীতিকারদের মধ্যে রয়েছে তার নাম।

মূলত ২০২২ সালে 'প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননার’ সঙ্গে পাওয়া দুই লাখ টাকায় শুরু করেন বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘরের নির্মাণকাজ। নিজের জমানো আরও কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে গড়ে তোলেন মনোমুগ্ধকর এই সংগ্রহশালা।

এর আগে নিজ খরচে ২০১১ সালে গীতিকার তৌহিদ-উল ইসলাম পাঠাগার ও ২০২১ সালে সৈয়দ শামসুল হক সাংস্কৃতিক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। পাঠাগারে রয়েছে অন্তত সাড়ে ছয় হাজার বই ও পত্র-পত্রিকা। ব্যক্তি উদ্যোগে ২০২১ সাল থেকে তিনি চালু করেছেন সৈয়দ শামসুল হক শিশুসাহিত্য পুরস্কার। পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রতিবছর গুণীজনদের সংববর্ধনা দেওয়া হয়।

লালমনিরহাট থেকে আসা দর্শনার্থী বিশিষ্ট সাংবাদিক এস দিলীপ রায় ও সাংস্কৃতিক কর্মী মুহিন সরকার বলেন, ' একেবারেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘর দেখে আমরা মুগ্ধ। গ্রাম পর্যায়ের এতো সুন্দর জাদুঘর কল্পনা করা যায় না। এখানে এসে আমরা বাংলা সাহিত্যের ব্যাপারে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। জাদুঘরটি ঘুরে দেখলে অনেক পুরনো ইতিহাস জানা যাবে।'

স্থানীয় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ' জাদুঘরে পুরাতন দুর্লভ পত্র-পত্রিকার মূল কপি সংরক্ষিত আছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে এ জাদুঘরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। কালচারাল ক্লাবে গ্রামের লোকজন দেশীয় কালচার চর্চা করার সুযোগ পাচ্ছেন। জাদুঘর, পাঠাগার ও কালচারাল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন তৌহিদ-উল ইসলাম, যা সত্যিই অনুকরণীয়।'

তৌহিদ-উল ইসলাম বলেন, নিজের উপার্জনের অর্ধেক টাকা জাদুঘর, পাঠাগার ও কালচারাল ক্লাবের পেছনে ব্যয় হয়েছে। দুর্লভ লেখা ও পত্রিকা সংগ্রহ করতে টাকা খরচ করতে হয়েছে। আমার গড়ে তোলা জাদুঘর, পাঠাগার ও কালচারাল ক্লাব যদি জাতি গঠনে ভূমিকা রাখে এটাই হবে আমার পরম প্রাপ্তি।

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত