আর্কাডিয়ায় বাড়িতে অনুপ্রবেশকারীর গুলিতে ৬১ বছর বয়সী পিতার মৃত্যু; সন্দেহভাজন পলাতক
বিজয় দিবসে বিএনপি-জামায়াতের বর্ণাঢ্য আয়োজন
গেলো বছরও বেশ ঘটা করে দেশব্যাপী বিজয় দিবসের উৎসব পালন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দেশের প্রতিটি অলিতে-গলিতে নামে বেনামে পালিত হয়েছে নানা উৎসব-আয়োজন। কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলে চলতি বছর দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটির তেমন কোন আয়োজন চোখে পড়েনি। যা দু-একটা ঝটিকা মিছিল বা আয়োজন হয়েছে বলে প্রচার হচ্ছে তার অনেকগুলোই আগের বছেরের আয়োজন। আবার কিছুকিছু স্থানে ছোট পরিসরে আয়োজন হলেও ছিলো লুকোচুরিতে ভরা। তবে দেশের বাইরের বেশ কয়েকটি দেশে বিজয়দিবসের উৎসব পালন করেছে রাজনৈতিক দলটির নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার পর দলটি এবার ভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিজয় দিবস উদযাপন করেছে, যার জন্য দলটির কৃতকর্মকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
টুঙ্গিপাড়ায় নীরবতা
প্রতিবছর বিজয় দিবসে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এবার সেই চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। সমাধিস্থল ছিল প্রায় জনশূন্য। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এই প্রথম বিজয় দিবসে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি।
টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খুরশিদ আলম জানান, সমাধিস্থলে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচির খবর আমাদের কাছে নেই। স্থানীয় বাসিন্দা রহিজ মোল্লা বলেন, গত ১৬ বছর ধরে এদিনে সমাধিস্থল জনস্রোতে মুখর থাকত। এবার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় নেই বলে কেউ আসেনি।
দেশে নিস্ক্রিয় আয়োজন, প্রবাসে সক্রিয়তা
গত দেড় দশকে বিজয় দিবসে আওয়ামী লীগের নানা আয়োজন ছিল সাধারণ চিত্র। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীরা বিজয় শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করতেন। ঢাকার রাজপথে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাজানো এবং বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ছিল নিয়মিত চিত্র।
তবে এবছর সেই আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন অনুপস্থিত ছিল। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীদের তৎপরতা তেমনভাবে চোখে পড়েনি। দলীয় ফেসবুক পেজে বিজয় দিবস উপলক্ষে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের বার্তা পোস্ট করা হলেও, মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম ছিল অনেকটাই নিস্তব্ধ।
দেশের অভ্যন্তরে তেমন কোনো কার্যক্রম দেখা না গেলেও, প্রবাসে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শাখা সংগঠন বিজয় দিবস পালন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা র্যালি, আলোচনা সভা এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমনই থাকুক, আমরা প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনে রেখে বিজয় দিবস উদযাপন করেছি।
বিজয় দিবসে বিএনপি-জামায়াতের বর্ণাঢ্য আয়োজন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি তাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী নানা কর্মসূচি পালন করেছে। দলটি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে, যেখানে দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি তারা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানায়। এ ছাড়া, সারাদেশে বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনা সভা, র্যালি এবং শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে একটি কনসার্টও অনুষ্ঠিত হয়, যা ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ শিরোনামে আয়োজন করা হয়। এই কনসার্টে বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশের স্বাধীনতার পক্ষে তাদের বার্তা প্রদান করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য গর্বের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করার শপথ নিলাম। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং জনগণের অধিকার রক্ষার প্রতি তাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিজয় দিবসে জামায়াতে ইসলামী তাদের নিজস্ব কর্মসূচি পালন করেছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যালি এবং সমাবেশের আয়োজন করা হয়। তারা তাদের নেতাদের উপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং ইসলামের আদর্শে দেশ পরিচালনার দাবি জানান। জামায়াতের র্যালি ও সমাবেশে দলের নেতারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নিজেদের রাজনৈতিক দর্শনের সাথে যুক্ত করে বক্তব্য রাখেন। জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থান এবং তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
জামায়াতের নেতারা বিজয় দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে বলেন, আজকের দিনটি আমাদের মুক্তির দিন। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার মাধ্যমে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি।” তারা তাদের রাজনৈতিক অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “দেশে স্বাধীনতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা এবং স্বাধীনতার পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জন্য তারা তাদের অবস্থান জানাতে দ্বিধা বোধ করেন না।
আয়োজনে এমন পরিবর্তন কেন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ বছর বিজয় দিবসে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি কোনো হস্তক্ষেপের ফলাফল নয়, বরং এটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি প্রতিফলন। বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাধীনতার পূর্বে প্রতিষ্ঠিত এই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এখন সংকোচ বোধ করছেন বিজয় দিবসের মতো একটি ঐতিহাসিক দিনের আয়োজন করতে। তাদের মতে, বিগত দেড় দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর আওয়ামী লীগ এবং তার নেতাকর্মীরা শোষণ ও নির্যাতনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষোভের মুখে পড়েছে, যার ফলে তাদের মধ্যে এখন সংকোচ তৈরি হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, দলীয় নেতৃত্ব ও সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পর জনগণের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভ এবং সরকারী কর্তৃত্বের অতিরিক্ত ব্যবহার, এই সবই এখন দলের সংকোচ এবং রাজনৈতিক অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করা অসম্ভব। ক্ষমতার পালাবদল হলেও ইতিহাসের সত্য অস্বীকার করা যাবে না।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবারের বিজয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি নির্বাচনকালীন রূপরেখা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন