ঢাকার বাতাসে সর্বোচ্চ দূষণ, মারাত্মক হুমকিতে জনস্বাস্থ্য
কুয়াশামাখা শীতের মৌসুম এলেই বাতাসের দূষণ প্রাণ সংহারী হয়ে ওঠে। শীতকালে বাতাসের গতি যায় কমে। বিশেষ করে রাতের দিকে। ফলে বাতাসে থাকা দূষিত পদার্থগুলো বায়ুমণ্ডলের কাছাকাছি জমা হয়। দূষণ সরাসরি প্রভাব ফেলে পরিবেশের ওপর। ইতিমধ্যে ধুলায় ভরে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। গত টানা তিন দিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে মেগাসিটি ঢাকা।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে ঢাকার স্কোর ২৬৭; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’। বায়ুদূষণে বৃহস্পতিবার ঢাকার স্কোর ছিল ৩৪১। এ মানকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার বায়ুদূষণের ওয়েবসাইটে এ চিত্র দেখা যায়। বায়ুদূষণে বুধ ও বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্বের ১২৬ দেশের মধ্যে শীর্ষে ছিল।
শুক্রবার ২৬৬ স্কোর নিয়ে বায়ুদূষণে দ্বিতীয় স্থানে ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা। ২৫২ স্কোর নিয়ে পাকিস্তানের লাহোর আছে তৃতীয় এবং ২১৪ স্কোর নিয়ে করাচি চতুর্থ অবস্থানে। আর ১৮৯ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে ভারতের রাজধানী দিল্লি। ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। শুক্রবার ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি।
যখন কণা দূষণের একিউআই মান ৫০ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকে তখন বায়ুর গুণমানকে ‘মাঝারি’ বলে বিবেচনা করা হয়। একিউআই সূচক ১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সময় সাধারণত সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ১৫১ থেকে ২০০-এর মধ্যে হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়। আর সূচক ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। এছাড়া ৩০১ এর বেশি হলে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় জর্জরিত। এর বায়ুর গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে এবং বর্ষাকালে উন্নত হয়।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বায়ুদূষণে কারণে প্রধানত স্ট্রোক, হূদেরাগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর হার বাড়ে। বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে আইকিউএয়ারের পরামর্শ, ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। আরও একটি পরামর্শ, ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী কোনো এলাকায় পরপর তিন দিন তিন ঘণ্টা যদি বায়ুর মানসূচক ৩০০-এর বেশি থাকে, তাহলে ঐ এলাকায় বায়ুদূষণজনিত ‘স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা’ জারি করা হয়। এটা আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা পরিবেশ মন্ত্রণালয় কিংবা উভয়ে মিলে নিতে পারে। এই জরুরি অবস্থার সময়ে, বিশেষ করে স্কুল-কলেজগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা, দূষণকারী শিল্পকারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ, যান চলাচলে কঠোরতা জারি এবং স্বাস্থ্যগত সহায়তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। আরো দুই-এক দিন পরিস্থিতি দেখে আমাদের এখানেও এসব ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। রাজধানীর বায়ুদূষণের প্রধান উত্স যানবাহন ও কলকারখানার দূষিত ধোঁয়া আর ইটভাটা।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন