পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আ ত্ম হ ত্যা করেন মোস্তফা তারেক ইকবাল
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন মোস্তফা তারেক ইকবাল পাটওয়ারী (৪০) নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা। এ ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ৪ সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (২৭ অক্টোবর) রাতে হুমকি ও আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। আদালত আগামী ৩ নভেম্বর তাদের রিমান্ড ও জামিন আবেদনের শুনানি করবেন বলে দিন ধার্য করেন।
জানা গেছে, রোববার দুপুরে রামগঞ্জ পৌর শহরের আঙ্গারপাড়া এলাকায় নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তারেক ইকবাল পাটওয়ারী। তিনি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের রামগঞ্জ শাখায় জুনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারেক ইকবাল পাটওয়ারী লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাঞ্চানগর এলাকার মোস্তফা কামালের ছেলে।
এ ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী শারমিন আক্তার বাদী হয়ে রামগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এতে ইত্তেফাকের প্রতিনিধি জাকির হোসেন মোস্তান, যায় যায় দিনের প্রতিনিধি বেলায়েত হোসেন, সমকালের প্রতিনিধি জাকির হোসেন ও মানবকণ্ঠের প্রতিনিধি শাখায়াত হোসেনকে আসামি করা হয়। রাতেই তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চারজনই পত্রিকাগুলোর রামগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
শারমিন আক্তার জানান, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের রামগঞ্জ শাখার ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তদন্ত চলছে। এ বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকবার তার স্বামীর সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা হয়। সর্বশেষ গতকাল (রোববার) দুপুরে সাংবাদিকেরা আবারও ব্যাংকের ওই শাখায় যান। ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বিবি রাহিমা বেগম ট্রেনিংয়ে থাকায় দায়িত্বে ছিলেন তারেক ইকবাল। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তার কথা-কাটাকাটি হয়। চার সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে আসছিলেন। গতকালও দাবিকৃত টাকার জন্য চাপ দেন তারা। এক পর্যায়ে তাদের চাপ সইতে না পেরে বহুতল ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন। তাদের হুমকির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে আটক হওয়া সাংবাদিকদের পরিবারের দাবি, কিছু দুষ্কৃতকারী ষড়যন্ত্র করে নিহতের স্ত্রীকে ব্যবহার করে মিথ্যে মামলা দায়ের করেছেন। তার আত্মহত্যার পেছনে পারিবারিক কোনো কারণ থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা।
দৈনিক ইত্তেফাকের রামগঞ্জ প্রতিনিধি জাকির হোসেন মোস্তানের স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘ ১৪ বছর এই পেশায় আছেন। তিন সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। কখনও কোনো মানুষের খারাপ চায়নি। তাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি পেশাগত কাজের উদ্দেশ্যে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গিয়েছিল। সেই ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যুর সঙ্গে আমার স্বামীর কোনো যোগসূত্র নেই। আমি আমার স্বামীর নিঃশর্ত মুক্তি চাই।
দৈনিক যায় যায় দিনের প্রতিনিধি বেলায়েত হোসেন বাচ্চুর স্ত্রী রোজিনা আক্তার বলেন, দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তের জন্য আমার স্বামী ঘটনাস্থলে যান। টাকা দাবির বিষয়টি বানোয়াট।
দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি জাকির হোসেন সুমনের স্ত্রী আফরোজা আক্তার জানান, ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার অনিয়মের অনুসন্ধান করার জন্য সাংবাদিকরা ওখানে গেছে। তবে নিহত ব্যক্তির সঙ্গে আমার স্বামীর সাথে কোনো কথাই হয়নি। মোস্তফা তারেক ইকবালের স্ত্রী সাংবাদিকদের হয়রানি করতেই এই মামলা দায়ের করেছে। আমি আমার স্বামীসহ গ্রেপ্তারকৃত চার সাংবাদিকের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
দৈনিক মানবকণ্ঠের প্রতিনিধি শাখায়াত হোসেন জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রেহানা বেগম জানান, আমার স্বামীসহ সাংবাদিকরা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে গেছে দুপুর ১২টায়। এর ৩ ঘন্টা পর বেলা ৩টায় মোস্তফা তারেক ইকবাল আরেকটি নির্মাণাধীন ৫ তলা ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনার সাথে সাংবাদিকদের জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না।
নিহতের এলাকায় খবর নিয়ে জানা যায়, আত্মহত্যাকারী মোস্তফা তারেক আগে থেকেই মাদকাসক্ত ছিলেন। কিছু দিন আগে সে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পর মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিল ।
সাংবাদিকদের আইনজীবী মো. খোরশেদ আলম বলেন, সোমবার বিকালে মামলায় অভিযুক্তদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালতে বিচারক না থাকায় আমাদের জামিন আবেদনের শুনানি হয়নি। মঙ্গলবার আদালত জামিন ও রিমান্ডের আবেদনের শুনানির জন্য সময় (৩ নভেম্বর) ধার্য করে দিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবর আলী বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত কোনো আদেশ দেননি। কোনো কাগজপত্রও আমাদের আদালত থেকে দেয়া হয়নি।
রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, নিহতের স্ত্রী শারমিন আক্তার ঐ চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা দায়ের করলে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন