হিন্দু ছাত্রীদের হিজাব পরতে বাধ্য করার অভিযোগ, ২ শিক্ষক বরখাস্ত
রংপুর শহরের দাসপাড়ায় মোসলেম উদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে হিন্দু ছাত্রীদের হিজাব পরতে বাধ্য করার চেষ্টার অভিযোগে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোফিজুর রহমান ও ধর্মীয় শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ও মোসলেম উদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, মোসলেম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক হিন্দু সম্প্রাদায়ের ছাত্রীদের হিজাব পড়ার কথা বলেছিলেন বা গীতা পাঠের বিষয়ে বিভিন্ন কথা বলেছিলেন। এ নিয়ে স্কুলে হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিলো। তাই এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। তারপর তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সম্প্রতি স্কুলের অ্যাসেম্বলিতে প্রধান শিক্ষক ও ইসলাম ধর্মের শিক্ষক মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দুদেরও হিজাব পড়ে আসার নির্দেশ দেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। এ নিয়ে বুধবার দুপুরে হিন্দু ছাত্রীরা প্রধান শিক্ষকসহ অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের পদত্যাগ ও শাস্তির দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাদের অভিভাবকেরাও উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রেজাউল করিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে বিক্ষোভরত কয়েকজন হিন্দু ছাত্রীকে ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে হিজাব পরতে বাধ্য করার চেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করতে শোনা গেছে।
কয়েকজন ছাত্রীর অভিযোগ, ওই শিক্ষকরা মূর্তি পূজা, হিন্দু ধর্ম নিয়েও নানা কথা বলে। অ্যাসেম্বলিতে কোরআন তেলাওয়াত করা হলেও সময়ের অভাব দেখিয়ে গীতা পাঠ করানো হত না।এ নিয়ে অভিযোগ দেওয়ার পর গীতা পাঠ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার গীতা পাঠ বন্ধ রাখা হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমান।তিনি বলেন, ‘আমার স্কুলে মেয়েদের হিজাব পরা নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে এটি একটি ষড়যন্ত্র। আমরা অ্যাসেম্বলিতে বলেছিলাম, মেয়েরা তোমরা স্কুল ড্রেসের সঙ্গে স্কার্ফ পরে আসবে। আমরা কখনো হিজাব পরার কথা বলিনি।’
তাহলে শিক্ষার্থীরা এ ধরনের অভিযোগ কেন করছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে একটি চাঁদাবাজ মহলের বিরুদ্ধে আমি থানায় মামলা করেছিলাম। তার কারণে এই কুচক্রি মহলটি স্কার্ফকে হিজাব বানিয়ে কোমলমতি স্টুডেন্টদের দিয়ে আমাদের হেনস্তা করার পাঁয়তারা করছে।’
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এ বিষয়ে একটি ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান প্রধান শিক্ষক।
অপরদিকে ইসলাম ধর্মের শিক্ষক মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি ইসলাম ধর্মের ক্লাস নেই। আমি তো হিন্দু ধর্ম নেই না। একজন তার ভাইকে স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ঢুকাতে না পেরে এসব করছেন। তো আল্লাহ আছে, তার বিচার করবে। আর আমার বলার কিছু নেই।’
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন