লস এঞ্জেলেস কাউন্টির বাসিন্দাদের জন্য কর ফাইলিংয়ের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে
নারায়ণগঞ্জে ঝুট সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির হাত বদল
সরকার পরির্বতনের পর নারায়ণগঞ্জে শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন সেক্টরে ঝুট সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির হাত বদল হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থকতে তাদের দলীয় সন্ত্রাসীরা শিল্প-কারখানাগুলোতে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে চাঁদাবাজি করত। তাদের পতনের পর এবার বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে নব্য সন্ত্রাসীরা এসব শিল্প-কারখানাগুলো দখল ও চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ এই অঞ্চলের শিল্প-কারখানার মালিকদের।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বিসিকে প্রায় ৫০০ তৈরি পোশাক ও নিটিং কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার ঝুট কাপড়, সুতার কোন, কার্টুনসহ বিভিন্ন ওয়েস্টেজ পণ্যের ব্যবসা এত দিন নিয়ন্ত্রণ করতেন শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান ও ভাতিজা আজমীর ওসমান। ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের নামে কিছু লোক ঝুটসহ অন্যান্য পণ্য কারখানা থেকে বিনা মূল্যে বা নামমাত্র দামে নিয়ে যেতেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপির নেতাদের নামে কিছু লোক ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তারা মোটরসাইকেল নিয়ে নিয়মিত মহড়াও দিচ্ছেন।
ফতুল্লা বিসিকের এক ব্যবসায়ী জানান, মাসে ১০ থেকে ১৫ লাখ ডলারের রপ্তানি আছে এমন একটি মাঝারি পোশাক কারখানায় ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার ঝুট ব্যবসা হয়। এসব ঝুটের দাম বাজারে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা হলেও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিনামূল্যে দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা কেউ কেউ দিলেও এটা কেবল আনুষ্ঠানিকতা।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা চাঁদাবাজির বিষয়টি ইতোমধ্যে সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের অবহিত করেছি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আমরা দেখছি, কিছু লোক মোটরসাইকেল নিয়ে শিল্পকারখানার সামনে মহড়া দিচ্ছেন।
লোক বদলালেও আগের মতো চাঁদাবাজির খপ্পরে পড়ার আশঙ্কায় বলে উদ্যোক্তারা উদ্বিগ্ন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রূপগঞ্জের একটি বস্ত্রকলে ৩৫ থেকে ৪০ জন তরুণ হানা দেয়। নিজেদের একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিয়ে কারখানার কর্মচারীদের তারা বলেন, এখন থেকে অন্য কারও কাছে কারখানার ঝুট বা ফেলনা উপকরণ বিক্রি করা যাবে না। বিক্রি করতে হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। যোগাযোগের জন্য ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ছয়জন নেতার নাম ও মুঠোফোন নম্বর লেখা একটি কাগজ দিয়ে আসেন তারা। সেই কাগজের থাকা প্রথম নামটি রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবদলের সহসভাপতি মো. খোকন মিয়া।
এ বিষয়ে খোকন মিয়া বলেন, তাদের কর্মীরা বিভিন্ন কারখানায় গিয়েছিলেন। তবে তিনি দাবি করেন, আমরা কোনো চাঁদাবাজি চাই না। অতীতে যেভাবে কারখানার ঝুট বিক্রি হয়েছে, আমরা সেভাবেই সমঝোতার মাধ্যমে কাজটি করতে চাই।
মিলে সুতা উৎপাদনের পর ঝুট হিসেবে তুলা বের হয়। বিদায়ী সরকারের আমলে কারখানা থেকে তুলা বের করলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের গাড়িপ্রতি ১০ হাজার টাকা দিতে হতো বলে জানালেন রূপগঞ্জের এক বস্ত্রকল মালিক। তিনি জানান, সুতা উৎপাদনে ব্যবহৃত তুলার ৭ থেকে ৮ শতাংশ ওয়েস্টেজ হয়। তার মধ্যে ৪ শতাংশ ঝুট হিসেবে বিক্রি করতে হয়।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন ধরনের সরবরাহ ব্যবসার হাতবদল শুরু হয়। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতারা তৈরি পোশাক কারখানা ও বস্ত্রকলের ঝুট ব্যবসা, শ্রমিকদের নাশতা সরবরাহের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পকারখানার ফেলনা উপকরণ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। ক্ষমতার পরিবর্তনের পর তারা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। এই সুযোগে বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সেসব ব্যবসার দখল নিতে মাঠে নেমেছেন।
কয়েকজন শিল্প উদ্যোক্তা বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন কারখানার ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কোথাও কোথাও নিজেদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় তারা নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি। বিএনপির নেতাদের নামে কিছু ব্যবসায়ীর কাছে মোটা অঙ্কের নগদ টাকা চাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আবার গাঁ ঢাকা দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ নামে-বেনামে ফোন করে ঝুটের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হুমকি দিচ্ছেন। তাই রাজনীতির পটপরিবর্তন হলেও চাঁদাবাজি থেকে আদৌ মুক্তি মিলবে কি না, এ নিয়ে শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর কারখানার ফটকে ফটকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন। ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে তৈরি পোশাক কারখানায় এমন ঘটনা বেশি ঘটছে। আবার ব্যবসায়ীদের কাছে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা চাঁদা চাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এসব ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাঁদাবাজি বন্ধ চাই। তার জন্য মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে আমরা সদস্য কারখানাকে সেনাবাহিনীর স্থানীয় টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি। তারাও সহযোগিতা করছে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন