আপডেট :

        আহত বিড়াল ফেলে দেওয়ার অভিযোগে এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার

        সৎমায়ের হাতে ২০ বছর বন্দী যুবক!

        পিকো রিভেরায় টর্নেডোর আঘাত, ভেঙে পড়েছে গাছ ও বিদ্যুৎ লাইন

        টাকা পরিশোধ না করলে ন্যাটোর পাশে থাকব না বললেন ট্রাম্প

        এলডিসি থেকে উত্তরণ আগামী বছরই

        ‘লজ্জিত, ক্ষমার অযোগ্য আমরা’

        পরিচয় চুরি ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তি

        শক্তিশালী ঝড়ের আঘাতে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ে তুষারপাত, বৃহস্পতিবারের পূর্বাভাস

        কুয়েতে বন্দি ছয় মার্কিন নাগরিক মুক্ত, যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলেন

        আজ বিকেলে ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব

        দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ‘ব্লাড ওয়ার্ম মুন’ পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দেখার সেরা সময়

        প্রতারণার মাধ্যমে এফইএমএ’র ত্রাণ তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ

        ৭১ বছর বয়সী হাইকার সান গ্যাব্রিয়েল পাহাড়ে নিখোঁজ

        লোমা লিন্ডা হাসপাতালে 'সোয়াটিং কল' এ কর্তৃপক্ষের সায়

        ক্যালিফোর্নিয়ার সৈকতে সি লায়ন হত্যাকাণ্ড: অভিযুক্তের সন্ধানে পুলিশ

        কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুক্রবার শপথ নিবেন কার্নি

        শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা

        আমি মনে করি, আমার জায়গায় আমি এক নম্বর: বাপ্পারাজ

        মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিশেষ সম্মান জানালো আইসিসি

        যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াও চাপে

মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিরা

মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিরা

দীর্ঘদিন আটক থাকার পর মিয়ানমার থেকে দেশে ফেরত এসেছেন ১৭৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক। তারা সবাই ছিলেন সে দেশের কারাগারে বন্দী। যে জাহাজে এসেছেন বাংলাদেশিরা সেই জাহাজেই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাবেন এখানে পালিয়ে আসা ২৮৫ জন মিয়ানমার বিজিপি সদস্য।


মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে রাখাইন রাজ্যের সিটওয়ে বন্দর থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়ে রওনা হয়ে মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ চিন ডুইন বুধবার (২৪ এপ্রিল) বেলা দেড়টার দিকে জাহাজটি কক্সবাজার বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে পৌঁছায়।


মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর এ এস এম সায়েম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তারা বিভিন্ন সময় অবৈধ মিয়ানমারে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়েছিলো। যাচাই বাছাই শেষে বাংলাদেশের নাগরিক বলে নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।’

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ড সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছিলেন, বুধবার আটকে পড়া বাংলাদেশিদের নিয়ে জাহাজটি দেশে পৌঁছালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের ওই জাহাজেই তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

এই ফেরত আসা ১৭৩ জনের মধ্যে ১৪৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বন্দি ছিলেন মিয়ানমারের কারাগারে।

মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, মিয়ানমার থেকে ফেরত পাঠানো ওই ১৭৩ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাগরিক কক্সবাজার জেলার। তাদের মধ্যে ১২৯ জনের বাড়িই কক্সবাজারে।



বাকিদের মধ্যে ৩০ জন বান্দরবানের, ৭ জন রাঙামাটির এবং খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার রয়েছে একজন করে।

এদিকে নিখোঁজ প্রিয়জন ফিরছে জেনে তাদের কাছে পেতে সকাল থেকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএর ঘাট এলাকায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন বাবা-মা-ভাই-বোনসহ স্বজনরা।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের খারাংখালী এলাকার বাসিন্দা ছেনেয়ারা বেগম বলেন, ১২ বছর আগে আমার ভাই খোরশেদ আলম (৩০) নিখোঁজ হন। গতকাল খবর পেয়েছি মিয়ানমার কারাগার থেকে অনেক বাংলাদশিকে আনা হচ্ছে। তাই ভাইয়ের জন্য অপেক্ষায় আছি। ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে শোকে আমার মা মারা গেছেন।

উখিয়ার পালংখালী মধ্যম ফারির বিল এলাকার ফরিদা খাতুন বলেন, আমার ছেলে আরফাত হোসন (২০) সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ছিল। দালালের খপ্পরে পড়ে ১৪ মাস আগে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। ৯ মাস পরে তার চিঠি পেয়ে নিশ্চিত হয়েছি সে মিয়ানমারের কারাগারে রয়েছে। নিকট আত্নীয়ের মাধ্যমে খবর পেয়েছি মিয়ানমার থেকে তাদের আনা হচ্ছে। আমি এখনো নিশ্চিত না যে, সেখানে আমার ছেলে আছে কিনা। তারপরও ছেলেকে পাওয়ার একবুক আশা নিয়ে এসেছি।

একই কথা বললেন পালংখালী গ্রামের বাসিন্দা সাবেকুন্নাহার, হাজেরা খাতুন ও কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়ার জমিলা, উখিয়ার বদি বলম শাহ আলম, টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের হাজমপাড়ার নুরুল ইসলাম।

মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, এই ১৭৩ জনের মধ্যে ১৪৪ জন বাংলাদেশি দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাদের সবার সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে আগেই।

বাকি ২৯ জনের সাজার মেয়াদ শেষ না হলেও এই ফেরত পাঠানোর উদ্যোগের সময় তাদেরকে বিশেষ ক্ষমার আওতায় আনা হয়।

বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আগে তাদেরকে রাখা হয় সিটওয়ের কারাগারে। বুধবার সবার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তোলা হয়েছিল দেশটির নৌ বাহিনীর জাহাজে।

 

মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর এ এস এম সায়েম বলেন, ‘সবার আগে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই করে দেখেছে আটককৃত ঐসব নাগরিকরা বাংলাদেশের বৈধ নাগরিক কী না। সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরই ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া শুরু হয়।’


মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় পৌনে তিনশো কিলোমিটার। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময় ওই বাংলাদেশিরা এই সীমানা পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে মিয়ানমারে প্রবেশ করেছিল বলে জানাচ্ছে মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাস।

দূতাবাস কর্মকর্তা সায়েম বলেন, ‘বাংলাদেশের যে সব নাগরিক মিয়ানমারে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে তাদের কারো কাছে কোন ধরনের ডকুমেন্টস ছিল না। যখন আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গা থেকে জানানো হল তারা বাংলাদেশের নাগরিক, তখন আমরা যাচাই বাছাই শুরু করলাম।’

দূতাবাস বলছে, এই বাংলাদেশিদের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কেউ মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কেউ কেউ আবার সে দেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের পর দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন।

বিভিন্ন সময় আটক হওয়া ব্যক্তিদের দেশটির আইন অনুযায়ী সাজাও দেন মিয়ানমারের আদালত। আদালতের দেওয়া সাজার মেয়াদ ১৪৪ জনের শেষ হয়।

সায়েম জানান, বাকি ২৯ জনের মেয়াদ শেষ না হলেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়ার পর বিশেষ বিবেচনায় তাদের ক্ষমা করা হয়, যাতে তারা নিজ দেশে ফেরত যেতে পারেন।

এরপর মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাস দেশটির সরকারের সাথে কয়েক দফায় বৈঠক করে তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। সেখান থেকে একে একে ১৭৩ জনের তালিকা তৈরি করে কঠোর নিরাপত্তার মাধ্যমে তাদের মিয়ানমার নৌ বাহিনীর জাহাজে তোলা হয়।

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত