দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষে মাঠে ফিরলেন সাবেক অলরাউন্ডার নাসির হোসেন
ট্রাম্পের রেসিপ্রোকাল শুল্ক নীতি: বৈশ্বিক বাণিজ্যে নতুন উত্তেজনা
ছবি: এলএবাংলাটাইমস
রেসিপ্রোকাল শুল্ক কী?
রেসিপ্রোকাল শুল্ক (Reciprocal Tariffs) হলো এক ধরনের প্রতিক্রিয়ামূলক শুল্ক ব্যবস্থা, যেখানে একটি দেশ অন্য দেশের পণ্যের উপর যে শুল্ক আরোপ করে, তার সমান হারে সে দেশটির পণ্যের উপর শুল্ক বসায়। এই নীতির মাধ্যমে বাণিজ্যে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়, যাতে কোনো দেশ একতরফাভাবে শুল্ক আরোপ করে অন্য দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে।
ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক নীতি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, যদি তিনি পুনরায় ক্ষমতায় আসেন, তাহলে তিনি এমন একটি নীতি বাস্তবায়ন করবেন যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যগুলোর উপর অন্য দেশ যে শুল্ক আরোপ করে, তার সমপরিমাণ শুল্ক সেই দেশের পণ্যের উপর বসানো হবে। তার মতে, বহু দেশ মার্কিন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্ক ধার্য করে, অথচ যুক্তরাষ্ট্র তুলনামূলকভাবে কম শুল্ক ধার্য করে। এটি তার দৃষ্টিতে “অন্যায্য বাণিজ্যনীতি” এবং এর প্রতিকার হিসেবে তিনি রেসিপ্রোকাল শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছেন।
তিনি বিশেষ করে ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রাজিল, মেক্সিকো এবং কানাডার মতো দেশগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন, যারা মার্কিন পণ্যের উপর বেশি শুল্ক আরোপ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত আমদানিকৃত মার্কিন গাড়ির উপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় গাড়ির উপর তুলনামূলকভাবে কম শুল্ক ধার্য করে।
বিশ্ববাজারের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব
ট্রাম্পের এই নীতির ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদাররা যদি প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাহলে এটি বাণিজ্য যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক: ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যেই বেশ কিছু মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। ট্রাম্প যদি পুনরায় রেসিপ্রোকাল শুল্ক চালু করেন, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে জটিল করে তুলতে পারে।
চীনের সঙ্গে উত্তেজনা: ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির সময় চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ তীব্র হয়েছিল। রেসিপ্রোকাল শুল্ক পুনরায় আরোপ করা হলে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য সংঘাত আরও বাড়তে পারে, যা বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ভারতের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব: ভারতীয় অটোমোবাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস, এবং টেক্সটাইল শিল্পের ওপর এর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, কারণ এসব খাত যুক্তরাষ্ট্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রপ্তানি করে।
বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি: উচ্চ শুল্কের ফলে আমদানি ব্যয় বাড়বে, যা সরাসরি ভোক্তাদের উপর প্রভাব ফেলবে। খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিকস, পোশাক এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।
সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
বিশ্লেষকদের মতে, রেসিপ্রোকাল শুল্ক ব্যবস্থার মূল চ্যালেঞ্জ হলো এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির বিরোধিতা সৃষ্টি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশও মনে করে, এই ধরনের শুল্ক নীতি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে ব্যাহত করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত মার্কিন অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে ট্রাম্পের মতে, তার নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও শ্রমবাজার সুরক্ষিত হবে, এবং এটি বিদেশি প্রতিযোগিতার মুখে দেশীয় উৎপাদকদের জন্য একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে।
রেসিপ্রোকাল শুল্ক নীতি বিশ্ববাণিজ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটি কিছু দেশের জন্য লাভজনক হতে পারে, আবার অনেক দেশের জন্য এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। যদি এই নীতি কার্যকর হয়, তবে এটি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন