ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকিতে কাঁপছে ভারত
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকেই বাণিজ্য নীতিতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর বিরুদ্ধেও তিনি বাণিজ্য সংক্রান্ত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেই তালিকায় নাম রয়েছে ভারতেরও। এ অবস্থায় আগাম ব্যবস্থা হিসেবে এরই মধ্যে আমদানি শুল্ক কমিয়েছে নয়াদিল্লি। তবে, তাদের এই পদক্ষেপ ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করতে পারবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
গত সপ্তাহে ভারত মোটরসাইকেলের ওপর শুল্ক আরও কমিয়েছে। ভারী মোটরসাইকেলের (১ হাজার ৬০০ সিসির বেশি) আমদানি শুল্ক ৫০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে এবং অপেক্ষাকৃত ছোট বাইকের শুল্ক ৫০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের হার্লি ডেভিডসন ব্র্যান্ডের বাইকের ভারতীয় বাজারে প্রবেশ সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে প্রায় ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের মোটরসাইকেল রপ্তানি হয়েছিল।
ট্রাম্প এর আগে ভারতের উচ্চ শুল্কনীতির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। বিশেষ করে, হার্লি ডেভিডসনের ওপর আরোপিত ১০০ শতাংশ শুল্ক নিয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন এবং ভারতকে ‘ট্যারিফ কিং’ ও "বাণিজ্য সম্পর্কের বড় অপব্যবহারকারী’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০২৩ সালে ১৯ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ১২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাত হাজার কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।
ভারতের সাম্প্রতিক শুল্ক হ্রাসের মধ্যে আরও রয়েছে কৃত্রিম ফ্লেভার এসেন্সের শুল্ক ১০০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা, অ্যাকুয়াটিক ফিডের জন্য ফিশ হাইড্রোলাইসেটের শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ করা এবং নির্দিষ্ট বর্জ্য ও স্ক্র্যাপ পণ্যের ওপর শুল্ক বাতিল করা। এসব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি যথাক্রমে ২ কোটি ১০ লাখ, ৩ কোটি ৫০ লাখ ও ২৫০ কোটি ডলার।
বাণিজ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় ভারতও লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। বিশেষ করে, কৃষিপণ্যের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ২০২৩ সালে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের আপেল, কাঠবাদাম, ছোলা, মসুর ডাল ও আখরোটের ওপর পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার করলেও ট্রাম্প সম্ভবত আরও ছাড় চাইবেন। তবে কৃষিখাত ভারতের রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল একটি ক্ষেত্র হওয়ায় নয়াদিল্লি কঠোর অবস্থান নেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক এবং কোয়াড জোটের অংশীদার হিসেবে চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি, অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতীয় সরকারের নমনীয় অবস্থানও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়। কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদী চলতি মাসেই হোয়াইট হাউজ সফরে যেতে পারেন, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনায় নতুন দিক নির্দেশনা দিতে পারে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন