‘পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে’ ট্রাম্পের সঙ্গে সংলাপে প্রস্তুত ক্রেমলিন
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য যে হুমকি দিয়েছেন, তাতে নতুন কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়া প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে’ ট্রাম্পের সঙ্গে সংলাপ চালাতে প্রস্তুত মস্কো।
ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে চুক্তিতে সম্মত হতে গতকাল বুধবার রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। চুক্তিতে সম্মত না হলে মস্কোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান পার্টির অন্যান্য নেতা দ্রুত ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন সংকট নিয়ে ফোনালাপ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আগের দিন ট্রাম্পের হুমকির জবাবে আজ দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘সাম্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে সংলাপ চালাতে’ রাশিয়া প্রস্তুত। আমরা এই বিষয়ে ইশারা পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। তবে এখনো পর্যন্ত আমরা এমন কোনো ইশারা পাইনি।’
মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে শান্তিচুক্তি ট্রাম্পের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। কিন্তু তা কীভাবে করা হবে, তার কোনো রূপরেখা এখনো পর্যন্ত প্রকাশ করেননি ট্রাম্প।
শান্তিচুক্তির জন্য পুতিন যেসব শর্ত দিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে নিজেদের যেসব ভূখণ্ড এখনো ইউক্রেনের সেনাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, সেখান থেকে তাঁদের প্রত্যাহার করতে হবে। পুতিনের এই দাবি পূরণ করা বেশ কঠিন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজেদের এক ইঞ্চি ভূখণ্ডও ছাড়া হবে না বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি এটাও বলেছেন, শক্তিপ্রয়োগ করার বদলে ‘কূটনৈতিক’ উপায়ে নিজেদের হারানো ভূখণ্ড ফেরত পেতে চেষ্টা করবে কিয়েভ।
কিয়েভ এটাও দাবি করছে, তাদের ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি শান্তি রক্ষার জন্য ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সেনা মোতায়েন করতে হবে।
নিষেধাজ্ঞার হুমকি
গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প পুতিনকে উদ্দেশ্য করে কিছুটা হুমকির সুরে লিখেছেন, ‘এখনই চুক্তি করতে হবে। অন্যথায় উচ্চ মাত্রার কর, শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।’
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমি রাশিয়াকে আঘাত করতে চাই না। প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে অতীতে আমার সব সময় অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল।’ ইউক্রেন যুদ্ধ তিন বছর পূর্ণ হতে চললেও এখন পর্যন্ত পুতিনকে নিয়ে তেমন কোনো কটু কথা বলেননি ট্রাম্প। বরং তিনি যথারীতি পুতিনের প্রশংসাই করেছেন।
পেসকভ বলেন, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার হুমকিতে ক্রেমলিন ‘সুনির্দিষ্টভাবে নতুন’ কিছু দেখছে না।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র এটাও বলেছেন, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ থেকেই এটা স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা ‘পছন্দ’ করে। মস্কো ট্রাম্পের সব বিবৃতি ‘নিবিড়ভাবে খেয়াল’ করছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে সেনা পাঠায় রাশিয়া। এর সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ার ওপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। মস্কো এসব নিষেধাজ্ঞার তীব্র সমালোচনা করে আসছে।
পশ্চিমারা আশা করেছিল, নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। কিন্তু তা হয়নি। বরং মোটাদাগে রাশিয়ার অর্থনীতি ভালোভাবেই পরিচালিত হচ্ছে।
পেসকভ স্বীকার করেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেসব রকম হয়, আমাদের অর্থনীতিরও সে রকম কিছু সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু ‘যাবতীয় সামরিক প্রয়োজন’ মেটাতে রাশিয়ার প্রয়োজনীয় অর্থ-সম্পদ রয়েছে।
রাশিয়ার সেনারা গত কয়েক মাস ধরে রণক্ষেত্রে সাফল্য পাচ্ছেন, নিয়মিতভাবে তাঁরা নতুন নতুন গ্রাম ও বসতি দখল করছেন। একই সঙ্গে মস্কো ও কিয়েভ রণক্ষেত্রের সীমানা ছাড়িয়ে উভয় দেশের গভীরে আকাশ পথে হামলা বাড়িয়েছে।
আজ রাশিয়ার সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা দনবাসের দোনেৎস্ক অঞ্চলে আরেকটি ছোট বসতি দখল করেছে। ২০২২ সালে এই প্রশাসনিক অঞ্চলটি পার্লামেন্টে আইন পাস করে নিজেদের ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে নিয়েছে রাশিয়া।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন