ট্রাম্পের শুল্ক বিতর্কে ট্রুডোর সঙ্গে বিরোধ, কানাডার অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে মতবিরোধের মধ্যে পদত্যাগ করেছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড।
সোমবার দেশটির পার্লামেন্টে বার্ষিক বাজেট উত্থাপনের কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রুডোর কাছে লেখা এক চিঠিতে ফ্রিল্যান্ড পদত্যাগের ঘোষণা দেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
চিঠিতে তিনি কানাডাকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ট্রুডোর সঙ্গে তার মতবিরোধের কথা লিখেছেন। এমনকি ট্রাম্পের 'আগ্রাসী অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ' নীতির কারণে কানাডা গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে - এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
ট্রুডো গত সপ্তাহে ফ্রিল্যান্ডকে বলেছিলেন, তাকে সরকারের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদে আর দেখতে চান না। এ জন্যই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফ্রিল্যান্ড।
বিবিসি লিখেছে, এই পদক্ষেপ ট্রুডোর নড়বড়ে সংখ্যালঘু সরকারকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিতে পারে।
জরিপ বলছে, লিবারেল নেতার সমর্থনের হার এ বছর জুনের ৬৩ শতাংশ থেকে কমে ২৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
এদিকে সোমবার ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগের পর লিবারেল পার্টির পাঁচ এমপি প্রকাশ্যে ট্রুডোকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
ফিল্যান্ডের পদত্যাগের কারণে কানাডার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদরাও সতর্ক করেছেন।
ফ্রিল্যান্ডের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন জননিরাপত্তা মন্ত্রী ডমিনিক লেব্ল্যাঙ্ক। শৈশব থেকে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু লেব্ল্যাঙ্ককে তার অন্যতম বিশ্বস্ত মিত্র।
শপথ অনুষ্ঠানে ট্রুডো উপস্থিত ছিলেন। ফ্রিল্যান্ডের ঘোষণার পর এই প্রথম গণমাধ্যমের সামনে তাকে দেখা গেলেও তিনি কোনো বিবৃতি দেননি।
তার কার্যালয় এবং অর্থ বিভাগ উভয়ই মন্তব্যের জন্য বিবিসির অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
পদত্যাগপত্রে ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপক শুল্কের হুমকি মোকাবেলায় কানাডাকে মূলধন প্রস্তুত রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এর অর্থ হচ্ছে 'ব্যয়বহুল রাজনৈতিক গিমিক এড়িয়ে যাওয়া' যা কানাডার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন, ক্ষমতা গ্রহণের প্রথমদিনেই তিনি কানাডা থেকে আমদানিকৃত সকল পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। এমন হুমকির পর দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে যান ট্রুডো। তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ট্রাম্পের ওই ঘোষণাকে ফ্রিল্যান্ড ‘হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার মতে, বিষয়টি কানাডার ‘অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে’ নেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং এসব শুল্ক হুমকির জবাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় সঙ্কট মোকাবেলায় প্রস্তাবিত একাধিক নীতি নিয়েও ফ্রিল্যান্ড ও ট্রুডোর মধ্যে মতবিরোধ ছিল।
এর মধ্যে রয়েছে ২৫০ কানাডিয়ান ডলারের চেক, যা সরকার বার্ষিক দেড় লাখ কানাডিয়ান ডলারের কম আয় করা প্রত্যেক কানাডিয়ানকে দিতে চেয়েছিল।
আরেকটি হল, ছুটির সময় অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর সাময়িক কর ছাড়।
ফ্রিল্যান্ডের কার্যালয় এ দুটি নীতির বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। তার ভাষ্য ছিল, এমন সময় এ পদক্ষেপ হবে ‘অর্থনৈতিকভাবে অবিবেচনাপ্রসূত’, কারণ দেশের ঘাটতি বাড়ছে।
অ্যাঙ্গাস রিড ইনস্টিটিউটের এক জরিপে দেখা গেছে, ট্রুডোর জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় প্রতি পাঁচজন কানাডিয়ানের মধ্যে চারজন ওই চেককে জনগণের মনভঞ্জনের রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি অব কানাডার নেতা পিয়েরে পোইলিভ্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি ফেডারেল নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন।
পোইলিভ্রে বলেন, “সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আমরা এভাবে চলতে দিতে পারি না।”
এনডিপি নেতা জগমিত সিংও সোমবার ট্রুডোকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড ছিলেন কানাডার ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী। দীর্ঘদিন তিনি লিবারেল পার্টিতে ট্রুডোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০২০ সালে ট্রুডো তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন।
ফ্রিল্যান্ডকে একজন ‘ভালো বন্ধু’ হিসাবে বর্ণনা করে পরিবহন মন্ত্রী অনিতা আনন্দ বলেছেন, “আমি খবরটি পেয়ে খুবই বিস্মিত হয়েছি।”
বিজনেস কাউন্সিল অব কানাডা এক বিবৃতিতে ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগকে 'গভীর উদ্বেগের বিষয়' হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, অর্থমন্ত্রীর পদ ছাড়লেও তিনি লিবারেল পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে থাকতে চান। আসন্ন নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হওয়ারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন