খেলাধুলা

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হার বাংলাদেশকে কী বার্তা দিল?

বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিতে ১৫ দিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে বাংলাদেশ। এরপর আন-অফিশিয়াল দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে হার। এমনকি দুটি অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচেও পরাজয়ের অভিজ্ঞতা। এর মধ্যে আজ শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে আয়রাল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেটে হারটা মানা কঠিনই। স্বাভাবিকভাবে কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়েছে সবার। প্রশ্ন উঠেছে, এ হার কী বার্তা দিল বাংলাদেশকে?সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন বললেন, ‘প্রস্তুতি ম্যাচের মধ্য দিয়ে প্রতিপক্ষের কাছে অবশ্যই ভিন্ন বার্তা পৌঁছায়। প্রতিপক্ষ দলগুলো ও দর্শকের মনোযোগ থাকে এ ম্যাচগুলোর দিকে। প্রতিপক্ষ দলগুলো পুঙ্খানুপঙ্খভাবে বিশ্লেষণের জন্য এ ম্যাচগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। এমনকি প্রতিটি দলই প্রথম একাদশ নির্বাচন করতে এ ম্যাচগুলোর দিকে নজর রাখে। এ ধরনের প্রস্তুতির ম্যাচ জয়ের মধ্য দিয়ে প্রতিটি দল নিজেদের আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি খুঁজে নেয়। ফলে এ ধরনের হারে একটি নেতিবাচক বার্তাই দিল বাংলাদেশকে।’অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে বাংলাদেশের টানা ব্যর্থতার পেছনে বাংলাদেশ দলের সাবেক তারকা ও বর্তমানে ধারাভাষ্যকর আতহার আলী খান দুষলেন গতিময়-বাউন্সি উইকেটে বাংলাদেশের অনভ্যস্ততাকেই, ‘আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হারটা ভীষণ হতাশাজনক। তবে আমার প্রশ্ন, দীর্ঘদিন সময় পাওয়ার পরও অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের মাটিতে কেন ওভাবে উইকেট তৈরি করা হলো না? ঘরোয়া ক্রিকেটে যদি অমন উইকেট তৈরি করতে পারতাম, তাহলে ওই ধরনের পিচে আমাদের অন্তত ২০-৩০টা ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকত। প্রথমে একটু কষ্ট হলেও আমরা অন্তত অভ্যস্ত হতে পারতাম।’তবে এ হারেও হতাশ হলে চলবে না। আতাহারের যুক্তি, ‘প্রশ্ন উঠেছে, আমরা আরও আগে দলকে পাঠালাম না কেন? কেন আরও বেশি ম্যাচ সেখানে খেললাম না? দেখুন, ভারত অনেক অাগেই অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটিং লাইন-আপ নিয়েও তারা টেস্ট, ওয়ানডে-কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচই জিততে পারেনি। আমরা সবগুলো প্রস্তুতি ম্যাচেই হেরেছি, খারাপ লাগার মতোই ব্যাপার বটে। তবে আমাদের আরও বাস্তববাদী হতে হবে। অনভ্যস্ত কন্ডিশনে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের যেকোনো ফল গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে।’প্রস্তুতি ম্যাচের বাজে ফলের জন্য গাজী আশরাফ দায়ী করলেন ব্যাটিং ব্যর্থতাকে, ‘বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ করছি, ভালো করতে হলে বড় ইনিংস খেলতে হবে, সেঞ্চুরি করতে হবে। এখন একই ম্যাচে বড় জুটি হচ্ছে, দুই ব্যাটসম্যান একই সঙ্গে সেঞ্চুরিও পাচ্ছেন। স্ট্রাইক রেটও অনেক ভালো। এ ক্ষেত্রে আমাদের না হচ্ছে কোনো বড় ইনিংস, না হচ্ছে বড় জুটি। আমরা লড়াই করার মতো তেমন পুঁজিও পাচ্ছি না।’এখন সব ভুলে টুর্নামেন্টে সিনিয়র খেলোয়াড়দের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বললেন আশরাফ-আতহার দুজনই। আশরাফ বললেন, ‘প্রথম তিন সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক, তামিম ও সাকিব জ্বলে না উঠলে আমাদের জন্য আরও দুঃসংবাদই অপেক্ষা করছে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আমরা ঠিক ছন্দে নেই। তবে মূল টুর্নামেন্টে অনেক দলই মূল ছন্দে চলে আসে। গতিটা যদি সেখান থেকেই শুরু হয়, তবে ভিন্ন কিছুও হতে পারে। তবে যতক্ষণ না প্রথম জয়টা পাচ্ছি, ততক্ষণ সবার মধ্যে অস্বস্তি কাজ করবে।’আতহারও একই সুরে বললেন, ‘ভাগ্য ভালো, এগুলো প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল। চারটা ম্যাচের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দলকে তিন বিভাগে সমন্বয়টা ভালো করতে হবে। আমরা সব সময় তিনটা খেলোয়াড় তামিম, মুশফিক ও সাকিবের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করি। তাদেরকে আরও দায়িত্ব নিতে হবে। যদি চারটা ম্যাচেও এ তিনজন ভালো করতে পারে, আর অন্যরাও যদি প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে পারে, তাহলে ভালো কিছু হবেই। আমার মনে হয়, যেকোনো দলের বিপক্ষে ২৫০ রানের বেশি লক্ষ্য দিতে পারলে বোলাররা ভালো ফাইট দিতে পারবে।’বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচই আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ফলে স্নায়ু চাপ আরও বাড়বে। সেই চাপটা জয় করার চ্যালেঞ্জ এখন সাকিবদের।