এই সপ্তাহে রাতের আকাশে এক বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য অপেক্ষা করছে। ১৩ মার্চ রাত থেকে ১৪ মার্চের প্রথম প্রহর পর্যন্ত আকাশে দেখা যাবে ‘ব্লাড ওয়ার্ম মুন’ নামের পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ। এটি হবে প্রথম পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ যা পুরো যুক্তরাষ্ট্র থেকে দৃশ্যমান হবে, প্রায় তিন বছর পর এমন একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। তবে ২০২৬ সালের মার্চ মাসে আবারও একটি চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে, যদিও তা শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে, যার মধ্যে লস এঞ্জেলেস অন্তর্ভুক্ত।
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ তখনই ঘটে যখন চাঁদ, পৃথিবী এবং সূর্য একই সরলরেখায় আসে এবং পৃথিবীর ছায়া চাঁদকে সম্পূর্ণভাবে ঢেকে ফেলে।
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কীভাবে দেখা যাবে?
গ্রিফিথ অবজারভেটরির তথ্য অনুযায়ী, আবহাওয়া স্বচ্ছ থাকলে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার যেকোনো স্থান থেকে খালি চোখেই এই মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করা সম্ভব হবে। চন্দ্রগ্রহণ দেখতে কোনো সুরক্ষা গ্লাসের প্রয়োজন নেই এবং এটি খালি চোখেই দেখা যাবে। তবে টেলিস্কোপ বা দূরবীন ব্যবহার করলে আরো স্পষ্টভাবে এই দৃশ্য উপভোগ করা সম্ভব। পর্যবেক্ষকরা দক্ষিণ-পূর্ব আকাশের দিকে তাকিয়ে সহজেই গ্রহণ দেখতে পারবেন।
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে দেখার সেরা সময়
গ্রিফিথ অবজারভেটরি অনলাইনে চন্দ্রগ্রহণের সরাসরি সম্প্রচার করবে এবং তারা গ্রহণের সময়সূচি প্রকাশ করেছে। সকল সময় প্যাসিফিক স্ট্যান্ডার্ড টাইম (PST) অনুযায়ী:
সন্ধ্যা ৬:৪৪: চাঁদ উদয়
রাত ৮:৫০: অনলাইন সম্প্রচার শুরু
রাত ৮:৫৭: উপচ্ছায়া গ্রহণ শুরু
রাত ১০:০৯: মূল ছায়া গ্রহণ শুরু
রাত ১১:২৬: পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ শুরু
রাত ১১:৫৯: চন্দ্রগ্রহণের সর্বোচ্চ বিন্দু
রাত ১২:৩১: পূর্ণ গ্রহণ শেষ
রাত ১:৪৮: মূল ছায়া গ্রহণ শেষ
রাত ৩:০০: উপচ্ছায়া গ্রহণ শেষ
রাত ৩:০৫: অনলাইন সম্প্রচার শেষ
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ কী?
চন্দ্রগ্রহণের তিনটি ধরণ রয়েছে: উপচ্ছায়া, আংশিক এবং পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ।
নাসার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, উপচ্ছায়া চন্দ্রগ্রহণ তেমন স্পষ্ট নয়, কারণ এটি ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবীর হালকা ছায়া বা উপচ্ছায়ার ভেতর দিয়ে যায়।
আংশিক চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের একটি অংশ অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখায়, যা দেখতে অনেকটা চাঁদের ওপর থেকে কেউ একটি অংশ কেটে নিয়েছে বলে মনে হয়।
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পড়ে এবং সূর্যের আলো চাঁদে পৌঁছাতে পারে না। তবে কিছু আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চাঁদের পৃষ্ঠে পৌঁছায়, যার ফলে এটি লালচে রঙ ধারণ করে।
কেন একে ‘ব্লাড মুন’ বলা হয়?
বিখ্যাত রক ব্যান্ড পিংক ফ্লয়েডের ১৯৭৩ সালের অ্যালবাম ‘ডার্ক সাইড অব দ্য মুন’-এর প্রচ্ছদে যেমন আলো প্রিজমের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রঙিন রশ্মি তৈরি করে, ঠিক একই রকম একটি প্রক্রিয়া ঘটে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে।
প্রফেসর অ্যাঞ্জেলা স্পেক ব্যাখ্যা করেন, যখন সূর্যালোক পৃথিবীর প্রান্ত ধরে বায়ুমণ্ডলে প্রবাহিত হয়, তখন এটি বেঁকে যায় এবং লালচে আলো চাঁদের উপর প্রতিফলিত হয়। এই কারণেই গ্রহণের সময় চাঁদ রক্তবর্ণ ধারণ করে, যা ‘ব্লাড মুন’ নামে পরিচিত।
আরেকটি সহজ ব্যাখ্যা হলো, এটি এমন একটি মুহূর্ত যখন পৃথিবীর প্রতিটি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আলো একসাথে চাঁদের উপর প্রতিফলিত হয়, যা চাঁদকে রক্তিম করে তোলে।
এই গ্রহণকে ‘ব্লাড ওয়ার্ম মুন’ বলা হয় কারণ এই সময়টিতেই সাধারণত শীতের শেষে পৃথিবীর মাটিতে কেঁচোর আবির্ভাব ঘটে, যা বসন্তের আগমনের ইঙ্গিত বহন করে।
এবারের পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ এক বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য, যা দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার অধিবাসীরা সহজেই উপভোগ করতে পারবেন। তাই আবহাওয়া ভালো থাকলে দেরি না করে চোখ রাখুন রাতের আকাশে!
এলএবাংলাটাইমস/ওএম