হাম বিশ্বের অন্যতম সংক্রামক রোগ, যা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। পশ্চিম টেক্সাসে হাম সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ছয় থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের নির্ধারিত এক বছর বয়সের আগেই টিকা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
সদ্য ঘটে যাওয়া হাম সংক্রমণের ঘটনা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। এমনকি টিকা নেওয়া ব্যক্তিরাও আক্রান্ত হতে পারেন, যদি সংক্রমণের মাত্রা খুব বেশি হয়। ফলে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় চিকিৎসক ও অভিভাবকরা সতর্ক রয়েছেন।
আলতাদেনার বাসিন্দা লেসি হোল্মকুইস্ট তার ছেলে লুইকে হাসপাতালে নিয়ে যান কারণ তার গলায় ব্যথা হচ্ছিল। স্ট্রেপ থ্রোটের মতো সংক্রমণ সব সময় এড়ানো যায় না, তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে হাম প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই নতুন সংক্রমণ তাকে চিন্তিত করে তুলেছে। তিনি বলেন, "এটি হৃদয়বিদারক যে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছে, অথচ এটি সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। এরকম হওয়া উচিত নয়।"
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ড. জন রোডার্টে বলেন, বর্তমান সংক্রমণের দ্রুত বিস্তার চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। "এত অল্প সময়ের মধ্যে সংক্রমণ এত বেশি হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন, কারণ এর ধাক্কা বছরের বাকি সময় জুড়ে পড়তে পারে," তিনি বলেন।
হামের ভাইরাস এতটাই সংক্রামক যে, একজন সংক্রমিত ব্যক্তি কোনো একটি কক্ষ ছেড়ে যাওয়ার দুই ঘণ্টা পরও একজন অরক্ষিত ব্যক্তি সেই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। এটি মারাত্মক সংক্রমণ, যা মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনসেফালাইটিস), নিউমোনিয়া এবং গুরুতর ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
ইতিমধ্যে টেক্সাসে এক শিশু ও নিউ মেক্সিকোতে এক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হামে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। উভয়েই ছিলেন টিকা না নেওয়া। টেক্সাসে বর্তমানে প্রায় ২০০টি নিশ্চিত হাম সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে এবং পাশের রাজ্যগুলোতেও সংক্রমণ বাড়ছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় তিনটি নিশ্চিত কেস পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজকের দিনে ভ্রমণ এত সহজ হয়ে গেছে যে, এই ধরনের সংক্রমণ শনাক্ত করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণত শিশুদের ১২ মাস ও চার থেকে ছয় বছর বয়সে হাম, মাম্পস ও রুবেলার (এমএমআর) দুটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়।
এই টিকার কার্যকারিতা নিয়ে ড. রোডার্টে বলেন, "এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও অত্যন্ত কার্যকরী একটি টিকা। একটি ডোজ ৯৩% সুরক্ষা দেয়, আর দুই ডোজ নিলে সুরক্ষা বেড়ে ৯৭% থেকে ৯৮% পর্যন্ত হয়।"
তিনি আরও বলেন, যদি টিকাদানের হার ৯৫% বা তার ওপরে থাকে, তবে লস এঞ্জেলেস কাউন্টিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু কিছু এলাকায় অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের টিকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা সবাইকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
লেসি হোল্মকুইস্ট মনে করেন, টিকা না নেওয়া শুধু অরক্ষিত মানুষদেরই নয়, বরং টিকা নেওয়া ব্যক্তিদেরও ঝুঁকিতে ফেলে। তিনি বলেন, "টিকা ১০০% সুরক্ষা দেয় না। যদি কোনো কারণে কারও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তাহলে তারও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।"
তাহলে কাদের বুস্টার ডোজ নেওয়া উচিত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কেউ ১৯৫৭ সালের পরে জন্মগ্রহণ করে থাকেন এবং ১৯৬৮ সালের আগে হাম টিকা নিয়ে থাকেন, তবে তাদের ডাক্তারদের সঙ্গে পরামর্শ করে বুস্টার ডোজ নেওয়া উচিত। কারণ, সে সময়ের টিকা বর্তমানের মতো কার্যকর ছিল না।
এছাড়া, ফার্মেসি বা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা (টাইট্রেশন টেস্ট) করিয়ে জানা যেতে পারে শরীরে হাম প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির পরিমাণ যথেষ্ট আছে কি না।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম