লস এঞ্জেলেস কাউন্টির এক ৩৯ বছর বয়সী ডেপুটি শেরিফকে কারাগারে হেরোইন চোরাচালানের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, তিনি মেক্সিকান মাফিয়া-সংযুক্ত গ্যাং নেতাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে বিশেষ সংকেত ব্যবহার করতেন এবং প্রিংগলস চিপসের টিউবের মাধ্যমে মাদক পাচার করতেন।
লস এঞ্জেলেস টাইমসের পর্যালোচিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নথি অনুসারে, ডেপুটি মাইকেল মাইজার ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে গ্রেপ্তার হন। অভিযোগে বলা হয়, তাকে গ্রেপ্তারের কিছুক্ষণ আগেই তিনি কারাগারে দুটি প্রিংগলসের টিউবের ভেতর লুকানো ১.১২৮ পাউন্ড ব্ল্যাক টার হেরোইন নিয়ে প্রবেশ করেন।
ডেপুটি মাইজার ছিলেন নর্থ কাউন্টি কারেকশনাল ফ্যাসিলিটিতে (এনসিসিএফ) নিযুক্ত একটি বিশেষ ইউনিটের সদস্য, যার দায়িত্ব ছিল গ্যাং সংক্রান্ত কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, তিনি নিজেই একটি বড় মাদক চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ চক্রটি মেক্সিকান মাফিয়ার সহায়তায় কারাগারে হেরোইন পাচার করত।
এ ঘটনায় ডেপুটি মাইজারসহ মোট ১৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। লস এঞ্জেলেস কাউন্টির জেলা অ্যাটর্নি নাথান হোচম্যান ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে এই অভিযোগপত্র উন্মোচন করেন। তিনি জানান, অভিযুক্তদের মধ্যে ৯ জন ইতোমধ্যে কারাগারে ছিল, আর বাকি ৯ জন ছিলেন বাইরের দুনিয়ায় সক্রিয়। মাইজার ছিলেন তাদেরই একজন।
মেক্সিকান মাফিয়া বর্তমানে প্রায় ১৪০ জন কারাবন্দি সিনিয়র লাতিনো গ্যাং সদস্যের একটি সংগঠন, যা কারাগারের ভেতর থেকে মাদক ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করে। এনসিসিএফ কারাগারে মাফিয়ার দুই সদস্য, ৪৭ বছর বয়সী জোসে রড্রিগেজ এবং ৪০ বছর বয়সী জ্যাকি ট্রিপলেট, এই মাদক চোরাচালান চক্রের প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেডারেল তদন্তকারীরা রড্রিগেজ ও ট্রিপলেটের একাধিক ফোন কল রেকর্ড করে, যেখানে তারা "হোয়াইট জর্ডান" ও "ব্ল্যাক জর্ডান" কোড ব্যবহার করছিল। তদন্তকারীদের মতে, "হোয়াইট জর্ডান" বলতে মেথামফেটামিন এবং "ব্ল্যাক জর্ডান" বলতে হেরোইন বোঝানো হয়েছিল।
একটি ফোন কলে, ডেপুটি মাইজারকে একটি ব্যাগ এবং বিছানার চাদর ট্রিপলেটের হাতে তুলে দিতে দেখা যায় কারাগারের নজরদারি ক্যামেরায়।
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে আরেকটি কল রেকর্ড হয়, যেখানে রড্রিগেজ ডেপুটি মাইজারের ভাইয়ের শ্বশুরের ক্যাশ অ্যাপে ৬,০০০ ডলার পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরদিন, লস এঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফ বিভাগের তদন্তকারীরা মাইজারের ২০১৮ সালের সাদা রঙের বিএমডব্লিউতে ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগানোর অনুমতি পান।
মাইজারকে গ্রেপ্তারের দিন, তদন্তকারীরা লক্ষ্য করেন যে তিনি ল্যাঙ্কাস্টারে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভ্যালেন্সিয়ার একটি গ্যাস স্টেশনে যান। সেখানে একটি লাল রঙের এসইউভি থেকে একজন ব্যক্তি তাকে একটি স্প্রাউটস গ্রোসারি ব্যাগ দেন। পরে জানা যায়, সেই ব্যাগের ভেতর প্রিংগলস চিপসের দুটি টিউব ছিল, যার ভেতরে প্লাস্টিকে মোড়ানো ১.১২৮ পাউন্ড ব্ল্যাক টার হেরোইন ছিল।
এই হেরোইনের বাজারমূল্য কারাগারে ছিল ২২৫,০০০ ডলারের বেশি।
এরপর, বন্দুক তাক করে মাইজার ও তার সহকর্মী ডেপুটি হোসে মুনগুইয়াকে থামায় শেরিফের কর্মকর্তারা। মুনগুইয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো অভিযোগ না থাকলেও, তিনি তদন্তের আওতায় রয়েছেন।
ডেপুটি মাইজারের ব্যাগে ১৫,০০০ ডলারের খামে মোড়ানো নগদ টাকা পাওয়া যায়। পরে তার বাড়ি তল্লাশি করে ড্রয়ারের মধ্যে আরও ১০,৫০০ ডলার উদ্ধার করা হয়।
তিনি আদালতে মাদক পাচার ও গ্যাং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তবে তার আইনজীবী লস এঞ্জেলেস টাইমসের অনুরোধের পরও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৭ মার্চ, ২০২৫ তারিখে লস এঞ্জেলেসের একটি আদালতে অনুষ্ঠিত হবে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম