আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশকে যুক্তরাজ্যের ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা

বাংলাদেশের শহর কেন্দ্রিক দারিদ্র্য নিরসন কর্মসূচিতে ২০২১ সাল নাগাদ যুক্তরাজ্য ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।

যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ব্রিটিশ সরকার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে শহুরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করতে প্রবলভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মূলত এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে দ্রুত ক্রমবর্ধমান নগরায়নের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য আর্থিক ও টেকনিক্যাল সহায়তা প্রদান করবে।

সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে দ্রুত বেড়ে চলা নগরায়ন অনেক বড় ও একটি জটিল চ্যালেঞ্জ। এর অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শহর কেন্দ্রিক দারিদ্র্যতা নিরসন। এটা এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে যা ভবিষ্যতে আরো প্রকট হবে।
বাংলাদেশে ২০৫০ সাল নাগাদ শহুরে জনগোষ্ঠী দ্বিগুণ হবে উল্লেখ করে বলা হয়, আনুমানিক বলা যায় বর্তমানে ১০ মিলিয়ন শহুরে অধিবাসী দারিদ্র্যতায় জীবনযাপন করছেন। এরমধ্যে হতদরিদ্র হচ্ছে ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন। সাধারণত এই বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষ প্রান্তিক অঞ্চলে বাস করছেন। তারা মূলত ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকি নিয়ে অপর্যাপ্ত রাষ্ট্রীয় সেবা, অপুষ্টি, শোষণ, সহিংসতা ও চরম নিরাপত্তাহীনতার সাথে দিনযাপন করছেন। এমন প্রেক্ষাপটে এই ধরণের একটি বৃহত্তম প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত একটি ভালো উদ্যোগ বলে মনে করে যুক্তরাজ্য।

এই প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তাদেরকে পৌরসভার মূল ব্যবস্থাপনা, বাজেট ও পরিকল্পনায় আত্তীকরণ করা হবে। বিশেষ করে নারী এবং কিশোরীদের সক্ষমতা উন্নয়নে নির্দিষ্ট লক্ষে গুরুত্বরোপ করা হবে। তাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সার্বিক ধারণার পাশাপাশি কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার সাথে খাপখাইয়ে জীবনধারণ করা যায় সে বিষয় পাঠদানসহ জাতীয় স্তরের নগরনীতি ও দারিদ্র্য বিমোচন কী করে সম্ভব তা শেখানো হবে।

এতে আরো বলা হয় বাংলাদেশে নগরায়ণ খুব তাড়াতাড়ি বাড়ছে। এতে নগর ভবনকে রীতিমতো নাগরিক সেবা দিতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। নগর এলাকায় জরাজীর্ণ মৌলিক অবকাঠামো, জীবন ধারণের অপ্রতুল সুযোগ সুবিধাদী, অকার্যকর শাসন ব্যবস্থার নজির সুস্পষ্ট। এছাড়া জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত করা সত্যিই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এসবকিছু মোকাবেলা করতে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে তীব্র ঝুঁকির মাঝে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও যেকোনো দুর্যোগ নগর পরিকল্পনার সাথে সরাসরি জড়িত। এবিষয়গুলি নগর পরিকল্পনা থেকে বাদ পড়লে -এর অর্থ হচ্ছে নাগরিকরা একটি ঝুঁকির রাষ্ট্রে বসবাস করছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী প্রায়ই নানা কারণে আঘাত প্রাপ্ত ও বহুমুখী চাপের শিকার হচ্ছেন।এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে কর্তৃপক্ষের জোরপূর্বক উচ্ছেদ অভিযান, দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা, বন্যা-খরা কিংবা হঠাৎ কোনো দূর্যোগ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া। ইতোমধ্যে যেমন দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল খুলনা নগর এলাকায় লবণ পানি অনুপ্রবেশ ও পানি নিষ্কাশনে (ড্রেনেজ) বিশেষ ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এসব কারণে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন শুরু হওয়ায় উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে তুলছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ভবিষ্যতে এটি পাহাড়সম ঝুঁকির চ্যালেঞ্জ আসতে পারে।

এই প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে বলা হয়, ২০১৫-২০২১ সাল নাগাদ ৬ বছরে যুক্তরাজ্য ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড বাংলাদেশকে প্রদান করবে। এর আওতায় ২৫-৩৫টি নগরকে সংযুক্ত করা হবে। এই কর্মসূচির আওতায় আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে বাংলাদেশকে যুক্তরাজ্য প্রদান করবে ২০ মিলিয়ন পাউন্ড। এরফলে জলবায়ু তহবিলের অনুদান বাংলাদেশের জন্য আরো সহজলভ্য হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।


এলএবাংলাটাইমস/আই/এলআরটি