আন্তর্জাতিক

ওবামা কেয়ার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

স্বাস্থ্যসেবা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার- এ কথাটাকে বাস্তব ও কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা যুক্তরাষ্ট্রে ওবামা কেয়ার চালু করেছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ওবামা স্বাস্থ্য সেবা খাতে যে নতুন সংস্কার সাধন করেন, তার প্রকৃত নাম ‘প্যাশেন্ট প্রোটেকশন অ্যান্ড এ্যাফোর্ডেবল কেয়ার এ্যাক্ট’, যদিও তা অধিক পরিচিতি পেয়েছে ‘ওবামা কেয়ার’ নামে। ২০১০ সালের ২৩ মার্চ প্রেসিডেন্ট ওবামার স্বাক্ষরের মাধ্যমে এটি আইনে পরিণত হয়। এই নতুন আইন আমেরিকানদের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে অনেক নতুন সুযোগ-সুবিধা, অধিকার এবং নিরাপত্তা প্রদান করছে। তবে লক্ষ্য করা গেছে যে, এই হেল্থ ইনসিওরেন্স বা স্বাস্থ্য বিমা ব্যবস্থা সম্পর্কে সবার স্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে অনেকেই এটিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন, অনেকে হেল্থ ইনসিওরেন্স গ্রহণ না করার কারণে জরিমানা নিয়ে শঙ্কিত আছেন এবং ইনসিওরেন্স গ্রহণ না করে অনেকেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ওবামা কেয়ার ২০১৪ সালে প্রথম অন্তর্ভুক্তির সময়ে নিউইয়র্কের প্রায় এক মিলিয়ন বাসিন্দা নিউইয়র্ক স্টেট অব হেল্থ ইনসিওরেন্স এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। এটা এক হিসাবে সাফল্য মনে হলেও আসলে কিন্তু তা নয়, কারণ, এখনও অসংখ্য মানুষ এই স্বাস্থ্যসেবার আওতার বাইরে রয়ে গেছেন। তবে যারা এখনও ওবামা কেয়ারের অধীনে বাধ্যতামূলক এই হেল্থ ইনসিওরেন্স গ্রহণ করেননি, তাদের জন্য নতুন করে এই হেল্থ ইনসিওরেন্সের আওতাভুক্ত হওয়ার, এবং যারা গত বছর করেছিলেন, ২০১৫ সালের জন্য প্রয়োজনে তা নবায়ন বা পরিবর্তন করা শুরু হবে ১৫ নভেম্বর, ২০১৪ এবং শেষ হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫-এ। তবে, নিউইয়র্ক স্টেট অব হেল্থ-এর মাধ্যমে মেডিকেইডে অন্তর্ভুক্তি সারা বছর জুড়ে খোলা থাকবে।
যেহেতু দ্বিতীয় অন্তর্ভুক্তির তারিখ খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে, তাই যাদের কোনো হেল্থ ইনসিওরেন্স নেই, তাদের জন্য নিউইয়র্ক স্টেট অব হেল্থ ইনসিওরেন্স-এ অন্তর্ভুক্ত হবার এটা একটা সুবর্ণ সুযোগ। ইনসিওরেন্স সম্পর্কে এমনিতেই আমাদের কম্যুনিটির অনেকের মধ্যেই স্পষ্ট ধারণা নেই, তার ওপর অনেকেই মনে করেন, ইনসিওরেন্স নিলে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়, অনেকে মনে করেন, আমি তো সুস্থই আছি, যারা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন, ইনসিওরেন্স প্রয়োজন তাদের। কিন্তু তারা আদৌ জানেননা যে, শিশু থেকে শুরু করে মৃত্যুপথযাত্রী পর্যন্ত প্রতিটি মানুষেরই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিচর্যার প্রয়োজন রয়েছে। আর ওবামা কেয়ার হলো সেই ইনসিওরেন্স ব্যবস্থা যা ধনী-দরিদ্র সবার স্বাস্থ্যসেবার অধিকার বাস্তবায়র করতে এবং তাদের আয়ত্তের মধ্যে এনে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ওবামা কেয়ার দ্বিতীয়বর্ষে পা দেওয়ার পরও অনেকের মধ্যে যে তথ্যঘাটতি ও ধারণাগত ভ্রান্তি রয়েছে, সেটা দূর করার জন্য এই নিবন্ধটির অবতারণা। এটিতে ওবামা কেয়ার-অধীনে কীভাবে ইনসিওরেন্স করতে হয়, কীভাবে নিউইয়র্ক স্টেট অব হেল্থ ইনসিওরেন্স মার্কেট প্লেস থেকে নেভিগেটরদের সহায়তা নিয়ে বা সরাসরি নিজে নিজে ইনসিওরেন্স বাছাই করা যায়, কারা ইনসিওরেন্স-এর যোগ্য, লভ্য হেল্থ প্ল্যানগুলোর বৈশিষ্ট, ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
নিউইয়র্ক স্টেট অব হেল্থ-এর একটি সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা হলো ‘মার্কেট প্লেস’, যার মাধ্যমে নিউইয়র্ক স্টেট এর লোকজন সহজভাবে হেল্থ ইনসিওরেন্স গ্রহণ করতে পারেন বা এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। এটা করা সম্ভব একক ব্যক্তির, পরিবারের অথবা ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ইন্টারনেট, ফোন, বা মেইলের মাধ্যমে, এমনকি নিজে উপস্থিতির মাধ্যমে মার্কেট প্লেস থেকে। বিভিন্ন ইনসিওরেন্স প্রদানকারীদের মধ্যে ও তাদের দেওয়া বিভিন্ন প্ল্যান-এর সুযোগ-সুবিধা যাচাই-বাছাই ও তুলনা করতে, কোন্ আয়ের মানুষের জন্য কী পরিমাণ প্রিমিয়াম দিতে হবে, সরকারি ভর্তুকি কতো পাওয়া যাবে কিংবা স্টেট প্রদত্ত বিনামূল্যের ইনসিওরেন্স বা মেডিকেড-এর সুযোগ নিতে হলে কী কী শর্ত পূরণ করতে হবে, ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে ও সেসব গ্রহণ করতে হেল্থ ইনসিওরেন্স মার্কেট প্লেস সব ধরনের সহায়তা করে। মার্কেট প্লেস-এ মেডিকেডসহ বিভিন্ন ইনসিওরেন্স-এর আবেদন করতে প্রশিক্ষিত কর্মীরা (নেভিগেটর/আইপিএ) সাহায্য করতে পারেন। নেভিগেটরদের অনেকেই বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী। তারা ইনসিওরেন্স গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিক না নিয়েই এই সাহায্য প্রদান করেন এবং তারা কোনো ইনসিওরেন্স কোম্পানির সাথে বা পক্ষ হয়ে কাজ করেন না। তারা নিরপেক্ষভাবে মার্কেট প্লেস থেকে ইনসিওরেন্স কোম্পানি ও প্ল্যান বাছাই করতে সবাইকে সাহায্য করতে পারেন। 
নিউইয়র্ক স্টেট অব হেল্থ এর মার্কেট প্লেস-এ বিভিন্ন ধরণের হেল্থ প্ল্যান রয়েছে। সবগুলো প্ল্যানকে অবশ্যই ১০টি অতি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে হবে। সেগুলো হলো: আউট প্যাশেন্ট সার্ভিস (অথবা হসপিটালে না গিয়ে ডাক্তারের অফিসে বা ক্লিনিকে চিকিৎসা করানো), ইমারজেন্সি রুম সেবা, হসপিটালে অবস্থান, প্রসূতি ও নবজাতকের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, মানসিক এবং মাদকাসক্তি চিকিৎসা, প্রেসক্রিপশন বা ঔষধ, পুনর্বাসন ও আবাসন সেবা, ল্যাবোরেটরি সেবা, রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা-ইঞ্জেকশন এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ নিয়ন্ত্রণ সেবা এবং দাঁত ও চোখসহ সকল পেডিয়াট্রিক সার্ভিস।