আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের জয়ে পরিবর্তন ঘটছে এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে!

সাবেক টেলিভিশন তারকা ও রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী ডোনাল্ড জে ট্রাম্প সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। নির্বাচিত হয়ে সরকারি কোনো অফিসে কাজের অভিজ্ঞতা নেই মার্কিন এ ধনকুবেরের। বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি।

নির্বাচনের আগে বিশ্বের প্রভাবশালী সব গণমাধ্যমের জরিপে ডেমোক্রেট দলীয় প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন জয়ী হতে যাচ্ছেন বলে আভাস দেয়া হয়। অধিকাংশ জরিপেই ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব জরিপকে উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচনী ফলাফলে হাসি ফুটেছে ট্রাম্পের মুখে।

মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ করছে বিরোধী শিবির। এর আগে, নির্বাচনী প্রচারণার সময় মার্কিন শ্বেতাঙ্গদের অাধিপত্যকে দেশটিতে বসবাসকারী অভিবাসী, মুসলমান, মেক্সিকান, সমকামী ও কৃষ্ণাঙ্গ এবং শ্রমিক শ্রেণির মানুষের বিরুদ্ধে তুলে ধরেন। সব কিছু এড়িয়ে শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছেন মার্কিন এই ধনকুবের।

অনেকটাই অনাকাঙ্খিত ও অপ্রত্যাশিতভাবে ট্রাম্পের জয় যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দীর্ঘদিনের ইতিহাসে আর নেই। মার্কিন এই প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাগ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বটে এশিয়ার ভূরাজনীতিতেও পরিবর্তন আসতে পারে। দ্য ডিপ্লোম্যাটের ভূরাজনীতি, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বিশ্লষক অঙ্কিত পান্ডে এক নিবন্ধে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের জয়- অনেকেই অচিন্তনীয় বলে মনে করেন। শুধু তাই নয়; ভূ-রাজনীতিও ব্যতিক্রমী ঝুঁকিতে পড়েছে।

বিশেষ করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটতে পারে সে বিষয়েও আলোচনা করেন অঙ্কিত। তিনি লিখেছেন, প্রথমে পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের মাঝে বিভেদ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া ওবামা প্রশাসনের এশীয় নীতিতে পরিবর্তনের মাধ্যমে পুনভারসাম্য আনতে পারেন ট্রাম্প।

পরিবেশগতভাবে প্রচুর ঝুঁকিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি শুরু করবে। ট্রাম্প স্পষ্টভাবে অভিযোগ করেছেন, তিনি মনে করেন; মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্ব কখনোই পরিশোধের নিশ্চয়তা দেয় না। এ ছাড়া এই অঞ্চলের হুমকি হিসেবে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হতে পারে। ওবামা প্রশাসন ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার পর এই ঝুঁকি আরো বাড়তে পারে। পিয়ংইয়ং মধ্যম অথবা উচ্চমাত্রার পারমাণবিক অস্ত্রের চরম অনুশীলন চালাতে পারে।

এই অঞ্চলে চীন সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল ১৯৮০ সালে। এরপর থেকে আর কোনো পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়নি বেইজিং। চীনের এই ব্যর্থতা কোরীয় উপদ্বীপে ঝুঁকি তৈরি করেছে। এই অঞ্চলে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী চীন  যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার শূন্যতার সুযোগ খুঁজবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীকে ঝুঁকিতে ফেলার পক্ষে নন ট্রাম্প; তিনি এ বিষয়টি এর আগে জানিয়েছেন। এমনকি সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত অঞ্চলগুলোতে কমিয়ে আনার কথা বলেছেন। এই সুযোগে চীন বিরোধপূর্ণ তাইওয়ানের সঙ্গে নতুন করে বিরোধে জড়ানো এমনকি কঠোর ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারে; এক্ষেত্রে তাইওয়ানে যুদ্ধপরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ চীন সাগরে বিরোধ ঘটবে। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যে পতনের সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রান্স প্যাসিফিক অংশীদারিত্ব চূক্তিতে পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ট্রাম্প বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্কনীতি কার্যকরের অঙ্গীকার করেছেন।

এদিকে, দক্ষিণ এশিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র আমূল পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে পাকিস্তান বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে। ঘটনাক্রমে আফগানিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধনীতি খুব দ্রুতই শেষ হবে; দেশটির নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য মার্কিন সেনারা কাবুল ত্যাগ করতে পারেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনাও রয়েছে।

এ ছাড়া ট্রাম্পের অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর নীতির শিকার হতে পারেন এশীয়রা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বের আন্তর্জাতিক বেশ কিছু চুক্তি প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট।


এলএবাংলাটাইমস/আই/এলআরটি