বহু বছর আগে দিল্লিতে কূটনীতিকদের এক নৈশভোজে বাংলাদেশের জমি ব্যবহার করে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল এক মার্কিন কূটনীতিকের সঙ্গে। তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তা ওই মার্কিন কূটনীতিক আমার আশঙ্কার কথা শুনে বলেছিলেন, বাংলাদেশে তালিবানি শক্তি কীভাবে শক্তিশালী হতে পারে? আর যাই হোক, দেশটা তো পাকিস্তান নয়। বাঙালিদের দেশ তো!
বাঙালিরা সংস্কৃতি করেন। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল করেন। যতই চেষ্টা হোক, বাঙালি আর যা-ই হোক সফল সন্ত্রাসবাদী কোনও দিনই হতে পারবে না। এর পর বেশ কয়েক বছর কেটে গিয়েছে। সম্প্রতি দিল্লির নর্থ ব্লকে এক বড়কর্তাকে এই পুরনো গল্প বলতে না বলতেই তিনি তা মানতে রাজি হলেন না। ওই অফিসার বললেন, একদা এমন একটা ধারণা আমাদেরও ছিল, কিন্তু এখন তো পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। বাংলাদেশের জমিকে ব্যবহার করে সেখানে তালিবানি জঙ্গি তৈরি করার চেষ্টা চলছে।
শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রথম পর্বেই ২১ অাগস্ট তাকে যে ভাবে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল, বাংলা ভাই নামক সংগঠন তৈরির চেষ্টা হয়, বাংলাদেশের নানা প্রান্তে বোমাবাজির সংস্কৃতি তৈরি করা হয় এ সবই উদ্বেগজনক। একদা হুমায়ুন আজাদের মতো বুদ্ধিজীবীর ওপর আক্রমণ হয় আর সম্প্রতি ব্লগ-লেখকদের উপর সন্ত্রাস-হামলা অব্যাহত।
এ অবস্থায় এই সন্ত্রাস দমনে হাসিনা সরকার যে কঠোর মনোভাব নিয়েছে, যে ভাবে বাংলাদেশ সরকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত এলাকায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখছে তা খুবই প্রশংসনীয়।এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক জিওস্ট্র্যাটেজিক গুরুত্বর কথা মাথায় রেখে ভারতও মনে করে দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করা প্রয়োজন। আর তাই স্থলসীমান্ত চুক্তিকে ভারত রূপায়িত করতে চলেছে, দু’দেশের মধ্যে তা স্বাক্ষর হতে চলেছে আগামী ৬ জুন। আর এই চুক্তির বিরোধিতা শুধু পশ্চিমবঙ্গ সরকার নয়, অসমে নরেন্দ্র মোদির নিজের দল বিজেপি-ও করেছিল। এই অসন্তোষ, রাজ্য ইউনিটের এই বিরোধিতাকে সামলে শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এ কথা সত্য, এই সফরে তিস্তাচুক্তি হয়তো স্বাক্ষরিত হবে না কিন্তু তিস্তা চুক্তির জট ছাড়িয়ে তাকে বাস্তবে রূপ দিতে মোদি যে বদ্ধপরিকর সে বার্তা কিন্তু শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান সম্পর্কেও একটা ভ্রান্ত ধারণা এই সফরের আগে স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। মমতা এখনই তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত করে এই সফরেই তাতে স্বাক্ষর করতে রাজি হননি ঠিকই, কিন্তু মমতা কখনওই বলেননি তিনি এই চুক্তির বিরুদ্ধে। তার বক্তব্য, একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার কাছে প্রধান অগ্রাধিকার হল রাজ্যের স্বার্থ। তিস্তাচুক্তি এমন ভাবে সম্পাদন করতে হবে যাতে উত্তরবঙ্গ জল থেকে বঞ্চিত না হয়। তিস্তা সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশ যাচ্ছে। জলের অভাবে সিকিম আটটি হাইড্রলিক বাঁধ নির্মাণ করেছে। মমতার বক্তব্য, এই বাঁধগুলির ফলে উত্তরবঙ্গে জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ, ভারতের এই দুই রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিতর্ক আগে মোদিকে মেটাতে হবে। কারণ সিকিম সরকার পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে যে জল সঞ্চয় করে তারা বাঁধ নির্মাণ করেনি, জলের চলন্ত স্রোতকে অবরুদ্ধ না করেই তা থেকে জল নিয়ে বাঁধের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
কিন্তু এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক পাঠানো প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বীনা শিকরি সে দিন বলছিলেন, গঙ্গাচুক্তির সময় সমস্যাটা কম ছিল। কারণ ওখানে কার কাছে কতটা জল কতটা পানি যাচ্ছে তার একটা পরিমাপ ছিল। এই সুনির্দিষ্ট পরিমাপ যোগ্যতার ব্যবস্থা তিস্তা নদীতে নেই। এর ফলে এই পরিসংখ্যান নিয়েও বিতর্ক আছে। এখনও পর্যন্ত যে খসড়াটি মনমোহন সিংহ সরকার তৈরি করেছিল সেটাই রয়েছে। এই খসড়ায় কোনও পরিবর্তন হয়নি বটে, কিন্তু দু’দেশের মধ্যে ট্র্যাক-টু কূটনীতি চলছে।
প্রণব মুখোপাধ্যায়, মনমোহন সিংহ, সলমন খুরশিদ বা প্রধানমন্ত্রী অথবা প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বার বার ঢাকায় গিয়েছি, দেখেছি বাংলাদেশে তিস্তা কিন্তু এক প্রবল আবেগতাড়িত বিষয়। অনেকে বলছেন দু’দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু সেটা যেমন সত্য, তেমনই ওটাও সত্য যে কোনও রাষ্ট্রের পক্ষেই অভ্যন্তরীণ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাজ্যের মতামতকে অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। তবে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কর্মপদ্ধতিতে একটা মৌলিক ফারাক আছে। মনমোহন যা পারেননি সেটা মোদি পেরেছেন। মোদি মমতাকে বোঝাতে পেরেছেন যে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা বিশেষ প্রয়োজন।
বাঙালিরা সংস্কৃতি করেন। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল করেন। যতই চেষ্টা হোক, বাঙালি আর যা-ই হোক সফল সন্ত্রাসবাদী কোনও দিনই হতে পারবে না। এর পর বেশ কয়েক বছর কেটে গিয়েছে। সম্প্রতি দিল্লির নর্থ ব্লকে এক বড়কর্তাকে এই পুরনো গল্প বলতে না বলতেই তিনি তা মানতে রাজি হলেন না। ওই অফিসার বললেন, একদা এমন একটা ধারণা আমাদেরও ছিল, কিন্তু এখন তো পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। বাংলাদেশের জমিকে ব্যবহার করে সেখানে তালিবানি জঙ্গি তৈরি করার চেষ্টা চলছে।
শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রথম পর্বেই ২১ অাগস্ট তাকে যে ভাবে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল, বাংলা ভাই নামক সংগঠন তৈরির চেষ্টা হয়, বাংলাদেশের নানা প্রান্তে বোমাবাজির সংস্কৃতি তৈরি করা হয় এ সবই উদ্বেগজনক। একদা হুমায়ুন আজাদের মতো বুদ্ধিজীবীর ওপর আক্রমণ হয় আর সম্প্রতি ব্লগ-লেখকদের উপর সন্ত্রাস-হামলা অব্যাহত।
এ অবস্থায় এই সন্ত্রাস দমনে হাসিনা সরকার যে কঠোর মনোভাব নিয়েছে, যে ভাবে বাংলাদেশ সরকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত এলাকায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখছে তা খুবই প্রশংসনীয়।এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক জিওস্ট্র্যাটেজিক গুরুত্বর কথা মাথায় রেখে ভারতও মনে করে দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করা প্রয়োজন। আর তাই স্থলসীমান্ত চুক্তিকে ভারত রূপায়িত করতে চলেছে, দু’দেশের মধ্যে তা স্বাক্ষর হতে চলেছে আগামী ৬ জুন। আর এই চুক্তির বিরোধিতা শুধু পশ্চিমবঙ্গ সরকার নয়, অসমে নরেন্দ্র মোদির নিজের দল বিজেপি-ও করেছিল। এই অসন্তোষ, রাজ্য ইউনিটের এই বিরোধিতাকে সামলে শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি এই চুক্তি চূড়ান্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এ কথা সত্য, এই সফরে তিস্তাচুক্তি হয়তো স্বাক্ষরিত হবে না কিন্তু তিস্তা চুক্তির জট ছাড়িয়ে তাকে বাস্তবে রূপ দিতে মোদি যে বদ্ধপরিকর সে বার্তা কিন্তু শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান সম্পর্কেও একটা ভ্রান্ত ধারণা এই সফরের আগে স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। মমতা এখনই তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত করে এই সফরেই তাতে স্বাক্ষর করতে রাজি হননি ঠিকই, কিন্তু মমতা কখনওই বলেননি তিনি এই চুক্তির বিরুদ্ধে। তার বক্তব্য, একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার কাছে প্রধান অগ্রাধিকার হল রাজ্যের স্বার্থ। তিস্তাচুক্তি এমন ভাবে সম্পাদন করতে হবে যাতে উত্তরবঙ্গ জল থেকে বঞ্চিত না হয়। তিস্তা সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশ যাচ্ছে। জলের অভাবে সিকিম আটটি হাইড্রলিক বাঁধ নির্মাণ করেছে। মমতার বক্তব্য, এই বাঁধগুলির ফলে উত্তরবঙ্গে জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ, ভারতের এই দুই রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিতর্ক আগে মোদিকে মেটাতে হবে। কারণ সিকিম সরকার পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে যে জল সঞ্চয় করে তারা বাঁধ নির্মাণ করেনি, জলের চলন্ত স্রোতকে অবরুদ্ধ না করেই তা থেকে জল নিয়ে বাঁধের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
কিন্তু এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক পাঠানো প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বীনা শিকরি সে দিন বলছিলেন, গঙ্গাচুক্তির সময় সমস্যাটা কম ছিল। কারণ ওখানে কার কাছে কতটা জল কতটা পানি যাচ্ছে তার একটা পরিমাপ ছিল। এই সুনির্দিষ্ট পরিমাপ যোগ্যতার ব্যবস্থা তিস্তা নদীতে নেই। এর ফলে এই পরিসংখ্যান নিয়েও বিতর্ক আছে। এখনও পর্যন্ত যে খসড়াটি মনমোহন সিংহ সরকার তৈরি করেছিল সেটাই রয়েছে। এই খসড়ায় কোনও পরিবর্তন হয়নি বটে, কিন্তু দু’দেশের মধ্যে ট্র্যাক-টু কূটনীতি চলছে।
প্রণব মুখোপাধ্যায়, মনমোহন সিংহ, সলমন খুরশিদ বা প্রধানমন্ত্রী অথবা প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বার বার ঢাকায় গিয়েছি, দেখেছি বাংলাদেশে তিস্তা কিন্তু এক প্রবল আবেগতাড়িত বিষয়। অনেকে বলছেন দু’দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু সেটা যেমন সত্য, তেমনই ওটাও সত্য যে কোনও রাষ্ট্রের পক্ষেই অভ্যন্তরীণ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাজ্যের মতামতকে অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। তবে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কর্মপদ্ধতিতে একটা মৌলিক ফারাক আছে। মনমোহন যা পারেননি সেটা মোদি পেরেছেন। মোদি মমতাকে বোঝাতে পেরেছেন যে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা বিশেষ প্রয়োজন।