বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার টেলিফোন সংলাপের কয়েকটি পুরোনো অডিও টেপ গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর শোনার আয়োজন করা হয়। এসব টেপ প্রায় চার বছর আগের।একাধিক মন্ত্রী জানান, মন্ত্রিসভার আলোচ্যসূচি শেষ হওয়ার পর অনির্ধারিত আলোচনা পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ওই সব অডিও টেপ শোনেন। এর আগে তাঁর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতাদের কথোপকথন অনুযায়ী, ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে সারা দেশ থেকে ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছিল বিএনপি। সেদিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আগতদের পুলিশ লাঠিপেটা করে। এরপর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ বাধে এবং তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন জেলায়। এ সময় খালেদা জিয়া দলের নেতাদের বিভিন্ন নির্দেশ দেন এবং তা না মানলে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন।বাংলা লিকস যে পাঁচটি কথোপকথন প্রকাশ করেছে, তার চারটিতে ওই সমাবেশ শুরুর আগে কয়েকজন নেতার সঙ্গে খালেদা জিয়ার কথোপকথন শোনা যায়।বাংলা লিকস নামের একটি একাউন্ট থেকে আপলোড করা এসব কথোপকথন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। খালেদা জিয়ার এসব নির্দেশ নাশকতা ঘটনোর উদ্দেশ্যেই, এমন কথা রয়েছে অডিও ফাইলগুলোর শিরোনামে। এর আগে বাংলা লিকস বিএনপির নেতা এম কে আনোয়ার, শমসের মবিন চৌধুরী, তারেক রহমান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, জয়নুল আবদিন ফারুক এবং হাসিনা-খালেদার টেলিফোন সংলাপসহ বিভিন্ন নেতার টেলিফোন সংলাপ প্রকাশ করে। একাধিক মন্ত্রী জানান, গতকালের বৈঠকে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকারের পতন হবে বলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও আইনজীবী নেতা জয়নাল আবেদীনের বক্তব্য নিয়ে রসিকতাও করা হয়।বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক মন্ত্রী জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও সন্ত্রাসীরা ছাড়া পাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সন্ত্রাস দমন আইন কীভাবে সঠিক ও কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায়, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল একাধিক মন্ত্রী দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁদের প্রায় সবার বক্তব্য ছিল, দু-তিনটি জেলা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রধানমন্ত্রীর মতও সে রকম ছিল বলে ওই সব সূত্র জানিয়েছে।গতকালের বৈঠকে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নীতিমালা-২০১৫ অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এই নীতিমালা সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে বলে মন্ত্রিসভার সদস্যরা আশা প্রকাশ করেছেন।সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, ২০০৯ সালের জুলাইয়ে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। ২০১৩ সালের ১১ মার্চ সংশোধনীসহ উপস্থাপন করা হলে তা অনুশাসনসহ মন্ত্রিসভা ফেরত পাঠায়। আজকের সভায় কিছু পরিমার্জনসহ নীতিমালাটি অনুমোদন করা হয়েছে।তিনটি ধাপে এ নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০১৬ সালের মধ্যে স্বল্প, ২০১৮ সালের মধ্যে মধ্যম ও ২০২১ সালের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হবে। খুব শিগগির এ নীতিমালা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।সচিব জানান, নীতিমালায় ১০টি উদ্দেশ্য, ৫৬টি কৌশলগত বিষয়বস্তু ও ৩০৬টি করণীয় উল্লেখ রয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব বাড়াতে এই নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।গতকালের সভায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু মালয়েশিয়া ও ইরানের তেহরানে তাঁর সরকারি সফর সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেন।