বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালকে 'দুই আনার মন্ত্রী' বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।শনিবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে নগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়া নিশা দেশাইয়ের সঙ্গে দেখা করে হাত পেতে বসেছিলেন এবং মনে করেছিলেন নিশা দেশাই তার হাতে বাংলাদেশের ক্ষমতা তুলে দেবেন। এদিন বেলুন ও পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি।সম্মেলনে আবারও তালুকদার আবদুল খালেক সভাপতি ও মিজানুর রহমান মিজান সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন।বিকেলে শেখ ফজলুল করিম সেলিম সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন।সৈয়দ আশরাফ সমালোচনা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনারও। রাষ্ট্রদূত মজীনাকে 'কাজের মেয়ে মর্জিনা' বলে উল্লেখ করেন তিনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে মজীনার দূতিয়ালি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ''কয়দিন আগে উনি (খালেদা জিয়া) ছিলেন আরেক জনের দিকে তাকিয়ে। মজীনা তো কত চেষ্টা করল নির্বাচনটা বন্ধ করার জন্য, শেখ হাসিনা যাতে প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন- তার জন্য। এমন কোনো চেষ্টা নেই তিনি করেননি। আল্লাহর ওয়াস্তে সবশেষে চাকরির মেয়াদও শেষ, ক্ষমতাও শেষ। আগামী সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেবেন। জীবনে হয়তো আর বাংলাদেশে আসবেন না। বাংলাদেশ কিন্তু ওই অবস্থায় নেই যে 'কাজের মেয়ে মর্জিনা' বাংলাদেশের ক্ষমতার রদবদল করবে।'' সম্মেলনে প্রধান অতিথি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আরও বলেন, 'কিছুদিন আগে বিএনপি ভেবেছিল কংগ্রেস গেছে, এবার ভারতের মোদি সরকার তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। মনমোহনের চেয়ে মোদি আরও কট্টরভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থক।' খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে। পৃথিবীর এমন কোনো শক্তি নেই যারা শেখ হাসিনাকে একদিন আগে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে।' শেখ ফজলুল করিম সেলিম অভিযোগ করেন, 'মুক্তিযোদ্ধা নামধারী জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে এ দেশে কাজ করেছেন। এ জন্যই তিনি বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ধ্যান-ধারণায় সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।'তিনি বলেন, 'আগামী ১০০ বছরেও এ দেশে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা ফিরে আসবে না।' ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, 'আন্দোলনের নামে সারাদেশে ২৫০ জন মানুষকে তারা হত্যা করেছে। এগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ। নির্বাচন প্রতিহতের নামে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ও মানুষ হত্যা করায় ভবিষ্যতে খালেদা জিয়ার বিচার হবে।' খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ডা. আবদুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য মন্নুজান সুফিয়ান, নড়াইল জেলা সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস, খুলনা জেলা সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন। সম্মেলনের শুরুতে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান প্রতিবেদন এবং প্রচার সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর আগে ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে তালুকদার আবদুল খালেককে সভাপতি ও মিজানুর রহমান মিজানকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়।