বাংলাদেশ

সমালোচনা নিয়ে যা বললেন সারোয়ার তুষার

অর্থনীতিবিদ ও লেখক জিয়া হাসান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা করছেন। শেখ হাসিনার সরকারের সমালোচনা করার কারণে তাকে প্রবাসে পাড়ি জমাতে হয়। বইমেলায় ‌‘উন্নয়ন বিভ্রম; বিগত এক দশকের অর্থনীতির না বলা কথা’ প্রকাশিত হলে সরকার তা নিষিদ্ধ করে। লেখালেখির মাধ্যমে তিনি গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে ছিলেন সরব। বেশ কিছু দিন তিনি অন্তর্বর্তী সরকার ও রাষ্ট্রপতি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনা করছেন।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) সেই আলোচনা-সমালোচনার পাল্টা যুক্তি তুলে ধরেছেন লেখক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা সারোয়ার তুষার।
ইত্তেফাক ডিজিটালের পাঠকের জন্য লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘জিয়া ভাই (জিয়া হাসান) আমার অত্যন্ত পছন্দের একজন অ্যাক্টিভিস্ট। পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে অনলাইনে যারা তাৎপর্যপূর্ণ ও সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন, তিনি তাদের অন্যতম। ফলে এখন আমি যা লিখতে যাচ্ছি, তা একেবারেই ব্যক্তিগত ব্যাপার না। আশা করি জিয়া ভাইসহ সংশ্লিষ্ট সকলে তা বুঝবেন। জিয়া ভাইয়ের গত কয়েকদিনের পোস্ট পড়ে মনে হয়েছে, তিনি বেশ ক্ষুব্ধ৷ তা তিনি হতেই পারে। কিন্তু আমাদের ক্ষোভ আমাদের যুক্তিবোধ আর নৈর্ব্যক্তিকতাকে ক্ষুণ্ণ করছে কি না, তা খেয়াল রাখা দরকার। 
জিয়া ভাইয়ের পোস্টগুলো পড়ে মনে হয়েছে আগে থেকেই তার একটা সিদ্ধান্ত আছে। সেই সিদ্ধান্তের সাপেক্ষে তিনি বাছাই করা সুবিধাজনক কয়েকটা তথ্য (যার বেশিরভাগই হয় ভুল অথবা টুইস্টেড) হাজির করে নিজের সিদ্ধান্তকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। জিয়া ভাই একজন গবেষক মানুষ। এটা যে পদ্ধতি হিসেবে খুবই খারাপ একটা পদ্ধতি তা জিয়া ভাইয়ের অজানা থাকার কথা নয়।  জি.হা-র পোস্টে অনেক কথা, অনেক প্রসঙ্গ, অনেক তথ্য, অনেক ব্যাখ্যা। সব প্রসঙ্গে আমি ঢুকতে চাই না। তা জরুরিও নয়। বুদবুদ আর ফেনাগুলো সরিয়ে আমি দুই/তিনটা ফান্ডামেন্টাল ভুল তথ্য ও ব্যাখ্যার দিকে মনোযোগ দিতে চাই। বাকিটা “দেখেন যা ভালো মনে করেন!” ভুল তথ্য ১: ৫ আগস্ট ছাত্র, আর্মি আর বিএনপির (জি.হা-র ভাষায় প্রধান তিন শক্তি) মধ্যে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং সংবিধান বাতিল না করার প্রশ্নে সমঝোতা হয়েছে। এই তথ্য জি.হা-কে কে/কারা সরবরাহ করেছে জানা নাই। কিন্তু এটা ডাহা মিথ্যাচার। ৫ আগস্ট, আপনারা সবাই জানেন, ছাত্ররা সিনে ছিল না। ক্যান্টনমেন্টে প্রথমে যায় রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা। এরপর রাতের দিকে বঙ্গভবনে ছাত্রনেতার পরিচয়ে তিনজন ভুয়া সমন্বয়ককে নিয়ে যাওয়া হয়। কে/কারা এই কাজ করেছে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। সেটা আপাতত এই লেখার জন্য জরুরি প্রসঙ্গ নয়।  জরুরি প্রসঙ্গ হচ্ছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রশক্তির নেতারা (নাহিদ, আসিফ, মাহফুজ, আরিফ, হান্নান, বাকের, উমামাসহ অন্যরা) ৫ আগস্ট ক্যান্টনমেন্ট কিংবা বঙ্গভবনে যায় নাই। তাহলে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার ব্যাপারে কার সাথে কার ‘সমঝোতা’ হয়েছিল?  তবে জি.হা একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। আমরা আগে বলতে চাই নাই। তিনি প্রসঙ্গটা তোলায় ভালোই হলো। বিএনপি না চাওয়ায় জাতীয় সরকার গঠন করা যায় নাই। কারণ বিএনপি মনে করেছে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অর্জিত গণসার্বভৌমত্ব এবং নব্বই ভাগ জনগণের সমর্থনে গঠিত ওই সরকারকে বিএনপি ‘অনির্বাচিত’ সরকার মনে করেছিল। তবে এগুলো ৫ আগস্টের ঘটনা না। কারণ ৫ আগস্ট ছাত্ররা সিন আউট ছিল।  ছাত্ররা প্রথম বঙ্গভবনে যায় ৭ আগস্ট সন্ধ্যায়। এর আগেই ফেসবুক ভিডিও লাইভে এসে ড. ইউনূসকে তারা ইন্টেরিম সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ঘোষণা করে। 
তাহলে, জিয়া ভাই, এরকম একটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও একপেশে তথ্য আমি যথেষ্ট ভেরিফাই না করে কেন প্রকাশ্যে আনলেন? প্রসঙ্গত, ভেতরের আরও অনেক কথা আছে যা আমি এখানে উল্লেখ করব না। বাকবিতণ্ডার পাল্লায় পড়ে কোন কথা কোথায় বলা উচিত সেই কাণ্ডজ্ঞান আমি হারতে চাই না।  ভুল তথ্য ২: জি.হা. লিখেছেন চুপ্পুকে পদে রাখার ব্যাপারে বিএনপি অত মরিয়া নয়। সরকারই নাকি গোপনে/অনানুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিকে অনুরোধ করেছে এই দফা তারা (বিএনপি) যেন সরকারকে “বাঁচায়” তথা চুপ্পুর পদত্যাগ/অপসারণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। জি.হা-র এই দাবির উৎসও কোনো এক ‘গোপনসূত্র’। সেই ‘গোপনসূত্র’ যে বা যারাই হোক না কেন, এটা একটা ডাহা মিথ্যা তথ্য। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি এবং জি.হা-র কাছে আহবান রাখছি, আপনি আপনার তথ্যের উৎস জানালে আমিও জানাব। আদারওয়াইজ, জানাব না। আপনি যে একপক্ষের কাছে শুনে এই দাবি করেছেন, সেটা ঠিক হয় নাই। আরও ক্রসচেক করা উচিত ছিল।  গোপনসূত্রটুত্র বাদ দিলেও, চুপ্পু ইস্যুতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের প্রতিক্রিয়া/মন্তব্য দেখলেই যেকোনো রাজনীতি সচেতন ব্যক্তি বুঝবেন যে, কারো অনুরোধে নয়, বিএনপির রাজনীতিই বিএনপিকে এই অবস্থানে নিয়ে গেছে। বিএনপি যদি সরকারের ‘অনুরোধে’ এই অবস্থান নিত, তাহলে শীর্ষনেতাদের বক্তব্যে তার ইঙ্গিত থাকত। গতকাল পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর, রুহুল কবির রিজভিসহ শীর্ষ নেতাদের মন্তব্য থেকে এটা পরিস্কার যে, বিএনপি মনে করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো এক “গভীর ষড়যন্ত্র” চলছে। রাষ্ট্রপতি চুপ্পুকে সরিয়ে দিলে তাদের ক্ষমতায় যাওয়া আরও দীর্ঘায়িত হবে। এজন্যই অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে বিএনপি নির্বাচন চাইতে শুরু করে। তিন মাস হতে না হতেই বিএনপি নির্বাচনকে প্রধান দাবিতে পরিণত করেছে। যেন নির্বাচনের জন্যই গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে!  অর্থাৎ, অন্য কারো অনুরোধে নয়, নিজেদের রাজনৈতিক হিসাব নিকাশই বিএনপির অবস্থান ঠিক করে দিয়েছে, এটা পরিস্কার। সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টির যে দোহাই বিএনপি দিচ্ছে, তা যে অমূলক, সেটা বিএনপিও জানে। কিন্তু যেহেতু আমাদের সমাজে সংবিধান, ধারাবাহিকতা ও শূন্যতা ইত্যাদি প্রসঙ্গে চিন্তাভাবনা স্বচ্ছ নয় (এ প্রসঙ্গে পরে লিখব) তাই “সাংবিধানিক শূন্যতা” বলেটলে বিএনপি তাদের অবস্থানের পেছনে ক্রিয়াশীল মূল কারণ থেকে মনোযোগ সরাতে চায়। এটা তাদের রাজনৈতিক কৌশল, আমি তাদের দোষ দিচ্ছি না। বাস্তবতাটা উল্লেখ করলাম মাত্র।  উল্লিখিত দুইটা মেজর ভুল তথ্যের উপর জিয়া হাসানের ক্ষোভের প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে। এত গুরুতর এবং স্পর্শকাতর বিষয়ে কনফিডেন্টলি কোনো ক্লেইম হাজির করার আগে জি.হা আরও যাচাই-বাছাই করতে পারতেন। তিনি সেটা করেন নাই। ব্যাপারটা দুঃখজনক। জি.হা-র পোস্টে আরও কিছু প্রসঙ্গ আছে। সব প্রসঙ্গে আমি ঢুকব না। তবে দুই একটা সাইড প্রসঙ্গে মন্তব্য না করে পারছি না। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা না করলে নাকি দেশে “যৌন-বিপ্লব” হবে! জি.হা-র পোস্টের কমেন্টে কোনো এক ব্যক্তি কিউবার ক্যাস্ত্রো উদাহরণ দিয়েছেন। এইটাই নাকি কন্সটিটিউশনাল কন্টিনিউয়িটি রক্ষা করার রেফারেন্স! এইটা ভেবে আমি এখনো পর্যন্ত বেশ আমোদিত হচ্ছি। হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান আর রাষ্ট্রপতিকে টিকিয়ে রাখতে জি.হা. এতটাই মরিয়া হয়েছেন যে, এরকম হাস্যকর ও কৌতূকপ্রদ এক জুজু তাকে দেখাতে হচ্ছে! সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায়  শূন্যতা নামক পৌত্তলিকতা সম্পর্কে পরে বিস্তারিত লিখব। আপাতত শুধু এটুকু বলা যাক, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা কখনোই শতভাগ রক্ষা করা যায় না; একইভাবে কখনোই শতভাগ সাংবিধানিক শূন্যতাও সৃষ্টি হয় না। সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টির এই জুজু একটা বাকোয়াজ জুজু মাত্র।  এমনকি যখন সংবিধান রদ/স্থগিত থাকে, তখনো আইনের ধারাবাহিকতা থাকে। Law & Order continuation এসার্ট করার মাধ্যমে যেকোনো অন্তর্বর্তী পর্যায়ে আইনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার একাধিক নজির আমাদের ইতিহাসের পাকিস্তান ও বাংলাদেশ পর্ব থেকে অন্তত তিনটা নজির হাজির করে ব্যাপারটা আলাদা ব্যাখ্যা করব। আর এই পর্যায়ে জিয়া ভাইকে অনুরোধ করব, গণঅভ্যুত্থানকে রেজিম চেঞ্জে রিডিউস করতে আপনি চাইতে পারেন, কিন্তু অহেতুক ও হাস্যকর জুজু দেখাবেন না প্লিজ।  এমনকি, চুপ্পুর অপসারণ এবং প্রোক্লেমেশন জারি, বিদ্যমান সংবিধানকে প্রাধান্য না দিয়ে অভ্যুত্থানের প্রোক্লেমেশনের অধীনে আইনের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যই যথেষ্ট, তবুও বলছি, সাংবিধানিকভাবেই চুপ্পুকে সরানো সম্ভব। চুপ্পু সংবিধানের ১০৬ এর অধীনে (এই ধারা মোতাবেকই অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধতা দেয়া হয়েছে) তার পদত্যাগের ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির কাছে রেফারেন্স চাইবেন এবং চিফ জাস্টিস মতামত দেবেন। এটা সম্ভব।  জি.হা. দাবি করেছেন সার্জিস, নাসিররা নাকি উপদেষ্টা হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। জিয়া ভাই, আপনার মনগড়া অনুমান দিয়ে অভ্যুত্থানের ছাত্রশক্তিকে বিচার করবেন না। নাসিরের পক্ষে অনেক কিছু আদায় করে নেয়াই সম্ভব ছিল। নাসির সেটা না করে রাজনীতির মাঠে থাকাকে বেছে নিয়েছে। প্রতিদিন সকাল টু গভীর রাত সংগঠন গোছানো, বিভিন্ন গ্রুপের সাথে মিটিং করা, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে লিঁয়াজো রক্ষা করা— এই কাজগুলো অত্যন্ত সততা আর নিষ্ঠার সাথে করে যাচ্ছে। এগুলো আমি প্রতিদিন নিজের চোখে দেখছি। আপনি দূর থেকে শোনা কথার ওপর ভর করে একটা বেফাঁস কিছু দাবি করার আগে আরও ভেবে দেখবেন, এই আশা রাখছি।  জি.হা. লিখেছেন ছাত্ররা দেশে টোটালিটারিয়ান ব্যবস্থা কায়েম করেছে। অদ্ভুত দাবি বটে! টোটালিটেরিয়ান ব্যবস্থা কায়েম করেছে ছাত্ররা, এদিকে বিএনপি বেঁকে বসার কারণে চুপ্পুর অপসারণ ঝুলে আছে! ব্যাপারটা বেশ মজার। টোটালিটেরিয়ান ব্যবস্থা কায়েম করেছে ছাত্ররা, এদিকে সারা দেশ থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির অফিস যেখানে, সেখানেও হকারদের কাছ থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রতিদিন দুইশ টাকা করে নিচ্ছে। অভ্যুত্থানের পর সাংবাদিক হত্যার (দীপ্ত টেলিভিশন) প্রথম অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে পদ-পদবীতে বিএনপির লোকজন ঢুকছে। এদিকে টোটালিটেরিয়ান ব্যবস্থা কায়েম করেছে ছাত্ররা! বেশ! টোটালিটেরিয়ান সিস্টেম কাকে বলে তা আপনি ভালো করেই জানেন। কিন্তু আপনার অযৌক্তিক ক্ষোভ আপনার যুক্তি ও বিশ্লেষণী ক্ষমতাকে আউটলিভ করেছে বলে মনে হচ্ছে।  জিয়া ভাই, একটু বোঝার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে বড়বড় পরিবর্তনের সময় বারবার রাস্তায় নেমেছে ছাত্ররা। ছাত্ররাই নেতৃত্ব দিয়েছে। বায়ান্নতে, ঊনসত্তরে, নব্বই, ২০০৭-০৮ এ, চব্বিশে। সাথে যোগ দিয়েছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। ইতিহাসের অন্যান্য পর্বের সাথে এবার একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। এটা বোঝার চেষ্টা করেন প্লিজ। এর আগে প্রত্যেকবার ছাত্ররা জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় এসেছে। ‘মহান’ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নামে আবার নেমে এসেছে ঔপনিবেশিক ধাঁচের শাসন, লুটপাট, খুন-খারাবি, দমনমূলক শাসনব্যবস্থা।  এবার, এত বড় একটা অর্জনের পরেও (৫ আগস্টে হাসিনার পতন), ছাত্ররা বলছে, তাদের ভিশনের প্রথম পর্ব তথা ফ্যাসিস্ট শাসকের পতন হয়েছে মাত্র। তারা অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় পর্বে ঢুকেছে তথা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ তারা করতে চায়। এ লক্ষ্যে তারা ৫ দফা দিয়েছে। এটাই এখন জনগণের এজেন্ডা।আর পুরানা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রকাঠামো বহাল রেখে ইলেকশনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া— এটা দলীয় এজেন্ডা। এই ছাত্রদেরকে আপনি ‘ধান্দাবাজ’ বলছেন! হতাশাজনক ব্যাপার! আপনি আরেকটু বিবেচনাবোধের পরিচয় দেবেন, আমি এই আশা করি।  আপনি ছাত্রদেরকে বলছেন তারা কিংস পার্টি! ভাইরে, আবির্ভাবের ইতিহাস মাথায় রাখলে বিএনপিকেই বাংলাদেশের বৃহত্তম ‘কিংস পার্টি’ বলতে হয়। কিন্তু আমরা বিএনপিকে তা মনে করি না। বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল। যেকোনো সময় নির্বাচন দিলে তারাই ক্ষমতা যাবে। আপনাদেরই বিএনপিকে বোঝানো উচিত ছিল যে, গণআকাঙ্ক্ষার পক্ষে থাকলে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়বে বৈ কমবে না! অথচ বিএনপির সাথে সাথে আপনারাও ভুল অবস্থানকে জাস্টফাই করার জন্য ছাত্রদের বিরুদ্ধে কামান দাগাচ্ছেন! আফসোস!  বর্তমান সরকারের ফর্মেশন, ভেতরে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন পক্ষের হিসাব মাথায় রাখলে যে কারোর বোঝার কথা যে, ছাত্রদের দ্বারা ‘কিংস পার্টি’ গঠনের বাস্তব শর্ত হাজির নাই। হ্যাঁ, ছাত্রদের প্রতিনিধি সরকারে আছে। আবার তারা রাস্তাতেও আছে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপের দাবিতে। তথাকথিত ‘কিংস পার্টি’ এতবড় গণমুখী ও আমূল পরিবর্তনবাদী রাজনীতি নিয়ে হাজির হয়েছে, আশ্চর্যের বৈকি! তাহলে এমন ‘কিংস পার্টি'র জয় হোক!  গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে জিয়া ভাই। গণঅভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন এবং নতুন সংবিধান— এটাই রাজনৈতিক সঠিক লাইন। এর আগে, বাংলাদেশের ইতিহাসে, বারবার, গণঅভ্যুত্থানকে রেজিম চেঞ্জে (ক্ষমতাকাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে ক্ষমতার হাতবদল) সংকুচিত করা হয়েছে। এবারও সেই চেষ্টা লক্ষণীয়। ছাত্ররা এটা ঠেকাতে চাইছে দেখেই কি আপনাদের চক্ষুশূলে পরিণত হলো তারা?  এ ব্যাপারে আমি আর কিছু বলব না। এটাই আমার ক্লোজিং স্টেটমেন্ট। আশা করি জিয়া ভাই ‘গোপন সূত্রের’ ভিত্তিতে ফেসবুক গরম করার আগে আরও যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণের কথা মাথায় রাখবেন। দুইটা গুরুতর মিথ্যা তথ্য জি.হা-র লেখায় আছে, উপরে আমি তা খণ্ডন করেছি।  জিয় ভাই, আপনার সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আগে যেমন ছিল, এখনো তেমনই থাকবে। অবশ্য তাতে যদি আপনার সায় থাকে। আশা করি আপনি বুঝবেন ব্যাপারটা ব্যক্তিগত নয়। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের ক্ষেত্রে আপনার তৎপরতাকে আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। আপনি আরও দায়িত্বশীল হলে বাংলাদেশেরই লাভ। ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা।’ এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস