বাংলাদেশ

আ.লীগের সব পদ গেল খন্দকার মোশাররফের

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বাদ পড়ার মধ্য দিয়ে দলীয় সব পদ হারালেন ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গত শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনে দলের নির্বাহী কমিটির পাশাপাশি ৪০ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। নতুন কমিটির উপদেষ্টা পরিষদে নাম নেই তাঁর। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আগের কমিটিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন খন্দকার মোশাররফ। এর আগে গত ১২ মে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ১ নম্বর নির্বাহী সদস্যের পদটিও হারান এই সংসদ সদস্য। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের নতুন তালিকায় দেখা যায়, আগের কমিটির ১০ জন বাদ পড়েছেন। এর মধ্যে মোশাররফ ছাড়া বাকি নয়জন মারা গেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষ বলেন, সম্প্রতি এক সাৎক্ষাকারে মোশাররফ বলেছেন, তিনি আর রাজনীতি করবেন না, নির্বাচন করবেন না। তাঁর অনেক বয়সও হয়েছে। তিনি যদি রাজনীতি না করেন, তাহলে তাঁকে একটা পদ দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তাঁর ওই বক্তব্য যে নেত্রীর চোখে পড়েনি, তা তো বলা যায় না। এ কারণে হয়তো উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য থেকে তাঁর নাম বাদ পড়েছে। খন্দকার মোশাররফ বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মেয়ের বাসায় অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে গতকাল রোববার তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদে আমার নাম যে আর নেই, তা জানি না। আমি দেশের বাইরে। গত নির্বাচনের পর আমি বলে দিয়েছিলাম, আমার বয়স হয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেশারে ভুগছি, আমি আর রাজনীতি করব না। এই বিবেচনায় হয়তো আমার নাম রাখা হয়নি। রাজনীতি না করলেও উপদেষ্টা হিসেবে রাখা যেত।’ খন্দকার মোশাররফ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ওই বছর অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হন তিনি। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনেও পরাজিত হওয়ার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হন। ২০০৯ সালে তাঁকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী করা হয়। এরপর ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময় তাঁর অনুগত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার উন্নয়নকাজের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও জমি দখল করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন। পরে ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে খন্দকার মোশাররফকে ৪০ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, খন্দকার মোশাররফ হোসেন সর্বশেষ জাতীয় সংসদের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন গত ৬ এপ্রিল। সেটি ছিল একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশন। এরপর বাজেট অধিবেশনসহ তিনটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর কোনোটিতেই উপস্থিত ছিলেন না খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ২০২০ সালের ১৬ মে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল সাহার বাড়িতে দুই দফা হামলার ঘটনায় মামলা হয়। এরপর ওই বছরের ৭ জুন ফরিদপুরে খন্দকার মোশাররফের বাড়িতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত এবং তাঁর ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই মামলায় গ্রেপ্তান হন মোশাররফের ভাই ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন ওরফে বাবর এবং মোশাররফের সহকারী একান্ত সচিব ও জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক এ এইচ এম ফোয়াদ। তাঁরা সবাই বর্তমানে কারাগারে। এসব ঘটনার মধ্যে ২০২০ সালের ৯ জুন খন্দকার মোশাররফ ফরিদপুর থেকে ঢাকায় চলে যান। এরপর ওই বছরের ১৪ জুলাই এক রাতের জন্য ফরিদপুরে আসেন তিনি। এরপর তাঁর চাচির জানাজায় অংশ নিতে আরেকবার ফরিদপুর আসেন ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। তাঁকে আর নিজ নির্বাচনী এলাকায় দেখা যায়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ইশতিয়াক ওরফে আরিফ বলেন, খন্দকার মোশাররফ রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় নন। দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। এ কারণে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে তাঁর নাম বাদ গেছে। এতে ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।


এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস