আজ পয়লা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। স্বাগত ১৪২৯ বঙ্গাব্দ। বাঙালির সাংস্কৃতিক জাগরণের উৎসবের দিন। গতকাল সূর্যাস্তের সাথে সাথে মহাকালের গর্ভে চিরতরে হারিয়ে গেছে আরও একটি বছর। আজকের নতুন সূর্যোদয় ঘটেছে নতুন বছরের বার্তা নিয়ে। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হয়েছে নতুন বছর।
গত দু’বছর ভিন্ন মাত্রায় উদযাপিত হয়েছে পয়লা বৈশাখ। করোনা মহামারির কারণে বৈশাখের শুরুর দিন যে উন্মাদনা থাকে তা ছিল না। প্রায় ঘরবন্দি ছিল পুরো বিশ^। দেশে—দেশে ছিল লাশের মিছিল। এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি ছিল বিশ্বজুড়ে। তাই খুবই সীমিত আকারে প্রতীকী দুয়েকটি কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপিত হয়েছিল বাঙালির ঐতিহ্যের পয়লা বৈশাখ। এবারের বৈশাখ কিছুটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এলো। বিশ^ব্যাপী করোনা মহামারি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। দেশেও করোনা পরিস্থিতি অতীতের ২ বছরের চেয়ে ভালো। তাই অনেকটা পুরনো নিয়মে পালিত হবে এবারের নববর্ষ। তবে এবার পয়লা বৈশাখ পড়েছে রমজান মাসে। তাই এর কিছু প্রভাব পড়বে বর্ষবরণের আয়োজনে।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন।
কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু হয় মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্র সন ও ইংরেজি সৌর সনকে ভিত্তি করে প্রবর্তন হয় নতুন এই বাংলা সন। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথম দিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সাথে বাংলা বর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সাথে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।
পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার—অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পয়লা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দিয়েছে।
আবহমানকাল ধরেই চলছে বৈশাখ বরণের আনুষ্ঠানিকতা। নববর্ষের প্রকৃত রূপটি দৃশ্যমান হয় গ্রামে। একসময় গ্রামবাংলায় চৈত্রসংক্রান্তি ছিল প্রধান উৎসব। বছরের শেষ দিনে তেতো খাবার খেয়ে শরীর শুদ্ধ করতেন কৃষাণ—কৃষাণীরা। নির্মল চিত্তে প্রস্তুত হতেন নতুন বছরে প্রবেশ করার জন্য। এখনো বৈশাখ বরণের অংশ হিসেবে বাড়িঘর ধুয়ে—মুছে পরিষ্কার করেন গৃহিণীরা। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন সবাই। গোসল সারেন। নতুন পোশাক পরেন। আত্মীয়—স্বজন, পাড়া—প্রতিবেশীর বাড়িতে বেড়াতে যান। ঘরে ঘরে সাধ্যমতো বিশেষ খাবার রান্না করা হয়। থাকে পিঠাপুলির আয়োজন।
বাংলা নববর্ষে ব্যবসায়ীদের হালখাতা রীতি এখনো এ দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির আমেজ নিয়ে উৎসবের পরিধির আরো বিস্তার ঘটিয়েছে। কৃষকসমাজ আজও অনুসরণ করে বাংলা বর্ষপঞ্জি। এককালে কেবল গ্রামাঞ্চলেই পয়লা বৈশাখের উৎসবে মেতে উঠতো মানুষ। নানা অনুষ্ঠান, মেলা আর হালখাতা খোলার মাধ্যমে তখন করানো হতো মিষ্টিমুখ। এখন আধুনিক বাঙালি তাদের বাংলা নববর্ষকে সাজিয়ে তুলছে শহরে নগরে সর্বত্রই।
নববর্ষ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো বাংলা নববর্ষের বিশেষ দিক তুলে ধরে ক্রোড়পত্র বের করেছে। সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল নববর্ষকে ঘিরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে পালিত হবে নানা কর্মসূচি।
চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে পুরনো সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হবে নতুন বছর। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি করোনা মহামারী থেকে সহসা মুক্তির প্রত্যাশা নিয়ে আজ তৃতীয়বারের মতো নতুন বছরকে বরণ করে নেবে। গত দু’বছর করোনার ছোবলে তছনছ বিশে^ নীরবেই বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা নতুন বছরকে। ঘরে বসেই বরণ করতে হয়েছে নতুন বছরকে। তবে গত দু’বছরের তুলনায় এবার অনেকটা পুরনো নিয়মেই উৎসবে বরণ হবে বাংলা সন।
বাংলা ১৪২৮ সনকে বিদায় এবং নববর্ষ ১৪২৯ বরণকে কেন্দ্র করে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। রাজধানীতে রমনার বটমূলে থাকবে ছায়ানটের বর্ষবরণ এবং চারুকলায় থাকবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। শিল্পকলা একাডেমি, হাতিরঝিল, বাংলা একাডেমি, উদীচী, খেলাঘর, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো নানা আয়োজন করেছে। বিদেশেও বিভিন্ন স্থানে প্রবাসী ব্যক্তি ও সংগঠন বর্ষবরণে নানা আয়োজন করেছেন। এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/বি
[এলএ বাংলাটাইমসের সব নিউজ আরও সহজভাবে পেতে ‘প্লে-স্টোর’ অথবা ‘আই স্টোর’ থেকে ডাউনলোড করুন আমাদের মোবাইল এপ।]
গত দু’বছর ভিন্ন মাত্রায় উদযাপিত হয়েছে পয়লা বৈশাখ। করোনা মহামারির কারণে বৈশাখের শুরুর দিন যে উন্মাদনা থাকে তা ছিল না। প্রায় ঘরবন্দি ছিল পুরো বিশ^। দেশে—দেশে ছিল লাশের মিছিল। এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি ছিল বিশ্বজুড়ে। তাই খুবই সীমিত আকারে প্রতীকী দুয়েকটি কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপিত হয়েছিল বাঙালির ঐতিহ্যের পয়লা বৈশাখ। এবারের বৈশাখ কিছুটা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এলো। বিশ^ব্যাপী করোনা মহামারি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। দেশেও করোনা পরিস্থিতি অতীতের ২ বছরের চেয়ে ভালো। তাই অনেকটা পুরনো নিয়মে পালিত হবে এবারের নববর্ষ। তবে এবার পয়লা বৈশাখ পড়েছে রমজান মাসে। তাই এর কিছু প্রভাব পড়বে বর্ষবরণের আয়োজনে।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন।
কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু হয় মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্র সন ও ইংরেজি সৌর সনকে ভিত্তি করে প্রবর্তন হয় নতুন এই বাংলা সন। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথম দিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সাথে বাংলা বর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সাথে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।
পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার—অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পয়লা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দিয়েছে।
আবহমানকাল ধরেই চলছে বৈশাখ বরণের আনুষ্ঠানিকতা। নববর্ষের প্রকৃত রূপটি দৃশ্যমান হয় গ্রামে। একসময় গ্রামবাংলায় চৈত্রসংক্রান্তি ছিল প্রধান উৎসব। বছরের শেষ দিনে তেতো খাবার খেয়ে শরীর শুদ্ধ করতেন কৃষাণ—কৃষাণীরা। নির্মল চিত্তে প্রস্তুত হতেন নতুন বছরে প্রবেশ করার জন্য। এখনো বৈশাখ বরণের অংশ হিসেবে বাড়িঘর ধুয়ে—মুছে পরিষ্কার করেন গৃহিণীরা। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন সবাই। গোসল সারেন। নতুন পোশাক পরেন। আত্মীয়—স্বজন, পাড়া—প্রতিবেশীর বাড়িতে বেড়াতে যান। ঘরে ঘরে সাধ্যমতো বিশেষ খাবার রান্না করা হয়। থাকে পিঠাপুলির আয়োজন।
বাংলা নববর্ষে ব্যবসায়ীদের হালখাতা রীতি এখনো এ দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির আমেজ নিয়ে উৎসবের পরিধির আরো বিস্তার ঘটিয়েছে। কৃষকসমাজ আজও অনুসরণ করে বাংলা বর্ষপঞ্জি। এককালে কেবল গ্রামাঞ্চলেই পয়লা বৈশাখের উৎসবে মেতে উঠতো মানুষ। নানা অনুষ্ঠান, মেলা আর হালখাতা খোলার মাধ্যমে তখন করানো হতো মিষ্টিমুখ। এখন আধুনিক বাঙালি তাদের বাংলা নববর্ষকে সাজিয়ে তুলছে শহরে নগরে সর্বত্রই।
নববর্ষ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো বাংলা নববর্ষের বিশেষ দিক তুলে ধরে ক্রোড়পত্র বের করেছে। সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল নববর্ষকে ঘিরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে পালিত হবে নানা কর্মসূচি।
চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে পুরনো সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হবে নতুন বছর। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি করোনা মহামারী থেকে সহসা মুক্তির প্রত্যাশা নিয়ে আজ তৃতীয়বারের মতো নতুন বছরকে বরণ করে নেবে। গত দু’বছর করোনার ছোবলে তছনছ বিশে^ নীরবেই বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা নতুন বছরকে। ঘরে বসেই বরণ করতে হয়েছে নতুন বছরকে। তবে গত দু’বছরের তুলনায় এবার অনেকটা পুরনো নিয়মেই উৎসবে বরণ হবে বাংলা সন।
বাংলা ১৪২৮ সনকে বিদায় এবং নববর্ষ ১৪২৯ বরণকে কেন্দ্র করে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। রাজধানীতে রমনার বটমূলে থাকবে ছায়ানটের বর্ষবরণ এবং চারুকলায় থাকবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। শিল্পকলা একাডেমি, হাতিরঝিল, বাংলা একাডেমি, উদীচী, খেলাঘর, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো নানা আয়োজন করেছে। বিদেশেও বিভিন্ন স্থানে প্রবাসী ব্যক্তি ও সংগঠন বর্ষবরণে নানা আয়োজন করেছেন। এলএবাংলাটাইমস/এলআরটি/বি
[এলএ বাংলাটাইমসের সব নিউজ আরও সহজভাবে পেতে ‘প্লে-স্টোর’ অথবা ‘আই স্টোর’ থেকে ডাউনলোড করুন আমাদের মোবাইল এপ।]