এই সপ্তাহটি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আলোচনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য "অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ" হবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
রুবিও মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানান, ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো রাশিয়ার ওপর নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি, কারণ তিনি এখনো কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আশায় আছেন।
এই মন্তব্য আসে এমন সময়ে, যখন ট্রাম্প ইতালিতে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন।
রবিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন জেলেনস্কি শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ক্রিমিয়া রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক — যদিও এর আগে ইউক্রেন এমন কোনো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
এনবিসি'র 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে রুবিও বলেন, "আশাবাদী হওয়ার কিছু কারণ আছে, তবে বাস্তবতাও বুঝতে হবে। আমরা কাছাকাছি আছি, কিন্তু যথেষ্ট কাছাকাছি নয়।"
তিনি আরও যোগ করেন, "এই প্রক্রিয়ার ৯০ দিনের চেষ্টার পর এখন যাচাই করা হচ্ছে — উভয় পক্ষ সত্যিকারের শান্তি চায় কি না, এবং তারা কতটা কাছাকাছি বা দূরে রয়েছে। এ সপ্তাহেই আমরা সেটি নির্ধারণের চেষ্টা করছি।"
ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে রুবিও বলেন, "আপনি যখন এমন পদক্ষেপ নেন, তখন মূলত আলোচনার পথ থেকে সরে যাচ্ছেন।"
উইকেন্ডে ট্রাম্প প্রশ্ন তোলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট আসলেই যুদ্ধ বন্ধ করতে চান কি না।
ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, "এটি আমাকে ভাবাচ্ছে, হয়তো তিনি (পুতিন) যুদ্ধ বন্ধ করতে চান না, বরং আমাকে বিভ্রান্ত করছেন। তার সাথে 'ব্যাংকিং' বা 'সেকেন্ডারি স্যাংশন'-এর মাধ্যমে ভিন্নভাবে মোকাবিলা করা দরকার। অনেক মানুষ মরছে!!!"
এ মন্তব্য আসে জেলেনস্কির সঙ্গে ইতালিতে একটি গোপন বৈঠকের পর, যা হোয়াইট হাউস "উৎপাদনশীল আলোচনা" হিসেবে বর্ণনা করেছে।
রবিবার জিজ্ঞাসা করা হলে, ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন জেলেনস্কি ক্রিমিয়া ছাড়ার জন্য প্রস্তুত।
ট্রাম্প আরও বলেন, জেলেনস্কি এখন "আরও শান্ত" মনে হয়েছে, যা সম্ভবত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে দুই নেতার মধ্যে প্রকাশ্য উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের প্রসঙ্গ নির্দেশ করে।
ইউক্রেন বারবার কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, যুদ্ধবিরতির পরেই কেবল এ ধরনের বিষয় আলোচনায় আসবে।
এদিকে, জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস ইউক্রেনকে সতর্ক করে বলেছেন, এমন কোনো চুক্তি করা উচিত নয় যাতে ব্যাপক ভূমি ছাড়ের বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি হয়।
তিনি জার্মান সম্প্রচারমাধ্যম ARD-কে বলেন, "আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সর্বশেষ প্রস্তাবের মতো ইউক্রেনের এতদূর এগোনো উচিত নয়। এটি কার্যত আত্মসমর্পণের সমান।"
পিস্টোরিয়াস আরও বলেন, ইউক্রেন জানে কিছু ভূমি হারাতে হতে পারে, তবে এত বড় মাত্রার ছাড় তাদের উচিত নয়।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেছিলেন, "চুক্তির অধিকাংশ প্রধান পয়েন্টে সম্মতি হয়েছে।" রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ইউক্রেনকে ক্রিমিয়া এবং রাশিয়ার দখলে থাকা অন্যান্য এলাকা ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হতে পারে।
তবে, বিবিসি এখনো সর্বশেষ মার্কিন পরিকল্পনার সম্পূর্ণ বিবরণ দেখেনি।
রয়টার্স জানিয়েছে, তারা যে মার্কিন প্রস্তাব পেয়েছে তাতে ক্রিমিয়ার অবৈধ দখলকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং ইউক্রেনের লুহানস্কসহ দখলকৃত অন্যান্য অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা বলা হয়েছে।
ইউরোপ এবং ইউক্রেনের পাল্টা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির পরই কেবল দখলকৃত ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনা করা হবে।
মার্কিন প্রস্তাবে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ বাদ দেয়া হয়েছে এবং যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে একটি 'ইচ্ছুক দেশগুলোর জোট' যুদ্ধবিরতির পর ইউক্রেনকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত থাকবে না।
অন্যদিকে, ইউরোপ চায়, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো-স্টাইলের শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিক।
এছাড়া, মার্কিন প্রস্তাবে রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে, যা থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই বিদ্যুৎ পাবে। ইউরোপীয় পাল্টা প্রস্তাবে রাশিয়াকে কোনো বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার কথা উল্লেখ নেই।
টাইম ম্যাগাজিনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আবারো ইউক্রেনকেই যুদ্ধের জন্য দায়ী করেন, ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছার কথা তুলে ধরে।
তিনি বলেন, "ক্রিমিয়া রাশিয়ার সাথেই থাকবে।"
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, যদি আলোচনায় অগ্রগতি না হয়, তবে তারা আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ চালায় এবং বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম