যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স আগামী সপ্তাহে চারদিনের সফরে ভারতে আসছেন। সফরের প্রথম দিনেই, ২১ এপ্রিল, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আলোচনায় থাকবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “এই সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হবে।”
এই প্রথমবার ভারতে আসছেন ভ্যান্স, যিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন স্ত্রী ঊষা ভ্যান্স ও তাদের সন্তানরা। উল্লেখযোগ্যভাবে, ঊষা ভ্যান্সের পরিবার ভারতের আন্ধ্র প্রদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিল।
এই সফর এমন সময় হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি চীনা পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১৪৫% শুল্ক আরোপ করেছেন, যা কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ২৪৫% পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। পাল্টা জবাবে চীন ১২৫% শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন পণ্যের ওপর।
ভারতও এই শুল্ক যুদ্ধের আঁচ পেয়েছে। ২ এপ্রিল, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ২৭% শুল্ক আরোপ করেছিল, যদিও পরে ৯০ দিনের জন্য সেটি স্থগিত রাখা হয়। এই সময়ের মধ্যেই দুই দেশ একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার চেষ্টায় রয়েছে।
ভারত ইতোমধ্যেই বেশ কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে এবং আরও ব্যাপক শুল্ক হ্রাসের পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে, যাতে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ সামাল দেওয়া যায়।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদী যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য $৫০০ বিলিয়ন পর্যন্ত বাড়ানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। ভারত তখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল ও গ্যাসসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির চুক্তিও করেছিল।
বর্তমানে, ভ্যান্সের ভারত সফরকে সেই আলোচনারই ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গাবার্ড ভারত সফর করেন একটি ভূ-রাজনৈতিক সম্মেলনে অংশ নিতে।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই ‘কোয়াড’ (Quad) জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে রয়েছে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। এই জোটকে চীন-প্রভাবিত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারসাম্য রক্ষাকারী শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ভ্যান্সের সফরের আগে তিনি ১৮ এপ্রিল ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঠিক এই সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে সফর শেষ করেছেন, যেখানে তিনি চীনকে একটি স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে জেডি ভ্যান্সের ভারত সফর যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক কূটনীতির দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম