আমেরিকা

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শিক্ষামন্ত্রী ম্যাকমোহন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বন্ধের চাপ ট্রাম্পের

সোমবার মার্কিন সিনেটের ভোটে সাবেক রেসলিং নির্বাহী লিন্ডা ম্যাকমোহনকে দেশটির নতুন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এই পদে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে এমন একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে, যেটি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৫১-৪৫ ভোটে ম্যাকমোহনকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় সিনেট। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি অনুযায়ী, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ম্যাকমোহনের মূল কাজ হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ধীরে ধীরে বন্ধের দিকে নিয়ে যাওয়া এবং একই সঙ্গে ট্রাম্পের শিক্ষা-সংক্রান্ত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা। এরই মধ্যে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বৈচিত্র্য সংক্রান্ত কর্মসূচি বাতিল এবং ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থীদের জন্য থাকা বিশেষ সুবিধা বন্ধের আদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি স্কুল পছন্দের সুযোগ সম্প্রসারণের পক্ষে জোর দিচ্ছেন। একই সঙ্গে ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে চান এবং ম্যাকমোহনকে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন। লিন্ডা ম্যাকমোহন মূলত বিশ্বখ্যাত রেসলিং বিনোদন কোম্পানি ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট (WWE)-এর সাবেক সিইও। তার শিক্ষা সংক্রান্ত প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা তুলনামূলক কম। তিনি এক বছর কনেকটিকাটের স্টেট বোর্ড অফ এডুকেশনে কাজ করেছেন এবং সেক্রেড হার্ট ইউনিভার্সিটির দীর্ঘদিনের ট্রাস্টি ছিলেন। তার সমর্থকদের মতে, ম্যাকমোহন একজন দক্ষ নির্বাহী, যিনি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংস্কার করতে পারবেন। অন্যদিকে, সমালোচকরা বলছেন, তিনি এই দায়িত্বের জন্য যোগ্য নন এবং তার বাজেট কাটছাঁটের কারণে শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার (ডেমোক্র্যাট-নিউ ইয়র্ক) বলেন, আমেরিকানরা সরকারি শিক্ষাকে সমর্থন করে। তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় বন্ধ দেখতে চায় না। যদি ট্রাম্প প্রশাসন শিক্ষাখাতে বাজেট কমায়, তাহলে স্কুলগুলো বিলিয়ন ডলার তহবিল হারাবে। সিনেট শুনানিতে ম্যাকমোহন ট্রাম্পের কড়া অবস্থান থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, তার লক্ষ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা, একে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া নয়। তিনি স্বীকার করেছেন, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে তিনি বলেছেন, কিছু কার্যক্রম স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রণালয়ে (HHS) স্থানান্তর করা যেতে পারে, যেমন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অধিকার সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন। ম্যাকমোহনের শুনানির আগে হোয়াইট হাউস একটি নির্বাহী আদেশের কথা বিবেচনা করছিল, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট কাটছাঁটের নির্দেশ দিত এবং কংগ্রেসকে এটি বন্ধের জন্য চাপ দিত। তবে তার সমর্থকরা প্রশাসনকে পরামর্শ দেন, যাতে চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে এ ধরনের আদেশ জারি করা না হয়, যাতে সিনেটের প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক না হয়। ১৯৭৯ সালে কংগ্রেসের অনুমোদনে গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মূল কাজ হলো দেশের স্কুল ও কলেজগুলোতে তহবিল বিতরণ করা। বর্তমানে এটি প্রতিবছর বিলিয়ন ডলার তহবিল পরিচালনা করে এবং ১.৬ ট্রিলিয়ন ডলারের ফেডারেল ছাত্রঋণ তদারকি করে। ট্রাম্পের অভিযোগ, এই মন্ত্রণালয় উদারপন্থীদের আদর্শ প্রচারের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। তার প্রশাসন সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে, যদি তারা বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি চালিয়ে যায়, তাহলে তাদের ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমে পরিবর্তন এনেছে। সরকারি ব্যয় দক্ষতা সংক্রান্ত বিভাগ (Department of Government Efficiency - DOGE), যেটির নেতৃত্বে আছেন ট্রাম্প উপদেষ্টা এলন মাস্ক, তারা অনেক শিক্ষা গবেষণা প্রকল্প বন্ধ করেছে। এছাড়া, প্রশাসন Institute of Education Sciences-এর বাজেট কমিয়ে দিয়েছে, যা মার্কিন শিক্ষাব্যবস্থার উপর গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহের কাজ করে। এ ধরনের পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রে ফেডারেল আইনের পরিপন্থী, কিন্তু ম্যাকমোহন শুনানিতে বলেছেন, প্রশাসন কংগ্রেসের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করবে এবং এটি শুধুমাত্র একটি নিরীক্ষা। ম্যাকমোহন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন। তিনি ২০০৯ সালে WWE ছেড়ে রাজনীতিতে আসেন এবং দু'বার কনেকটিকাট থেকে সিনেট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, যদিও সফল হননি। তিনি ট্রাম্পের প্রচারণায় মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন এবং তার প্রথম মেয়াদে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসনের (Small Business Administration) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—একদিকে ট্রাম্পের শিক্ষা সংক্রান্ত নীতি বাস্তবায়ন করা, অন্যদিকে কংগ্রেসের চাপ সামাল দেওয়া, যারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণভাবে বন্ধের বিষয়ে একমত নয়।  এলএবাংলাটাইমস/ওএম