আমেরিকা

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের জবাব দিতে চীনের ৫ পদক্ষেপ

ক্ষমতায় বসার পরপরই চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নানা কৌশলে পাল্টা জবাবের ঘোষণা দিয়েছে বেইজিংও। পাল্টাপাল্টি এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক যুদ্ধ আরও জোরদার হয়েছে। পাল্টা জবাবের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং। পাশাপাশি আরও কিছু পদক্ষেপ নেবে তারা। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এসব পদক্ষেপ কার্যকর হওয়ার কথা। এর আগে চীন থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে মঙ্গলবার থেকে তা কার্যকর হয়েছে। পাল্টাপাল্টি এসব পদক্ষেপের ঘটনা নতুন কিছু নয়। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বাণিজ্যিক বিরোধের জেরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তখন থেকে আরও পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। কয়লা–তেল–গ্যাস বেইজিংয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কয়লা ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর ১০ শতাংশ এবং অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানি করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়তি শুল্ক দিতে হবে। বিশ্বে কয়লার সবচেয়ে বড় আমদানিকারক চীন। তারা বেশির ভাগ কয়লা ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে। চীনে কয়লা রপ্তানি করা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও মঙ্গোলিয়াও। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজির আমদানি বাড়িয়েছে বেইজিং। চীনের কাস্টমসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই আমদানির পরিমাণ ২০১৮ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, সে বছর বিশ্ববাজার থেকে চীনের কেনা অপরিশোধিত তেলের মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এর অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের তেলের ওপর চীন নির্ভরশীল নয়। তাই চীনের শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর প্রভাব খুব কমই পড়বে। জ্বালানি তেলের মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কৃষি যন্ত্রপাতি, পিকআপ ট্রাক ও বড় কিছু গাড়ির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেমন একটা পিকআপ ট্রাক আমদানি করে না বেইজিং। তাদের বেশির ভাগ গাড়িই আসে ইউরোপ ও জাপান থেকে। বিগত বছরগুলোয় কৃষি উৎপাদন বাড়াতে এবং আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে খামারসংক্রান্ত যন্ত্রপাতি তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে চীন। এর আরেকটি লক্ষ্য নিজেদের খাদ্যনিরাপত্তা আরও জোরদার করা। তাই কৃষি যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক বাড়ানোটা দেশীয় শিল্পকে শক্তিশালী করার জন্য চীনের আরেকটি পদক্ষেপ হতে পারে। চীনা শুল্কের মুখে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। যা দেশটি থেকে চীনের আমদানি করা পণ্যের প্রায় ১২ শতাংশ। পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনা অর্থনীতি বিভাগের প্রধান জুলিয়ান ইভানস–পিচার্ড বলেন, চীনা শুল্কের মুখে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। যা দেশটি থেকে চীনের আমদানি করা পণ্যের প্রায় ১২ শতাংশ। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে চীন থেকে আমদানি করা সাড়ে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য। গুগলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুল্কের বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে চীন। এর একটি হলো মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান গুগলের বিরুদ্ধে তদন্ত। তবে কী ধরনের তদন্ত হবে, তা স্পষ্ট নয়। ২০১৮ সাল থেকেই চীনে গুগলের সেবা বন্ধ রয়েছে। তবে চীনে এখনো গুগলের কিছু ব্যবসা চালু রয়েছে। স্থানীয় ডেভেলপারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চীনের বাজারে গেমস ও অ্যাপ্লিকেশন সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। গুগল নিজেদের মাত্র ১ শতাংশের মতো সেবা বিক্রি করে চীনে। তাই চীনে যদি গুগলের সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার প্রভাব প্রতিষ্ঠানটির ওপর খুব একটা পড়বে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান পিভিএইচকে ‘অনির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের’ তালিকায় ফেলেছে বেইজিং। পিভিএইচের মালিকানায় রয়েছে ক্যালভিন ক্লেইন ও টমি হিলফিগারের মতো খ্যাতনামা ব্র্যান্ড। চীনের অভিযোগ, এই ব্র্যান্ডগুলো চীনা উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে ‘বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে’। অনির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের তালিকাটি ২০২০ সালে প্রথম তৈরি করেছিল চীন। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ক্যালভিন ক্লেইন ও টমি হিলফিগার এই তালিকায় যুক্ত হওয়ার ফলে তাদের চীনে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। ব্র্যান্ডগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে। করা হতে পারে জরিমানা। এমনকি চীনে এই ব্র্যান্ডগুলোয় চাকরি করা বিদেশি ব্যক্তিদের ভিসা বাতিল করা হতে পারে। বিরল ধাতু রপ্তানিতে কড়াকড়ি যুক্তরাষ্ট্রে ২৫টি বিরল ধাতুর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছে চীন। এর মধ্যে কয়েকটি ধাতু ইলেকট্রনিক পণ্য ও সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের মূল উপাদান। এই ধাতুগুলোর মধ্যে রয়েছে টাংস্টেন। ধাতুটি মহাকাশবিষয়ক শিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধাতুটি পাওয়াও কঠিন। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনা অর্থনীতি বিভাগের প্রধান জুলিয়ান ইভানস-পিচার্ড বলেন, রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চিপ, সেমিকন্ডাক্টর যন্ত্রপাতি, ওষুধশিল্প এবং মহাকাশ–সংক্রান্ত শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যেসব ধাতু যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন আমদানি করে সেগুলো কোনো পদক্ষেপের লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। তবে প্রশ্ন রয়েছে, বিরল ধাতু রপ্তানির ওপর চীনের এই বিধিনিষেধ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে? আপাতত মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। সোমবার ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বিরল ধাতু সরবরাহের নিশ্চয়তা দিক ইউক্রেন। এর বিনিময়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে দেশটিকে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেবে ওয়াশিংটন।   এলএবাংলাটাইমস/ওএম