দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনেই নিজেকে শান্তির দূত এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের কঠোর রক্ষক হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেমন অভিষেক অনুষ্ঠানের ভাষণে তিনি পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন। আবার রাশিয়াকে ইউক্রেনের সঙ্গে একটি চুক্তিতে উপনীত হতে অনুরোধ করেছেন।
গতকাল সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউসে ফিরে এসেছেন ট্রাম্প।
দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়া পর প্রথম দিনই ট্রাম্প বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা দেশের তালিকা থেকে কিউবার নাম সরিয়ে নেওয়া আটকে দিয়েছেন। তিনি মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে ‘আমেরিকা উপসাগর’ রাখার ঘোষণা করেছেন। যদিও তাঁর এই ঘোষণা প্রতীকী, তবে অবশ্যই উসকানিমূলক।
নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ের পর গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ট্রাম্প বেশ কয়েকবার পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা বলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটলে আয়োজিত অভিষেক অনুষ্ঠানে শপথ নেওয়ার পর প্রথম ভাষণেও ট্রাম্প একই কথা বলেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ ওই পানিপথের চারপাশে চীনের প্রভাব বাড়ছে এবং চীনই কার্যত পানামা খাল পরিচালনা করছে।
ক্যারিবীয় সাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই খালটি খনন করে। ১৯১৪ সালে খালটি নৌ–চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। খননের পর শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই এই খালের নিয়ন্ত্রণ ছিল। ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র খালটির নিয়ন্ত্রণভার পানামার হাতে তুলে দেয়।
গতকাল সোমবার ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এই খাল চীনকে দিইনি, আমরা এটা পানামাকে দিয়েছি এবং আমরা এটা ফেরত নিচ্ছি।’
পানিপথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের জন্য পানামা খাল গুরুত্বপূর্ণ। এই খাল দিয়ে দেশটির ৪০ শতাংশ পণ্যবাহী কনটেইনার যাতায়াত করে। ট্রাম্প বারবার পানামার বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা বাতিল করতে অস্বীকার করেছেন। ঐতিহ্যগতভাবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে পানামার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
অন্য কোনো দেশ পানামা খাল পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করছে, এমন অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে অস্বীকার করেছেন পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো। তিনি বলেছেন, তাঁর দেশ নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে এই খাল পরিচালনা করছে।
কোনো বিষয় নিয়ে আপত্তি থাকলে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে মুলিনো আরও বলেন, খালটি পানামার এবং পানামারই থাকবে।
অভিষেক অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় ট্রাম্প আরও বলেন, ‘পানামা খাল দিয়ে যাতায়াত করতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও নৌবাহিনীর জাহাজগুলোকে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয় এবং কোনো দিক দিয়েই তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ) সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করা হয় না। আমাদের সমঝোতার উদ্দেশ্য এবং আমাদের চুক্তির কারণ পুরোপুরি লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
খননের পর শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র পানামা খাল পরিচালনা করত। ১৯৭৭ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট সদ্যপ্রয়াত জিমি কার্টার খালটির নিয়ন্ত্রণ পানামার হাতে তুলে দেওয়ার আলোচনা শুরু করেন। তখন কার্টার বলেছিলেন, কম শক্তিশালী কিন্তু সম্পূর্ণরূপে একটি স্বাধীন দেশের প্রতি সম্মান জানানোকে তিনি নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম